১২ জন শরণার্থীসহ ৪২জন অভিবাসীর একটি দলকে তুরস্কের এদির্ন প্রদেশে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে তুর্কি পুলিশ। মূলত এই অভিবাসীদের গ্রিস থেকে তুরস্কে পুশব্যাক করার সময় গ্রিক কর্তৃপক্ষ তাদের সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ফেরত পাঠায়। এই কাজ গ্রিক কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত করে থাকে।
দৃশ্যটি হৃদয় বিদারক। ১২ জন অভিবাসীর একটি দল মাটিতে বসে আছে, তাদের মধ্যে কিছু লোক মাথা নিচু করে আছে। আবার কয়েকজন তাদের বুকে হাত রেখে আছে, অনেকে ঘাস ছড়িয়ে দিয়ে তাদের যৌনাঙ্গ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল।
তাদের প্রত্যেকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় দৈনিক কুমহুরিয়াত জানায়, “গ্রেফতারকৃত ১২ জনকে গ্রিক কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক মারধর করে পুশব্যাক করেছে। এছাড়া তুরস্কের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল এদির্ন থেকে আরো ৩০ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এদির্ন অঞ্চলের পুলিশের দায়িত্বে থাকা অভিবাসীরা দাবি করে, গ্রিসে তাদেরকে খাবার ও পানীয় জল থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তুরস্ক সরকার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জোর দাবি করেছে, “এথেন্স অভিবাসীদের উপর ক্রমাগত তাদের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।”
এই অনুশীলনগুলি যদিও হতবাক করার মতো তবে গ্রিসে এটি তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা। এরকম অনেকগুলি ঘটনা গ্রিসে উপস্থিত মানবাধিকার সংস্থা এবং এনজিওগুলিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে, তুর্কি চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডের জন্য কাজ করা চিত্র সাংবাদিক বেলাল খালেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বাস পরা যুবকদের ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেটিও ছিল এর্দিন প্রদেশের উজুনকপ্রি শহরের কাছের ঘটনা। যাদেরকে গ্রিস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। বেলাল ফরাসি দৈনিক লিবেরাসিও কে বলেন, ছবিতে থাকা অভিবাসীরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল, যেমন “আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, মরোক্কো”।
সীমান্ত সহিংসতা নিরীক্ষণ নেটওয়ার্কের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও অভিবাসীদের এভাবে কাপড় খুলে নেয়ার ঘটনাকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে রেকর্ড ৪৩% অভিবাসী জোর করে নগ্ন করার ঘটনা বর্ণনা করে সাক্ষ্য দিয়েছে । “এছাড়া একই কারাগারে একসাথে ১২০ জন লোককে অবরুদ্ধ করে নগ্ন অবস্থায় রাখার ঘটনাও বর্ণনা করেছেন অভিবাসীরা।”প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সীমান্তের দক্ষিণে আলেকজান্দ্রপোলিতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তাকে এবং অন্য ব্যক্তিদের সাথে একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভবনটির ভেতরে ৭০ থেকে ৮০ জন লোক দেখে একটি আটক কেন্দ্রের চেয়েও ভয়াবহ মনে হয়েছিল।”
তিনি আরও জানান, সেখানে সিরিয়ান, মিশরীয়, পাকিস্তানি, আলজেরিয়ান এবং মরোক্কান বংশোদ্ভূত পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা সকলেই সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি বলেন, “আটকের পরের দিন আমাকে আরো কিছু অভিবাসীদের দলের সাথে এভ্রোস নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছু সময় নৌকা চলার পরে, কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে পানিতে লাফ দিতে বলে। আমাদের সাথে অনেক লোক ছিল যারা সাঁতার জানত না, সেটি আমরা তাদের জানানোর পরেও তারা কোন সাহায্য করেননি!”