8.8 C
Düsseldorf

হাউ টু বি হ্যাপি

Must read

একঃ ব্রুনি ওয়ারস নামে একজন অস্ট্রেলিয়ান নার্স যিনি সাধারণত মৃত পথযাত্রারত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। উনি উনার লম্বা সার্ভিস জীবনে একটা জিনিস খেয়াল করছেন যে, বেশির ভাগ মৃত্যু পথযাত্রামুখী রোগীর সবারই একটা কমন রিগ্রেট কাজ করে। শেষ মুহূর্তে তাদের মনে হয় “I wish I couldn’t worked so hard”. আমরা আমাদের জীবনের বেশির ভাগ সময় এমন কিছুর পিছে ব্যায় করি যেটার আসলেই দরকার ছিল না। নতুন নতুন টেকনোলজিস ব্যাবহার করা, অফিসে বড় পজিশন পাওয়া, ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানো এসব করতে করতে সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু এতসব কিছু পাওয়ার পরও হয় আমরা আরও চাই অথবা এতসব কিছু দিয়েও আমরা সুখি হয় না।

দুইঃ আমরা যারা গ্লাডিয়েটার সিনেমা দেখেছি, সেখানে দেখেছি একজন বৃদ্ধ রাজা থাকে উনার নাম মার্কাস আরলিয়াস যাকে সিনেমায় ফিলোসফার কিং বলা হয়েছে। সিনেমায় উনি উনার ছেলের বদলে অন্য একজন জেনারেল মাক্সীমার্সকে পরবর্তী রাজা নির্বাচন করেন বলে উনার ছেলে কমোডাস তাকে হত্যা করেন। সিনেমায় বেশিরভাগ কাহিনী কাল্পনিক কিন্তু মার্কাস আরলিয়াস আসলেই রোমের রাজা ছিলেন এবং উনি প্রধান তিনজন ভালো রোমান সম্রাটের ভিতর একজন ছিলেন যিনি প্রজাদের কেয়ার নিতেন। উনি উনার লাইফ টাইমে মেডিটেশন নামে অটোবায়োগ্রাফি লিখে গেছেন, সেখনে তিনি কিছু জিনিস উল্লেখ করেছেন যে কিভাবে সুখি জীবনযাপন করা যায় এখানে তার কিছু উল্লেখ করা হল

  • আমরা এমন একটা মেটেরিয়ালিস্টিক সমাজে বসবাস করছি যেখানে মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই। মানুষের সব কিছু থাকার পরও নতুন নতুন চাহিদা বাড়তে থাকে সুতারাং এসব কিছুর ভিতর সুখ খুজতে থাকলে কখনো আসল সুখ পাওয়া সম্ভব নয়। কারন এক্ষেত্রে আমরা আমাদের সুখকে অন্যের হাতে অর্পণ করে সুখ খুজি, কিন্তু এইসব ম্যটেরিয়াল জিনিস কোনটাই আসলেই পারমান্টলি আমাদের না এবং যেকোন সময় সেগুলো আমাদের থেকে চলে যেতে পারে, তখন আমাদের সুখের কি হবে? উনি বলেছেন এইসব ম্যাটেরিয়ালিস্টিক জিনিসের ভিতর সুখ খোজার চেয়ে আমাদের নিজেদের ক্যারেক্টর বিল্ড করতে হবে। আমাদেরকে দয়ালু, সৎ এবং কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। আমাদের নিজেদেরকে স্বশিক্ষিত করতে হবে এবং অন্যদেরকে সম্মান করতে হবে। মানুষ তার সম্পদ হারিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু মানুষ তার ক্যারেক্টর দিয়ে অন্যের মনে জায়গা করে নিতে পারে।
  • উনি বলছেন অন্যের প্রশংসা মধ্যে সুখ খুজলে জীবনে সুখ পাওয়া যাবে না। ফেসবুক,টুইটারে হাজার হাজার বন্ধু আর তাদের লাইকের মধ্যে যারা সুখ খোজে তাদের চেয়ে বোকা আর নেই। তার চেয়ে দুই একজন প্রকৃত বন্ধুই উত্তম যারা বিপদে আপদে পাশে থাকবে।
  • শুধুমাত্র সেইসব জিনিসের প্রতি ফোকাস করা উচিৎ যার প্রতি আমাদের কন্ট্রোল আছে, বাকি সবকিছু ইগনোর করতে হবে। আর যতদুর সম্ভব নেগেটিভ চিন্তাভাবনার মানুষের থেকে দুরে থাকে হবে এবং নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা থেকে দুরে থাকতে হবে।শুধুমাত্র আমাদের চিন্তাভাবনা এবং আমাদের আ্যাকশন এর উপর আমরা কন্ট্রোল করতে পারি বাকি সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সুতারং বাকি সবকিছু ইগনোর করাই উত্তম।
  • আমাদের উচিৎ সব ধরনের খারাপ ফলাফলের জন্য প্রস্তুত থাকাএবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। উনি বলেছেন “ the art of living is more like wrestling than dancing”. বিপদের সময় ভেঙে না পড়ে ঠান্ডা মাথায় বিপদের মোকাবেলা করাই হল দি সিক্রেট অফ হেপিনেস। মানুষের উচিৎ ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া কেবলমাত্র তখনই সুখি হওয়া সম্ভব।
  • তোমার যা কিছু আছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, বেশিরভাগ সময় আমাদের কি আছে সেগুলোর প্রতি আমরা ফোকাস না করে, আমাদের কি কি নাই সেসব চিন্তা করে করে আমরা নিজেদের দুঃখী করে তুলি।আমরা আমাদের জীবনের সাধারণ ভালোলাগা গুলো যেমন ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, এসব ভুলে যায়, এবং অন্য সুখের পিছে দৌড়াতে থাকি। তাছাড়া জীবন যে খুবই স্বল্প সময়ের এটা স্বীকার করে নিতে হবে, প্রতিদিনকে জীবনের শেষ দিন বিবেচনা করে বাঁচতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ তাদের মোরালিটি ভুলে যায় এবং ভাবতে থাকে যে তারা হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকবে এজন্য দুনির্তির পাহাড় গড়ে তোলে, কিন্তু মানুষের জীবন যে খুবই স্বল্প সময়ের সেটা মানলে মানুষ সুখি হতে পারে।

