সত্যিই যেন মৃত্যুকূপ! ম্যাচের গতি-প্রকৃতি পাল্টাতে থাকল ক্ষণে-ক্ষণে। একই সময়ে শুরু অন্য ম্যাচের ফলও প্রভাব রাখল দারুণভাবে। নখ কামড়ানো উত্তেজনায় ঠাসা লড়াইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউট পর্বে উঠেছে পর্তুগাল।
কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে রোনালদোর গোলে পর্তুগাল প্রথমে এগিয়ে গেলেও করিম বেনজেমার বিরতির আগে-পরের দুই গোলে পাল্টে যেতে বসেছিল চিত্র। পর্তুগাল শিবিরে জাগে বিদায়ের শঙ্কা। পরে রোনালদোর বিশ্ব রেকর্ড ছোঁয়া গোলে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। মেলে শেষ ষোলোর টিকেট।
‘এফ’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডের ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। তাতে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। আরেক ম্যাচে হাঙ্গেরির বিপক্ষে দুবার পিছিয়ে পড়া জার্মানিও ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-২ গোলে ড্র করে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে।
জার্মানি ও পর্তুগালের পয়েন্ট সমান ৪, মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে জার্মানরা। ছয় গ্রুপের তৃতীয় স্থান পাওয়া দলগুলোর সেরা চারটির একটি হয়ে শেষ ষোলোয় ঠাঁই পেয়েছে পর্তুগাল।
দু’পক্ষেরই গ্রুপ সেরা হওয়ার হাতছানি, এক দলের আবার ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা-সব মিলিয়ে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই শুরুর আগে যেমন উত্তেজনার আভাস দিয়েছিল, মাঠেও ধরা দিল সেই রূপে। ম্যাচের পরিসংখ্যানেও ফুটে উঠছে তা; বল দখলে সমানে-সমান, গোলের উদ্দেশে পর্তুগাল ১০ আর ফ্রান্স ১১ টি শট নিয়েছে। দুই দলেরই পাঁচটি করে শট ছিল লক্ষ্যে।
শুরু থেকে বল দখলে পর্তুগিজরা একটু এগিয়ে ছিল বটে, তবে নিশ্চিত সুযোগ মিলছিল না। ম্যাচের ষোড়শ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় ফ্রান্স; তবে কিলিয়ান এমবাপের শট সহজেই ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক রুই পাত্রিসিও। এর আগে-পরে দুটি হাফ চান্স পেয়েছিলেন রোনালদো; তবে উগো লরিসের পরীক্ষাই নিতে পারেননি তিনি।
এরপরই ৩০তম মিনিটে রোনালদোর স্পট কিকে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ডি-বক্সে উড়ে আসা বল পাঞ্চ করে ফেরাতে গিয়ে দানিলো পেরেইরার মুখে লরিস আঘাত করলে পেনাল্টি পায় শিরোপাধারীরা। গোলরক্ষককে হলুদ কার্ডও দেখান রেফারি। অবশ্য পেরেইরার মুখে আঘাত করার আগে বলে হাত লাগিয়েছিলেন লরিস, সিদ্ধান্তটি নিয়ে প্রবল আপত্তি জানায় ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। ফ্রান্সের বিপক্ষে এটিই রোনালদোর প্রথম গোল।
বিরতির আগে বেনজেমার সফল স্পট কিকে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। এই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। ডি-বক্সে ঢোকার মুখে নেলসন সেমেদোর বাধায় এমবাপে পড়ে গেলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। প্রতিবাদ জানায় পর্তুগাল, তবে ভিএআরেও সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। ধারাভাষ্যকারদের কাছেও সিদ্ধান্তটি ছিল অবাক করার; টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, একটু যেন সহজেই পড়ে গিয়েছিলেন পিএসজি তারকা। অর্ধ দশক পর জাতীয় দলে ফেরা বেনজেমা পাঁচ বছর ২৫৮ দিন পর দেশের হয়ে গোল করলেন।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে ভাসে ফ্রান্স। পগবার উঁচু করে বাড়ানো দারুণ থ্রু বল ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে ডি-বক্সে পেয়ে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন বেনজেমা। প্রথমে অফসাইডের পতাকা উঠলেও ভিএআরের গোলের সিদ্ধান্ত আসে।
অন্য ম্যাচে তখন হাঙ্গেরির বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে জার্মানি। ওই সময়ের স্কোরলাইনে ম্যাচ দুটি শেষ হলে বিদায় নিতে হত পর্তুগালকে। ৬০তম মিনিটে দ্বিতীয় সফল স্পট কিকে মোড় ঘুরিয়ে দেন রোনালদো। ফ্রান্সের ডি-বক্সে তাদের ডিফেন্ডার জুল কুন্দের হাতে বল লাগলে পেনাল্টিটি পায় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইরানের আলি দাইয়ের ১০৯ গোলের বিশ্ব রেকর্ড স্পর্শ করলেন রোনালদো। আর এবারের আসরে তার মোট গোল হলো পাঁচটি, ইউরোর ইতিহাসে রেকর্ড ১৪টি।
আট মিনিট পর পাত্রিসিওর ডাবল সেভে রক্ষা পর্তুগালের। পগবার ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ফেরান গোলরক্ষক, বল তার হাত ছুঁয়ে পোস্টের ওপরের দিকে লেগে চলে যায় গ্রিজমানের কাছে। বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শটও দারুণ ক্ষীপ্রতায় ফেরান উলভারহ্যাম্পটনের এই গোলরক্ষক।
শেষ দিকে দু’দল কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। যোগ করা সময়ে ডি-বক্সের বাঁ দিকের দাগের ঠিক বাইরে কিংসলে কোমান পর্তুগালের ফের্নান্দেজের চ্যালেঞ্জে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে ফ্রান্স। তবে ভিএআরে সাড়া মেলেনি। হাফ ছেড়ে বাঁচে পর্তুগিজরা।
চ্যালেঞ্জ এবার নকআউট পর্বের। গতবারও চার তৃতীয় সেরা দলগুলোর একটি হয়ে নকআউট পর্বে উঠেছিল পর্তুগাল। জিতেছিল শিরোপা। সে আশায় এগিয়ে যাওয়ার পথে আগামী রোববার শেষ ষোলোয় বেলজিয়ামের মুখোমুখি হবে ফের্নান্দো সান্তোসের দল।
গতবার ফাইনালে গিয়ে স্বপ্ন ভেঙেছিল ফরাসিদের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সামনে এবার সেই হতাশা মুছে দেওয়ার পালা। শেষ ষোলোয় তারা খেলবে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে, আগামী সোমবার।