20 C
Düsseldorf
হোম ব্লগ পৃষ্ঠা 2

ফিলিপাইনে সেনাবাহিনীর বিমান বিধ্বস্ত

ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে ৯২ জনকে বহন করা সেনাবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বিমানে থাকা অধিকাংশ যাত্রীই সেনাবাহিনীর সদস্য । দুর্ঘটনার স্থান জোলো দ্বীপ থেকে ১৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বেঁচে যাওয়া ৪০ জনকে নিকটবর্তী স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডেলফিন লরেনজানা জানিয়েছেন, ‘সি-১৩০ হারকিউলিস’ বিমানটি জোলো বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় রানওয়ের বাইরে চলে যায়। দুর্ঘটনার পর বিমানটির ধ্বংসস্তূপ থেকে আগুন ও ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা যায়।
ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে দুর্ঘটনার স্থানের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে কয়েকটি ভবনের পাশে থাকা বিমানের ধ্বংসস্তূপে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

রবিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ মিন্দানাওয়ের কাগায়ান ডে ওরো থেকে জোলো শহরে সেনা সদস্যদের বহন করে নিয়ে আসছিলো বিমানটি। ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী হারকিউলিস সি-১৩০ মডেলের এই বিমান পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে।

ফিলিপিন্সের সেনাপ্রধান জেনারেল সোবেজানা সাংবাদিকদের বলেন, “বিমানটি রানওয়ে মিস করার পর আবারো নিয়ন্ত্রণে আসার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত পারেনি।” ফিলিপিন্সের দক্ষিণাঞ্চলে আবু সায়াফের মত ইসলামপন্থী জঙ্গি দলগুলো মোকাবেলায় মোতায়েন করা অতিরিক্ত সেনা সদস্যের অংশ ছিলেন বিমানে অবস্থিত সেনারা।

কর্তৃপক্ষ বলছে বিমানটি যে হামলার শিকার হয়েছে, সেরকম মনে করার কোনো কারণ এখনো নেই। উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, বিমানে থাকা অনেক সৈনিকই কেবল প্রাথমিক সেনা প্রশিক্ষণ শেষ করেছিলেন।

এবার রাফাল দুর্নীতির খোঁজ পেতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত ফ্রান্সের

রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি ঘিরে নতুন করে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিচারবিভাগীয় তদন্ত করবে ফ্রান্স। এই উদ্দেশ্যে এক বিচারককে নিযুক্ত করা হয়েছে। ফ্রান্সের আর্থিক অপরাধ দমন সংক্রান্ত বিভাগ পিএনএফ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে।

সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি সংবাদমাধ্যম রাফাল নির্মাতা সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের বিরুদ্ধে চুক্তির মধ্যস্থতাকারীকে ১০ লক্ষ ইউরো বা প্রায় ১০ কোটি টাকা ‘উপহার’ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল। এ সংক্রান্ত কিছু নথিপত্রও পেশ করে তারা। দুর্নীতি বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে এরপর পিএনএফ-এর কাছে রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি জানায়। তারই ভিত্তিতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফরাসী সরকার।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি খারিজ করেছিল পিএনএফ। সে সময় ‘তথ্যপ্রমাণের অভাব’ এমন অজুহাত দেখিয়ে দাবি খারিজ করা হয়েছিল। এ বার ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মোদী জমানায় ২০১৬-তে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছিল ভারত। সে সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঁসোয়া ওঁলা। একটি ফরাসি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি, এর কিছুদিন পরেই ফরাসী দুর্নীতি দমন সংস্থার তদন্তে মধ্যস্থতাকারীকে দেওয়া ‘উপহার’ সংক্রান্ত তথ্য প্রমান মিলেছিলো।

তদন্তকারীদের সে সময় দাসো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন,উপহার হিসেবে রাফাল যুদ্ধবিমানের ৫০টি রেপ্লিকা তৈরির জন্য ৫ লক্ষ ইউরো খরচ হয়েছে। প্রতি রেপ্লিকার জন্য ২০ হাজার ইউরো। কিন্তু রেপ্লিকা তৈরি ও বিতরণের কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি যুদ্ধবিমান নির্মাতা সংস্থাটি। বরং তদন্তে জানা যায়, প্রায় ১০ লক্ষ ইউরো হিসেব বহির্ভুত খরচ হয়েছে চুক্তিপর্বে।

