কানাডার অ্যালবার্ডায় ১০টি গির্জায় ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ। এ ছাড়াও উইনিপেগ শহরে স্থাপিত যুক্তরাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়া ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য উপড়ে ফেলেছেন বিক্ষোভকারীরা।
বৃহস্পতিবার দেশটিতে ‘কানাডা ডে’ উদযাপনের আগ মুহুর্তে এ ভাঙচুর হয়। এসব ভাঙচুরের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে অন্তত দুটি পরিত্যক্ত স্কুলে গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার সম্পর্ক আছে বলে পুলিশ মনে করছে।
ক্যালগেরি শহরের একাধিক গির্জায় ভাঙচুরের পাশাপাশি কমলা ও লাল রং ছিটানো হয়েছে এবং কোথাও কোথাও দরজা ও দেয়ালে হাতের রঙিন ছাপ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। অ্যালবার্ডার প্রিমিয়ার জেসন কেনি গির্জায় এ ধরনের হামলায় ‘স্তম্ভিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
চলতি বছরের মে ও জুনে পরিত্যক্ত দুই আবাসিক স্কুলে প্রায় এক হাজার অচিহ্নিত কবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে উত্তর আমেরিকার এ দেশটিতে বিভিন্ন গির্জায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। সরকারি অর্থায়নে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পরিচালনায় ওই স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিশুদের রাখা হতো।
১৮৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এসব বোর্ডিং স্কুলে এক লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি আদিবাসী শিশুকে তাদের পরিবারগুলো থেকে নিয়ে এসে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। এসব শিশুদের প্রায়ই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে ও তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে দেওয়া হতো না। তারা ছিল অপুষ্টির শিকার; তাদেরকে এমনকী শারীরিক ও যৌন নিগ্রহও সইতে হয়েছে।
২০১৫ সালে কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন আবাসিক স্কুলগুলোর ওই চর্চাকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ আখ্যা দেয়। যারা এসব বোর্ডিং থেকে শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পেরেছে তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, ক্ষুধা আর একাকিত্ব তাদের তাড়া করে ফিরত; স্কুলে নিয়মিত ভয় দেখানো ও বল প্রয়োগ করা হতো।
কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার ওই স্কুলগুলোর আচরণের জন্য ২০০৮ সালে ক্ষমা চেয়েছে। তবে বেশিরভাগ স্কুল পরিচালনার ভার যাদের দায়িত্বে ছিল, সেই রোমান ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ থেকে এখনো দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পোপ ফ্রান্সিসকে কানাডায় এসে উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিশুদের ওপর করা নিপীড়নের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অচিহ্নিত এসব কবর আবিষ্কারের পর অনেকে সরকারের প্রতি ১ জুলাই ‘কানাডা ডে’ উদ্যাপন বাতিলেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। অ্যালবার্ডার প্রিমিয়ার কেনি জানান, বৃহস্পতিবার ক্যালগেরির যেসব গির্জায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তার মধ্যেই একটি ইভাঞ্জেলিকাল গির্জাও আছে।
যেসব দেশে প্রায়শই গির্জায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, সেসব দেশ থেকে আসা শরণার্থীরাই ক্যালগেরির এই ইভাঞ্জেলিকাল গির্জাটির অনুসারী, বলেন কেনি। “শান্তিমতো নিজেদের বিশ্বাসের চর্চা করতে পারবে, এই আশা নিয়ে এসেছিল তারা কানাডায় এসেছিল। গির্জায় হামলার ঘটনায় অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে,” টুইটারে দেওয়া পোস্টে বলেছেন তিনি।
ক্যালগেরির পুলিশ জানিয়েছে, গির্জাগুলোতে ভাঙচুর হয়েছে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে। একটি গির্জার জানালে ভেঙে ভেতরেও রং ছিটানো হয়েছে। কোথাও কোথাও রং দিয়ে ‘২১৫’ ও ‘৭৫১’ লেখা হয়েছে। মে’তে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পরিত্যক্ত একটি স্কুলে ২১৫টি অচিহ্নিত কবর আবিষ্কৃত হয়েছিল। জুনে সাসকাচোয়ানের অন্য একটি পরিত্যক্ত স্কুলে মেলে আরও ৭৫১টি। এসব কবর আদিবাসী শিশুদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি স্কুলই রোমান ক্যাথলিক গির্জা পরিচালনা করতো।