২০২০ সালে ইউরোপে পৌঁছানো অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা গত একদশকের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিলো৷ কিন্তু সমুদ্রপথে মৃত্যু এবং নিখোঁজের সংখ্যা অনেক বেশি, বিশেষ করে ক্যানারি দ্বীপে৷ জাতিসংঘের অভিবাসন প্রতিবেদনে সে তথ্যই উঠে এসেছে৷
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে, করোনা মহামারী সত্ত্বেও ২০২০ সালে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছে ৯৩ হাজার মানুষ৷ এদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি ভূ-মধ্যসাগর বা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের ক্যানারি আইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে৷
২০২০ সালে ইউরোপে আসার পথে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার মানুষ৷ চলতি বছরে এরই মধ্যে ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইওএম৷ সংস্থাটির মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রোজেক্ট এমএমপি’র একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনাকে ‘মানবিক সংকট’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আইওএম-এর গ্লোবাল মাইগ্রেশন ডেটা অ্যানালিসিস সেন্টারের পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক লাচকো ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা নিরাপদ অভিবাসন ব্যবস্থাপনাকে প্রাধান্য দেয়৷ তিনি জানান, ‘‘সহিংসতা এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে পাড়ি দিতে গিয়ে কেউ যাতে জীবনের ঝুঁকি না নেয়৷’’
২০২০ সালে ক্যানারি দ্বীপে অভিবাসী প্রবেশের সংখ্যা ৭৫০ ভাগ বেড়েছে৷ এছাড়া এই দ্বীপে পৌঁছাতে গিয়ে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিতে ৮৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এর আগের বছরগুলোতে কখনো হয়নি৷ ২০১৪ সাল থেকে এই পথে ইউরোপে প্রবেশ করছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ দূরত্বের কারণে ক্যানারি দ্বীপে পৌঁছানোর পথটা ভীষণ বিপজ্জনক৷ এই দ্বীপ থেকে সবচেয়ে কাছের গন্তব্য ৯৫ কিলোমিটার দূরে মরক্কোতে৷ কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ মরক্কোর ঢাকলা এবং মৌরিতানিয়ার নৌআধিবু থেকে ক্যানারি দ্বীপে আসে, যা সাড়ে চারশ’ এবং ৭৭৫ কিলোমিটার দূরে৷ খাবার, পানি ছাড়া অভিবাসন প্রত্যাশীরা দিনের পর দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ সমুদ্রে থাকেন৷
এমএমপি বলছে, তথ্য উপাত্তে নিহতের যে সংখ্যার উল্লেখ আছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি৷ ২০২০ সালে অভিবাসী বহনকারী পাঁচটি জাহাজ ডুবির কথা জানিয়েছে কয়েকটি এনজিও৷ কিন্তু সেই তথ্য নথিভুক্ত করা হয়নি৷ এসব জাহাজের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, কোন উদ্ধার অভিযান হয়নি, দুর্ঘটনায় পড়েছে কিনা সে ধরনের কোনো ফোনও আসেনি৷ আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে ২০২০ সালে আটলান্টিক এবং ভূমধ্যসাগরে ১৯টা জাহাজ দুর্ঘটনা হয়েছে, যেগুলোর কোনো খোঁজ নেই৷ এসব ঘটনায় ৫৭১ জন নিখোঁজ৷
আইওএম জানিয়েছে, তথ্যের ঘাটতির কারণে হাজারো পরিবার জানতে চান তাদের স্বজনের খবর৷ ক্যানারি দ্বীপে পৌঁছাতে গিয়ে যেসব অভিবাসী মারা যান, তাদের নাম ছাড়াই কবর দেয়া হয়৷ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিহত অন্তত এক হাজার ব্যক্তির কোন তথ্য জানা নেই৷
এপিবি