আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের আগে জার্মানির প্রটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক চার্চ শরণার্থীদের এবং ‘‘সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন’’-এ থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের পুনরায় একত্রিকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে৷
ক্যাথলিক অফিস বার্লিন-এর প্রধান কার্ল ইউস্টেন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘যখন আগমনকারী মাতৃভূমিতে থাকা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কারো মনে উদ্বেগ থাকে তখন তারপক্ষে নতুন দেশের সমাজের মূলধারায় একীভূত হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে৷’’
কাউন্সিল অব দ্য প্রটেস্টান্ট চার্চের প্রতিনিধি মার্টিন ডুৎসমান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এটা বিরল নয় যে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই কারো কারো বিয়ে ভেঙে যায় বা পরিবারের কোনো সদস্য মৃত্যুবরণ করেন৷’’
জার্মানির এই দুই বড় চার্চ ফেডারেশন এক যৌথবিবৃতিতে শরণার্থীদের পারিবারিক মিলন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছে৷ বিবৃতিতে চার্চ দু’টো পরিবারকে ‘‘মূল্যবান সম্পদ’’ আখ্যা দিয়ে লিখেছে, পরিবারের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে একে অপরের দায়িত্ব নেন এবং এভাবে বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়৷
‘‘যেহেতু পরিবারকে রক্ষা করা দরকার, তাই সদস্যদের পুনরায় মিলন দ্রুততর করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা উচিত,’’ বলেন ডুৎসমান৷
সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন, যা শরণার্থী মর্যাদার চেয়ে দুর্বল সুরক্ষা ব্যবস্থা, সাধারণত তাদের দেয়া হয় যারা শরণার্থী বা আশ্রয় পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হননি আবার দেশেও ফিরতে পারছেন না মারাত্মক ঝুঁকি থাকার কারণে৷
ইউস্টেন জানান, এটা অচিন্তনীয় ব্যাপার যে যারা সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশনে রয়েছেন, তারা শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্তদের মতো একইরকম পারিবারিক পুর্নমিলনের সুবিধা পান না৷ তিনি বলেন, ‘‘শরণার্থী এবং সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন-এ থাকা মানুষদের ঝুঁকির মধ্যে কার্যত কোন পার্থক্য নেই৷’’
চার্চ দু’টির বিবৃতিতে একথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে শুধু সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন-এ থাকা ব্যক্তিরাই আইনি জটিলতায় পড়ছেন এমন না৷ আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আওতায় থাকা সবাই আসলে পারিবারিক মিলনের ক্ষেত্রে নানা বাধার মুখে পড়ছেন৷
এসব বাধার মধ্যে রয়েছে জার্মানির দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলোতে আবেদন করার পর দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা থাকতে বাধ্য হওয়া এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ না থাকা কিংবা জোগাড় করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়া৷ এছাড়া করোনার কারণেও এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে মনে করেন চার্চ দু’টির মুখপাত্ররা৷
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের শরতে জার্মান সরকার ঘোষণা দেয় যে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ একহাজার মানুষ তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে পারবে, অর্থাৎ বছরে সেই সংখ্যাটি ১২ হাজারের বেশি হতে পারবে না৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সিহ্যফারের উদ্বেগের কারণে সংখ্যাটি এভাবে সীমিত করে দেয়া হয়েছে৷ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, জার্মানিতে সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন-এ আছেন এমন ব্যক্তিদের পরিবারের তিনলাখের মতো সদস্য ইউরোপের দেশটিতে চলে আসতে পারেন৷
গত বছর জার্মানি সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন-এ আছেন এমন শরণার্থীদের পরিবারের পাঁচ হাজার ৩১১ জন সদস্যকে পারিবারিক পুনর্মিলনী কর্মসূচির আওতায় জার্মানিতে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে৷ এই সংখ্যাটি আইনিভাবে যতজনকে আনা সম্ভব ছিল তারচেয়ে অনেক কম৷ করোনার কারণে জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং জার্মান দপ্তরগুলোতে কাজে ধীরগতির কারণে সংখ্যাটি কম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটি দ্বিগুণের বেশি ছিল৷