‘ডিসরাপসন অ্যান্ড ইনোভেশন’ শিরোনামে শুরু হলো ডয়চে ভেলের আন্তর্জাতিক সম্মেলন গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম। দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল।
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এবারও সংবাদমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের নিয়ে করা ডয়চে ভেলের গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে গত বছর পুরোপুরি অনলাইনে হলেও এ বছর তা অনলাইন ও অফলাইন দুই প্লাটর্ফমেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে কনফারেন্সটি।
জার্মানির বন শহরে ডয়চে ভেলের প্রধান কার্যালয়ে দুই দিনের এ আয়োজন ভার্চুয়্যালি উদ্বোধন করেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তাছাড়া দেশটির আসছে জাতীয় নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির আরমিন লাশেট ও গ্রিন পার্টির আনালেনা বায়েরবুক উপস্থিত ছিলেন। ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমব্যুর্গ ও বেলারুশের বিরোধী দলের নেতা সভেটলানা টিখানোস্কায়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের ১২০টি দেশ থেকে অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী বক্তৃতায় চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেন, “গণতান্ত্রিক সমাজে যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি, আমাদের সচেতনভাবে বিবেচনা করতে হবে স্বাধীনতা বলতে ঠিক বুঝায় এবং কীভাবে আমরা স্বাধীনতা ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারব।”
অনুষ্ঠানে ইউরোপে সাংবাদিকদের অধিকারের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ইউরোপে সাংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কীভাবে চাপের মুখে পড়ছে তা ব্যাখা করতে গিয়ে বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেন ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমব্যুর্গ ।
তিনি বলেন, বেলারুশে যা হচ্ছে তা ইউরোপের জন্য লজ্জাজনক। আর এমন পরিস্থিতি রাশিয়ার সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, আর সব স্বৈরশাসকের মতোই বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লোকাশেঙ্কো ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চান যে গণমাধ্যম তাদের শুধু প্রশংসা করুক।
বেলারুশে সম্প্রতি আটকের পর মুক্ত হওয়া সাংবাদিক আলেকজান্ডার বুরাকোভের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের বিষয়ে আমাদের একটি স্পষ্ট অবস্থান থাকা উচিত।”
সারা বিশ্বেজুড়েই এর চর্চা করা উচিত বলে মনে করেন লিমব্যুর্গ। কারণ করোনা মহামারির এ পরিস্থিতি সামলাতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে কম উন্নত দেশগুলোর আদান-প্রদানের সম্পর্ক আরো অধিক পরিমাণে বাড়াতে হবে, বলেন তিনি।
এদিকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তৃতায় দুই চ্যান্সেলর প্রার্থী মহামারির সময়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহের বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সিডিইউএর আরমিন লাশেট বলেন, “আমরা যে একে অপরের সাথে সংযুক্ত তা এ মহামারি আমাদের স্পষ্টভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে। আর তা গবেষণাধর্মী সাংবাদিকতার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে।”
পরিস্থিতি ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধনী দেশগুলোর শুধু নিজেদের ভ্যাকসিনের বিষয়ে নজর দেওয়াই যথেষ্ট নয়। উন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর নেতাদের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এক বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি।
এদিকে আগামী নির্বাচনে গ্রিন পার্টি থেকে চ্যান্সেলর পদের জন্য মনোনীত প্রার্থী আনালেনা বায়েরবুক বলেন, করোনা মহামারি শুরুর আগে থেকেই বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাপের মুখে রয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের সময়ে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের উপর চাপ বাড়তে দেখা গেছে।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন সোমবার মহামারি পরবর্তী সাংবাদিকতার মোকাবেলায় বিভিন্ন পরামর্শ উঠে আসে।
হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রফেসর স্টিভেন পিংকার বলেন, তথ্য আদান-প্রদানের ডিজিটাল পদ্ধতির কারণে গণমাধ্যমগুলোর কাজ ব্রেকিং নিউজ, দুর্যোগ, সঙ্কট ইত্যাদি বিষয়ক সাংবাদিকতা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। আর এর ফলে অনেক গণমাধ্যমব্যবহারকারীর উপর মানসিক প্রভাব পড়ছে। এমন সাংবাদিকতায় অনেক ইতিবাচক প্রেক্ষাপট চাপা পড়ে যাচ্ছে।
“পরিসংখ্যানগত অনেক বিষয়েরও আমাদের সচেতন হওয়া উচিত, যেমন গত দুই’শ বছরে সারা বিশ্বে দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে।”
একসময় যেখানে শতকরা ৯০ ভাগ লোক অতিদরিদ্র ছিল, সে সংখ্যা এখন শতকরা নয় ভাগে নেমে এসেছে। যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে, ইউরোপ ও উত্তর অ্যামেরিকার মানুষের গড় আয়ু ৮০ বছরের বেশি। এমন ইতিবাচক উন্নয়নগুলো সঙ্কটের এ সময়ে আলোচনায় আসা উচিত বলে মন্তব্য এ গবেষকের।
চলতি বছর ডয়চে ভেলের ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ড জিতলেন নাইজেরিয়ার সাংবাদিক টোবোরে অভোরি। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধমে তিনি নাইজেরিয়ার মানব পাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব পাচারকারী নাইজেরিয়া থেকে নারীদের প্রতারিত করে ইউরোপসহ নানা জায়গায় পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাসব্যাপী গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তৈরি টোবোরের প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে নাইজেরিয়া সরকার।