তিনঃ মাত্র ঊনচল্লিশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে অল্প কিছু লেখার মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর আধিপত্যশীল ও অন্যতম প্রধান জার্মান ভাষাবাসী লেখক ফ্রানৎস কাফকা। তার সবচেয়ে বিখ্যাত গল্প ‘মেটামরফোসিস’ (রূপান্তর) গল্পের প্রধান চরিত্র গ্রেগর সামসা একজন ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান। কোনো এক সকালে নিজের ক্লান্ত জীবনের ভাবনা নিয়ে ভাঙা ঘুমে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে নিজেকে একটি বিশাল আকৃতির পোকা হিসেবে আবিষ্কার করে গ্রেগর। গল্পের নামকরণের যথার্থতা চোখে পড়ে প্রথম দৃশ্য থেকেই। পোকা হয়ে যাওয়ার এ পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত বাবা, মা ও ছোট বোনের সাথে থাকা সংসারে গ্রেগর সামসা ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অফিসের কাজের দুর্বিষহ কষ্টের মাঝে এ রূপান্তর তাকে দায়িত্বের পীড়ন থেকে মুক্তি দিলেও বিবেকের দংশন তাকে জ্বালাতে থাকে সর্বক্ষণ। এ গল্পের প্রথম অংশ দেখায় নেতিবাচক রূপান্তর- যে রূপান্তর একজন সুস্থ ও উপার্জনক্ষম মানুষের পরগাছা হয়ে ওঠাকেই বর্ণনা করে। এক্ষেত্রে পোকাকে নিকৃষ্টতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যায়- যা কিনা আত্মঘৃণার সর্বশেষ বিন্দু বলে উল্লেখযোগ্য। প্রথমে ঘরের অন্যরা গ্রেগরের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও এ পর্যায়ে সকলে কাজে নিযুক্ত হয় এবং গ্রেগর অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ সময় তার বাহ্যিক দৈহিক কাঠামোর সাথে সাথে পরিবর্তন হয় তাদের আচরণও। প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ধাক্কা খেলেও নিজেদের সামলে নেয় তারা।পরবর্তী সময় দেখা যায় নির্জীব পরিবারের রূপান্তর। জীবনকে সচল রাখার জন্যে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং হঠাৎ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় একত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজ করা। আর সবশেষে সক্রিয়তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে নিজ পরিবারের একজনকে অস্বীকার করা এবং তার মৃত্যুতে বিপদ কেটে যাওয়ার স্বস্তিতে অবকাশ যাপন করা।

উপসংহারঃ অবশেষে কাফকার আর একটা অমর বাণী দিয়ে শেষ করি উনি বলেছেন “Everything you love probably will be lost, but at the end love will return in another way”. এর মানে হল ভালোবাসা একসময় শেষ হয়ে যায়, আজকে যা কিছুছাড়া বেঁচে থাকা বৃথা মনে হচ্ছে, কিছু দিন পরে হয়ত তাকেই ছুড়ে ফেলে দিবে। হয়ত নতুন কিছুর জন্য বেঁচে থাকবে। এ জন্যই গুরুদেব বলে গেছেন” যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নব প্রেম ডোরে তবু্ও মনে রেখো”। ( বিঃ দ্রঃ এতো এতো জ্ঞানের কথা লিখলেও আমি নিজে একটাও মানিনে 😁😀)

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট