8.8 C
Düsseldorf

আর্মেনিয়ান গণহত্যাকে স্বীকৃতি, মার্কিন-তুরস্ক সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা

Must read

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৯১৫ সালে অটোমান তুর্কি বাহিনীর হাতে লক্ষ লক্ষ আর্মেনিয়ানের নিহত হওয়াকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করার পর তৎক্ষণাৎ এক পাল্টা বিবৃতি দিয়ে এর সমালোচনা করেছে তুরস্ক।

তুরস্কের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে এর ফলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তুরস্ক এটা স্বীকার করে যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার ঠিক পরপর অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ সময় আর্মেনিয়ানদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তারা এর বর্ণনায় ‘গণহত্যা’ শব্দটি প্রত্যাখ্যান করে থাকে।

“আমাদের ইতিহাসের ব্যাপারে আমরা অন্য কারো কাছ থেকে সবক নেবো না” – বলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোলু। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে আরো জানায় যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তাকে আংকারার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, তুরস্ক ন্যাটো জোটের সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র। এর আগেকার মার্কিন প্রশাসনগুলো তুরস্কের সাথে সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে এমন উদ্বেগের কারণে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেনি।

১৯১৫ সালে কী হয়েছিল?
অটোমান তুর্কিরা রাশিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের পর খ্রীস্টান আর্মেনিয়ানদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনে। তাদেরকে দলে দলে বহিষ্কার করে সিরিয়ার মরুভূমি এবং অন্য আরো কিছু জায়গায় পাঠানো হয়। লক্ষ লক্ষ আর্মেনিয়ানের অনেককে হত্যা করা হয়, অন্য অনেকে অনাহার ও রোগে মারা যায়। সে সময় সাংবাদিক, মিশনারি এবং কূটনীতিক সহ অনেক প্রত্যক্ষদর্শী সেই নৃশংসতার বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন। আর্মেনিয়ানদের পক্ষ থেকে বলা হয় নিহতের সংখ্য ১৫ লক্ষ। তুরস্ক অনুমান করে যে এ সংখ্যা তিন লক্ষের কাছাকাছি হবে। গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএজিএস-এর মতে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষের বেশি।

জো বাইডেন কী বলেছেন?
আর্মেনিয়ায় শনিবার এই গণহত্যার স্মারক দিন পালনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়: “অটোমান যুগে আর্মেনিয়ান গণহত্যায় যারা নিহত হয়েছে আমরা তাদের স্মরণ করি, এবং এমন ঘটনা যেন আর ঘটতে না পারে সেই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি।”

“আমরা তাদের স্মরণ করছি – যাতে আমরা সকল রকমের ঘৃণার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সদাজাগ্রত থাকতে পারি।” মি. বাইডেন বলেন, এর উদ্দেশ্য কাউকে দোষ দেয়া নয়, বরং এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করা। এর আগে ২০১৯ সালে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ওই ঘটনাকে একটি গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পক্ষে বিপুলভাবে ভোট দেয়। জো বাইডেন তখন একে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

১৯৮১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এক ঘোষণায় আর্মেনিয়ান গণহত্যা কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা তা করেননি। মি. বাইডেনের পূর্বসুরী ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই ঘটনাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গণ-নৃশংসতা বলে বর্ণনা করেন তবে তার প্রশাসন একে গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেনি।

এর প্রতিক্রিয়া কী হয়েছে?
আরমেনিয়ান প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান – মি. বাইডেনের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিবৃতিটি কঠোরতম ভাষায় নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করছে। বলা হয়, “উগ্র আর্মেনিয়ান চক্র এবং তুরস্ক-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোরর চাপে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে।” এতে সতর্ক করে দেয়া হয় যে এ পদক্ষেপ দুদেশের আস্থা ও বন্ধুত্বের হানি ঘটাতে পারে।

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট