8.9 C
Düsseldorf

বড় ধ্বসের আশঙ্কায় এসপিডি এবং ওলাফ শোলৎস

Must read

বিপ্লব শাহরিয়ার
বিপ্লব শাহরিয়ার
জার্মানপ্রবাসী সাংবাদিক

আগের লেখাগুলোতে আলোচনা করেছি মূলত গ্রিন পার্টির চ্যান্সেলরপ্রার্থী আন্নালেনা বায়েরবক এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন- সিডিইউ’র প্রার্থী আরমিন লাশেটকে নিয়ে। কারণ জনমত জরিপ বলছে, এই দুই দল এবং প্রার্থীর মধ্যেই হতে পারে মূল লড়াইটা। তাহলে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক- এসপিডি’র প্রার্থী ওলাফ শোলৎস-এর অবস্থান কোথায়?

অভিজ্ঞতায় এগিয়ে ওলাফ শোলৎস
চ্যান্সেলরপদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হলে শোলৎসকে বড় ধরনের ইতিবাচবক ভাবমূর্তি গড়তে হবে। জনমত জরিপে এই মূহুর্তে এসপিডি’র পক্ষে সমর্থন রয়েছে ১৫ শতাংশ ভোটারের। আক্ষরিক অর্থেই গ্রিন পার্টি এবং সিডিইউ/ সিএসইউ থেকে অনেক পিছিয়ে।

রাজনৈতিক দক্ষতার নিরিখে শোলৎস নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী দাবি করতেই পারেন। আরমিন লাশেট এবং আন্নালেনা বায়েরবকের তুলনায় তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সর্বাধিক ও ব্যাপক। অভিজ্ঞতায় অন্তত বায়েরবকের চেয়ে ঢের এগিয়ে তিনি। কাজ করেছেন হামবুর্গ শহরের মেয়র হিসেবে। ছিলেন হামবুর্গ রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর গেলো তিন বছর ধরে একাধারে তিনি ফেডারেল সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং জার্মানির ভাইস-চ্যান্সেলর। এসপিডিতেও তার রয়েছে তৃণমূল থেকে শীর্ষে উঠে আসার গল্প। দলের যুব শাখার একজন আধিকরিক হিসেবে তার নেতৃত্বের উত্থান। ছিলেন হামবুর্গ এসপিডি’র প্রধান। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যেমন কাজ করেছেন, তেমনি ছিলেন জাতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান। আর সবশেষ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

‘আর্থিক কেলেঙ্কারি’ রোধে ব্যর্থতা বড় দুশ্চিন্তা
শোলৎস-এর দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই বিশদ। কাজের বিশাল স্তূপের মধ্যেও সঠিক পথটি খুঁজে নিতে পারেন তিনি। নিজের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে তার। পাশাপাশি একজন নির্ভরযোগ্য এবং বুদ্ধিমান রাজনীতিক হিসেবে নিজের খ্যাতি উপভোগ করেন শোলৎস। যদিও দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বেশকিছু বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। হামবুর্গের মেয়র থাকাকালে ২০১৭ সালের জি-টুয়েন্টি সম্মেলনের প্রাক্কালে ব্যাপক দাঙ্গা মোকাবিলায় ব্যর্থ হন তিনি। অর্থমন্ত্রী হিসেবেও বড় একটি দায়ভার রয়েছে তার। আর্থিক পরিষেেবা সরবরাহকারী জার্মান প্রতিষ্ঠান ওয়্যারকার্ড ২০২০ সালে আকষ্মিকভাবেই ঘোষণা দেয় যে, তাদের প্রায় এক দশমিক নয় বিলিয়ন ইউরোর সমপরিমাণ সম্পদের কোনো অস্তিত্বই নেই। জার্মানির আর্থিক তদারককারী কর্তৃপক্ষ আগেভাগে ওয়্যারকার্ডের এই অনিয়ম শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। অর্থমন্ত্রী হিসেবে ওই কেলেঙ্কারির রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় বইতে হচ্ছে ওলাফ শোলৎসকে। যার ছায়া পড়ছে নির্বাচনী প্রচারণাতেও। এ ধরনের কোনো দাগ নেই বায়েরবক এবং লাশেটের ক্যারিয়ারে।

