সাইবেরিয়ার বরফের তলা থেকে মাথা তুলল আশ্চর্য জীবন্ত প্রাণী রোটিফার
রিপ ভ্যান উইঙ্কলের ব্যাপারটা না হয় নিছক রূপকথার গল্প! সে-ই যে ছোকরা পাহাড়ে ছাগল চরাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল আর ঘুম ভাঙার পরে পাহাড় থেকে নেমে এসে গ্রামে ফিরে দেখেছিল সবাই বুড়িয়ে গিয়েছে, তার ঘুমের মাঝে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর! কিন্তু সাইবেরিয়ার জমাট বেঁধে থাকা বরফের স্তর থেকে মাথা তুলল যে রোটিফার (Rotifer), তার ঘুমের আপাতত ধন্য ধন্য করছেন বিজ্ঞানীরা! হাজার হোক, ২৪০০০ বছর একটানা ঘুমিয়ে থাকা আর তার পরেও বেঁচে থাকা, একে কি কুর্নিশ না করে পারা যায়?
এই জায়গায় এসে সবার আগে একটা কথা বলে না নিলে অন্যায় হবে- এই রোটিফার কিন্তু বড়সড় কোনও প্রাণী নয়। বরং আয়তনে সে এতই ক্ষুদ্র যে মাইক্রোস্কোপ ছাড়া সে আছে কী নেই চারপাশে, তাও ঠাহর করা খুব একটা সুবিধের হবে না! সেই জন্যই বিজ্ঞানীরা একে স্থান দিয়েছেন আর্কটিক মাইক্রোস্কোপিক জীববৈচিত্র্যের দলে। সম্প্রতি সাইবেরিয়ায় পৃথিবীর চিরতরে বরফ হয়ে যাওয়া স্তর বা পার্মাফ্রস্ট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যার খোঁজ পেয়েছেন রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ ফিজিওকেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল প্রবলেমস ইন সয়েল সায়েন্সের বিজ্ঞানী স্তাস মালাভিন। রোটিফার নিয়ে তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছে সেল প্রেস জার্নালে।
রোটিফার মাইক্রোস্কোপিক প্রাণী হলেও আদতে কিন্তু সে আমাদের মতোই বহুকোষী। বিজ্ঞানসম্মত পরিভাষায় একে হুইল অ্যানিম্যালকিউলস নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এদের শরীরের এক প্রান্তে একটা খুব ছোট্ট রোমের চক্র থাকে, তাই হুইল শব্দটার অবতারণা। অন্য দিকে, মাইক্রোস্কোপ ছাড়া চোখে পড়ে না, এই ক্ষুদ্রাকৃতির জন্য শুধু অ্যানিম্যাল না বলে উল্লেখ করা হচ্ছে অ্যানিম্যালকিউলস বলে! জানা গিয়েছে যে স্তাস এবং তাঁর দল সাইবেরিয়ার বরফ খুঁড়তে গিয়ে মাটির ১১ হাত নিচে এই রোটিফারের সন্ধান পেয়েছেন। এর পর রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতির সাহায্যে যখন তাঁরা এর শরীরে উপস্থিত জৈব খনিজের সূত্র ধরে রোটিফারের বয়স নির্ধারণ করতে যান, তখনই তাঁদের স্তম্ভিত হতে হয়!
কী ভাবে ২৪০০০ বছর ধরে ঘুমানো সম্ভব, সেটার ব্যাখ্যা কিন্তু এখনও দিতে পারেননি স্তাস বা দলের কেউ! তাঁদের বক্তব্য, ব্যাপারটাকে অনেকটা শীতঘুমের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু শীতঘুম এতটা দীর্ঘস্থায়ী কী ভাবে হয়, সেটাও একটা প্রশ্ন বটে! আপাতত সেই রহস্য ভেদ করার জন্য ল্যাবরেটরিতে রোটিফার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।