ধান কাটার মৌসুম চলছে।কাজ কাম’ও নাই।সরকারি চাকুরির সর্বোচ্চ সুবিধা পেনশন খেতে খেতে গায়ে গতরে চর্বি জমে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো যদি এখন মণ দশেক ধান কিনে সিদ্ধ করে চাল বানিয়ে রাখি তবে সারা বছর আর চাল কিনতে হবে না।
প্রস্তাব শুনে ছেলে ভর্ৎসনা করে বললো
– চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারী থেকে সারভাইভ করার ন্যূনতম নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। মানুষ জীবনকে আটকে রেখেছে ঘরে। আর এই কালবেলায় এক বছরের খাওয়ার চিন্তা কেউ করে?
একটু লজ্জা পেয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলাম।তাইতো।বাপ-মা গত হওয়ার পর আমি না এখন ঝকঝকে চাল বাজার থেকে কিনে আনি।ঝাড়া-বাছারও ঝামেলা নাই।রাইস কুকারে আটকে টাইম ফিক্স করে সুইস অন করলেই ল্যাঠা চুকে গেল।এত ঝামেলার দরকার কি!
কিন্তু আমার চাকুরী জীবনে যেখানে যতদূরই গেছি মায়ের হাতের সিদ্ধ মোটা চাল ঠিক পৌঁছে যেতো। সেই ভাপ ওঠা গরম ভাত একটু লবন দিয়ে মাখলেই একটা আঠালো স্বাদ মায়ের অনূভুতিকেই ফিরিয়ে আনতো।
প্রক্রিয়াটাও অনেক কষ্টকর।ধামায় করে ধান এনে ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভোর রাত থেকে সিদ্ধ-শুকানো,সে যেন এক উৎসবের আমেজ।
আমাদের ছেলেমেয়েরা বাবাদিবস-মা দিবসে কত আবেগময় কথায় তাদের স্মরন করে।আমি কিছুই পারিনা।আমরা তো অত আদর যত্নে বড় হইনি।একগাদা ছেলেমেয়ের ক্ষিধে মেটানোর চিন্তাতেই তাদের ঘুম হতো না।আদরের আদিখ্যেতার সময় কই।
ছেলেকে বলতে চাইলাম,অযত্ন অবহেলার বাপ-মা’র ঘামের গন্ধর মত সিদ্ধ ধানের ভাপ ওঠা নেশা লাগা ঘ্রাণটা আরেকবার পেতে চাই।
গলার কাছে কি একটা আটকে গেল আর বলা হলো না।