নিজের দলই হতে পারে বড় বাঁধা
সন্দেহাতীতভাবেই ওলাফ শোলৎসকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে চায় না এসপিডি। দলীয় সদস্যদের ভোটে তিনি প্রথম নন বরং দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তারপরও তিনি এসপিডি’র চ্যান্সেলরপ্রার্থী কিভাবে? জবাব একটাই। এসপিডিতে বিকল্প কেউ নেই। বিষয়টা অস্বাভাবিক হলেও যোগ্য বিকল্পের অভাবেই শোলৎস-এর পেছনে একাট্টা হয়েছেন এসপিডি সদস্যরা।

দলের মূলধারার যে অংশটি, তাদের দরজা শোলৎস-এর জন্য বন্ধ ছিলো দীর্ঘদিন ধরেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওই অংশটি উল্লেখযোগ্যভাবে বামঘেঁষা হয়ে পড়ে। তবে সশস্ত্র ড্রোন-এর মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন শোলৎস। যে ইস্যুগুলোতে গ্রিন পার্টি সরব থেকেছে সমসময়ই। এসপিডি এবং গ্রিন পার্টির মধ্যে এটিই সম্ভবত বড় পার্থক্য।

করোনা অতিমারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে ভারসাম্যের বাজেটনীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হন শোলৎস। এই নীতিটি এসপিডির বামপন্থী অংশকো খুশি করতে পারেনি কখনোই। ফলে শোলৎস যখন তার ওই নীতি থেকে সরে আসেন, বিষয়টি তার জন্য শাপেবর হয়ে আসে। নির্বাচনী প্রচারণায় সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়ার একটা সুযোগ তিনি পেয়ে গেছেন।

ওলাফ শোরৎস এবং এসপিডি’র চেয়ারম্যান যাসকিয়া এস্কেনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। এর অর্থ হলো, নির্বাচনী প্রচারণায় দলের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। এই দ্বন্দ্বের সুফল কিন্তু ভোগ করবে গ্রিন পার্টি। কারণ রাজনৈতিকক দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে গ্রিন পার্টির শীর্ষ দুই নেতা বায়েরবক এবং হাবেক-এর মধ্যে সামান্যই অমিল আছে। একই সমস্যায় পড়তে হতে পারে ইউনিয়ন প্রার্থী লাশেটকেও। প্রার্থীতার দৌড়ে সিএসইউ প্রধান মার্কুস সোয়েডার হেরে গেলেও দম্ভ ছাড়েননি এতটুকু।

ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন না করেই আপাতত নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওলাফ শোলৎস। তবে কাউকে না কাউকে নিয়েতো এ কাজটি তাকে করতেই হবে। আন্ড্রেয়া নাহলেস, যিগমার গাব্রিয়েল এবং মার্টির শুলয-এর মতো হেভিওয়েট নেতারা ইতোমধ্যেই দলে কোনঠাঁসা হয়ে পড়েছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় শোলৎস ছাড়াও এসপিডি’র আরেক সদস্য আছেন। তিনি হলেন শ্রমমন্ত্রী হুবার্টুস হাইল। কর্মদক্ষতার কারণেই আগামী মন্ত্রিসভাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার দাবিদার। মের্কেল যুগের অবসানে সিডিইউ যেমন দুর্বল হয়ে পড়েছে, একইভাবে শক্তিহীন হয়ে পড়েছে এসপিডিও। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার মূল্য দিতে হতে পারে ওলাফ শোলৎসকে।

শোলৎস-এর বড় সমস্যা তার ঔদ্ধত্য। তিনি সম্ভবত বায়েরবকের চেয়ে নিজেকের উচ্চতর স্তরের মনে করেন। আবার বায়েরবক সম্পর্কে যেকোনো ধরনের অবমাননাকর মন্তব্যেই তিনি দুঃখ পান। বিপরীতমুখী এই মানবিক অনুভূতি কিন্তু তাকে নির্বাচনী লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। এই গুণটা অবশ্য তার আছে। সম্ভবত ওলাফ শোলৎস-ই হতে পারেন জার্মানির জন্য দৃঢ়চেতা একজন নেতা। কারণ তিনি খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নন। তবে এটাও ঠিক যে, জার্মানির জন্য নতুন কোনো চমক নিয়ে আসার সক্ষমতা হয়তো তার নেই।

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট