মহাসমুদ্র যেন এ গ্রহের এক সচেতন বিস্ময়। অপার সুনীল জলরাশি।সম্পদের আধার। যেখানে লুকিয়ে আছে কত রহস্য। সেই মহাসাগরকে মনে করার দিন ৮ জুন ‘বিশ্ব মহাসাগর দিবস’।
১৯৯২ সালে প্রথম উদযাপিত হয় এই দিনটি। সেই বছর ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরো-তে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক (UNCED) সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মহাসাগর দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে জাতিসংঘ এই দিবসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
এ দিনটির অন্যতম গুরুত্ব হল, এদিন আর একবার নতুন করে মানুষকে সমুদ্রের উপযোগিতার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। যেমন এবারে জাতিসংঘ ‘সমুদ্র বাঁচাও’এর ডাক দিয়েছে। ‘সমুদ্রকে অন্তত প্লাস্টিকজনিত দূষণ থেকে রক্ষা করুন’ বিশ্ববাসীর কাছে এবারে এই আবেদন রেখেছে তারা।
২০২১ থেকে ২০৩০ সাল এই দশ বছর হতে চলেছে UN Decade of Ocean Science for Sustainable Development। সেই হিসেবে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ এবারের এই মহাসমুদ্র দিবস।
এই দশকের লক্ষ্য থাকবে, সামুদ্রিক বিজ্ঞানের এমন সব আবিষ্কার যা সরাসরি মানবজীবনকে সমৃদ্ধ করে, যা প্রত্যক্ষ ভাবে মানবসমাজের কল্যানে আসবে। তা ছাড়া, প্রতি বছরই দিনটির একটি থিম থাকে। যেমন এ বছরের থিম ‘মহাসাগর;জীবন ও জীবিকা’ সেখানেও মানুষের প্রসঙ্গ আছে।
মহাসাগরকে পৃথিবীর ফুসফুস বলে মনে করা হয়। এটা বায়োস্ফিয়ারের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্বের খাদ্য ও ওষুধের অন্যতম ভাণ্ডার। ফলে যেভাবেই হোক রক্ষা করতেই হবে সমুদ্রকে।
পৃথিবীর মোট ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে মহাসাগর। নীল সমুদ্রের অতল গভীরে কী আছে? মহাসমুদ্র আমাদের প্রতি পদে আশ্চর্য করে। যেমন, আমরা বিস্মিত হই জেনে যে, পৃথিবীর প্রায় ৯৪ শতাংশ প্রাণী প্রজাতি বাস করে সমুদ্রের নীচে! ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার অফ মেরিন স্পিসিসের মতে, এখনও পর্যন্ত সমুদ্রের প্রায় আড়াই লাখ প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। আমরা আরও আশ্চর্য হই যখনন জানতে পারি, পৃথিবীর বৃহত্তম পর্বতমালা রয়েছে সমুদ্রের নীচে! মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরা যা প্রায় ৬৫,০০০ কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ, তা তো জলের নীচেই!
কিন্তু আমাদের সর্বাগ্রে মনে রাখতে হবে, মহাসাগরগুলি পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে। সমুদ্রের নীচে এমন অনেক সামুদ্রিক প্রজাতি বাস করে যারা এই অক্সিজেন জোগান দেয়। ফলে ‘জীবনের বিকাশে ও জীবিকার প্রয়োজনে’ মহাসমুদ্রকে রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব।