চেকদের হারিয়ে শেষ চারে ডেনমার্ক। ‘উই আর রেড, উই আর হোয়াইট, উই আর ড্যানিশ ডিনামাইট।’ বহু পুরনো সেই স্লোগানটাই ফের একবার প্রতিধ্বনিত হল বাকু ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে। ডেনমার্কের বিস্ফোরক ফুটবলে তছনছ হয়ে গেল চেক প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন। শনিবারের কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে জিতে শেষ চারে পৌঁছে গেল ড্যানিশরা। তাদের হয়ে স্কোরশিটে নাম তোলেন যথাক্রমে থমাস ডেলানি ও ক্যাসপার ডলবার্গ। চেকদের হয়ে গোল করেন প্যাট্রিক শিক।
চলতি ইউরোতে শুরু থেকেই দুরন্ত ছন্দে দাপট দেখিয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। গত ম্যাচে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডসকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছিল জারোস্লাভ সিলহাভির দল। স্বাভাবিকভাবেই এদিন ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন প্যাট্রিক শিকরা। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকে চোখে পড়ল উল্টোচিত্র। বল দখলের লড়াই থেকে আক্রমণে প্রতিপক্ষ ডেনমার্কের আধিপত্য ছিল বেশি। কাঙ্ক্ষিত গোল পেতেও দেরি হয়নি ড্যানিশদের। ৫ মিনিটের মধ্যে লিড নেয় তারা। কর্নার থেকে জ্যাকব লারসেনের ভাসানো বলে মাথা ছুঁইয়ে লক্ষ্যভেদ করেন থমাস ডেলানি। এরপর ব্যবধান বাড়ানোর আরও কয়েকটি সুযোগ পেলেও, কাজে লাগাতে পারেননি ডলবার্গরা। ৩০ মিনিট পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া চেক প্রজাতন্ত্র চাপ বাড়ায় ড্যানিশ রক্ষণের উপর। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টে ৪২ মিনিটের মাথায় আরও একটি গোল খেয়ে যায় তারা। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ডিফেন্স আলগা করার মাশুল গুনতে হয়েছে সিলহাভি-ব্রিগেডকে। বাঁ-দিক থেকে লেফট ব্যাক জোয়াকিম মাহেলির ঠিকানা লেখা ক্রস থেকে দুরন্ত হেডে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান ডলবার্গ। তবে দ্বিতীয়ার্ধের গোড়াতেই এক গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে ফেরার আশা জাগায় চেক প্রজাতন্ত্র। ভ্লাদিমির কউফালের ক্রস থেকে দুরন্ত ফ্রিকে লক্ষ্যভেদ করেন প্যাট্রিক শিক । এরপর সমতা ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও লক্ষ্যে সফল হয়নি চেক ব্রিগেড।
ইউরোর শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি ডেনমার্কের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে হারিয়ে কোনওমতে নক-আউটে পৌঁছায় ডেনমার্ক। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জেতে ওয়েলসের বিরুদ্ধে। আর এদিন তারা থামিয়ে দিল চেকদের দৌড়।
অপর ম্যাচে ইউক্রেনকে হেলায় হারিয়ে ইউরো কাপের সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিল ইংল্যান্ড। শনিবার চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে থ্রি লায়ন্সরা জিতল ৪-০ গোলে। জয়ের কাণ্ডারি হ্যারি কেন করলেন জোড়া গোল। অধিনায়কের পাশাপাশি লক্ষ্যভেদে সফল হয়েছেন হ্যারি মাগুইরে এবং জর্ডান হ্যান্ডারসন। আন্দ্রে শেভচেঙ্কোর দলের বিরুদ্ধে হ্যারি কেনদের এদিনের পারফরম্যান্স ইংরেজ সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদ যে আরও চড়িয়ে দেবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দুরন্ত ধারাবাহিকতা দেখিয়ে প্রথমবার ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন উস্কে দিচ্ছে গ্যারেথ সাউদগেটের দল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী বুধবার ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে ডেনমার্কের।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কমপ্লিট ফুটবল উপহার দিয়ে এসেছে ইংলিশরা। তাদের বড় পরীক্ষা ছিল শেষ ষোলোয় জার্মানির বিরুদ্ধে। ওই বাধা সহজে টপকে আসার পর আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল সাউদগেট-ব্রিগেডের। রোমের ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইউক্রেনের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই পূর্ণ কর্তৃত্ব দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। গোল পেতেও খুব একটা দেরি হয়নি। চতুর্থ মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক হ্যারি কেন। বাঁদিক থেকে রহিম স্টার্লিংয়ের বাড়ানো বল বুটের ডগা দিয়ে গোলে ঠেলার চেষ্টা করেন তিনি। ইউক্রেনের গোলরক্ষক জিওর্জি বুসচানের বুকে লেগে বল জালে জড়ায়। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে রক্ষণে জোর দেয় ইউক্রেন। ফলে বিরতির আগে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেও গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডের ঝাঁঝালো আক্রমণের সামনে আর থই পায়নি শেভচেঙ্কোর দলের ডিফেন্স। ৪৬ মিনিটে লুক শ’ র ক্রস থেক হেডারে গোল করেন হ্যারি মাগুইরে। এর চার মিনিটের মধ্যেই হ্যারি কেন নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন। এক্ষেত্রে তাঁকে গোলের পাস বাড়িয়েছিলেন লুক শ। ৫৭ মিনিটে রাইসকে তুলে নিয়ে হ্যান্ডারসনকে মাঠে নামান ইংল্যান্ড কোচ সাউদগেট। তার সুফল মিলতে দেরি হয়নি। ৬৩ মিনিটে মাউন্টের পাস থেকে কেরিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের স্বাদ পান লিভারপুলে খেলা এই ফুটবলার। এই প্রথম ইউরো কাপের কোনও নকআউট ম্যাচে ৪টি গোল করার নজির গড়ল ইংল্যান্ড।
দুটি সেমিফাইনাল ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। প্রথম সেমিফাইনালে ইতালি মুখোমুখি হবে স্পেনের। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই হোম অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যাবে, সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।