অবশেষে মুখোমুখি হলেন বিশ্বের অন্যতম দুই শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রনেতা। বুধবার জেনেভায় এক শতাব্দী প্রাচীন ভিলায় এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রনায়ক ভ্লাদিমির পুতিন।
জেনেভা হ্রদের ধারে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রাচীন ওই ভিলায় এ দিন বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। আগের দিনই জেনেভায় পৌঁছেছিলেন বাইডেন। পুতিন এলেন বৈঠকের ঠিক আগে। প্রথমটা বিমানে ও তার পর গাড়িতে। এ দিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের সামনে পাশাপাশি বসলেন বাইডেন-পুতিন। সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। দুর্লভ এই মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় আমেরিকা এবং রাশিয়ার সাংবাদিক আর চিত্রগ্রাহকদের মধ্যে। এক সময় তা গড়ায় বিশৃঙ্খলার পর্যায়। নিরাপত্তা রক্ষীদের বার্তা অগ্রাহ্য করে বাইডেন-পুতিনের সামনেই ঠেলাঠেলি, চিৎকার শুরু করেন দু’দেশের সাংবাদিকেরা। তাঁদের প্রশ্নে ঘাড় নাড়া ছাড়া কার্যত মুখ খোলেননি বাইডেন। রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, বৈঠক বানচাল করার মতলবে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা।
শুরুতে চওড়া হাসির আড়ালেও অস্বস্তি ঢাকতে পারেননি বাইডেন। পুতিনকেও যেন খানিকটা ‘শীতল’ দেখাচ্ছিল। তবে মুহূর্তেই পরিস্থিতি সহজ করে পুতিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন বাইডেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বললেন, ‘‘মুখোমুখি দেখা করা অনেক বেশি ভাল। নয় কি?’’ বৈঠকে আসার জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুতিনও।
কূটনৈতিক মহলের খবর, আজকের বৈঠকে দু’দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ,সাইবার-হানা, রাশিয়ার জেলবন্দি বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মুক্তির বিষয়ের পাশাপাশি রাশিয়ায় ‘বন্দি’ আমেরিকানদের বিষয়েও কথা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এই সূত্রে বাইডেনকে ‘বন্দি বদলের’ প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন।
ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসেন দু’জনেই। দিনের শেষে পুতিন জানান, এ দিনের বৈঠক ছিল পুরোপুরি গঠনমূলক। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে দুই দেশই। তবে কোনও যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেননি তাঁরা। বৈঠক শেষে কোনও ভোজসভার আয়োজনও ছিল না।
জেনেভায় সম্মেলন শেষে ,প্রেসিডেন্ট বাইডেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারকে সন্তোষজনক ও ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেনI সম্মেলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাস্তবসম্মত মনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন,দুটি দেশের সম্পর্ক উন্নততর হবে কিনা আগামী কয়েকটি মাস তা প্রমান করবেI তিনি বলেন, হঠাৎ করে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না।তবে বলেন, দুটি দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমাদের একক কোন নীতি বা মূল্যবোধ বিসর্জন না দিয়ে অর্জন করা সম্ভবI
সম্মেলন শেষে, দোভাষীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিনও, সম্মেলনকে গঠনমূলক বলে উল্লেখ করেনI তিনি বলেন, তাদের আলোচনায় কোনো বৈরিতা ছিল নাI তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে গঠনমূলক, পরিশীলিত ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক বলে উল্লেখ করেনI
দুটি দেশের সরকার জানিয়েছে ,সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে, তারা কৌশলগত স্থিতিশীলতা প্রশ্নে শলা-পরামর্শ শুরু করবেI তাঁর সংবাদ সম্মেলনে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, বৃহৎ দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক বজায় রাখার বিশেষ দায়িত্ব রয়েছেI
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর রাশিয়া এবং অ্যামেরিকা দুই পক্ষই জানিয়েছে, পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই নেতা। তারা জানিয়েছেন, পরমাণু যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, ফলে সেই যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়াই ভালো। একই সঙ্গে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দুই পক্ষের কথা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী বৈঠক করবেন এবং চুক্তি করবেন। পুটিন জানিয়েছেন, অন্তত ২০২৪ পর্যন্ত যাতে সেই চুক্তি স্থায়ী হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হবে।
-ভয়েস অব আমেরিকা।