ঘটনাচক্রে গত সেপ্টেম্বরে রাফাল চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি-ও। সংসদে পেশ করা সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন এবং এমবিডিএ-র আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-কে সাহায্য করার কথা। কিন্তু তারা সেটা করছে না। অথচ ২০১৬-র রাফাল কেনার চুক্তিতে বলা ছিল, দাসো চুক্তি-মূল্যের ৫০ শতাংশ প্রকল্প বা কাজের জন্য ভারতের কোনও সংস্থাকে দেবে এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য করবে।

গরু বলে কি গান শুনতে মন চায় না?

করোনায় দেড় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। লোকজন অনেকটাই ঘরবন্দী। এরই মধ্যে কেউবা চাকরি হারিয়ে হয়েছেন বেকার, কেউবা বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশা। স্বাভাবিক জীবনযাপন টিকিয়ে রাখতে মানুষের চেষ্টায় কমতি নেই। তাই বলে এই করোনাকালে গরুর জন্য কনসার্ট!

অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা সত্যি। করোনায় আরও অনেকের মতোই জীবনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সুদূর ডেনমার্কের এক সংগীতশিল্পীর। তবে দমে যাওয়ার পাত্র নন। তিনি পেশা বদল করেননি ঠিক; তবে বদলেছেন তাঁর সংগীতের শ্রোতা। করোনাকালে সংগীতপ্রেমী মানুষকে শ্রোতা বানাতে না পেরে শেষমেশ গরুকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।

সংগীতের ভিন্নধর্মী এই শ্রোতা বানানোর কারিগর হলেন জ্যাকব শো। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ তাঁকে এতটাই সুখকর অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে ডেনমার্কে কনসার্টের জন্য হল খুলে দেওয়া হলেও বিস্তীর্ণ মাঠ বা চারণভূমিতে গরুদের জন্যই কনসার্টের আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ বিষয়ে জ্যাকব শো বলেন, ‘আমি আমার সলো পেশাজীবনে সব সময় যা করে এসেছি, ‘গরুর জন্য কনসার্ট’ তারই ধারাবাহিকতা।

যুক্তরাজ্যের সংগীতশিল্পী জ্যাকব বার্সেলোনার মার্শাল একাডেমিতে অধ্যাপনায়ও নিয়োজিত। গরুদের গান শোনাতে তিনি ডেনমার্কের কোপেনহেগেন থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে স্টেনসের এক গ্রামীণ এলাকায় গড়ে তুলেছেন একটি সলো স্কুল। ৩০ বছর বয়সী যুবক জ্যাকব বলেন, ‘করোনাকালে প্রচলিত কনসার্টের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পশুদের জন্য গান গাওয়াটাকে সেরা বিকল্প হিসেবে বেছে নিলাম।’ তিনি আরও বলেন, শরতে সংগীতপ্রেমী একজন খামারিকে তিনি তাঁর গরুদের আনন্দ দিতে গান শোনানোর প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি হন তিনি।

এদিকে মোগেনস হগার্ড নামের ওই খামারি বলেন, ‘জ্যাকবের প্রস্তাব আমার কাছে পাগলাটে মনে হয়নি, বরং সেটি রোমাঞ্চকরই মনে হয়েছে।’
সূত্র- এএফপি

স্পেন – ইটালির পর দুর্দান্ত জয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড – ডেনমার্ক

চেকদের হারিয়ে শেষ চারে ডেনমার্ক। ​​​‘উই আর রেড, উই আর হোয়াইট, উই আর ড্যানিশ ডিনামাইট।’ বহু পুরনো সেই স্লোগানটাই ফের একবার প্রতিধ্বনিত হল বাকু ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে। ডেনমার্কের বিস্ফোরক ফুটবলে তছনছ হয়ে গেল চেক প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন। শনিবারের কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে জিতে শেষ চারে পৌঁছে গেল ড্যানিশরা। তাদের হয়ে স্কোরশিটে নাম তোলেন যথাক্রমে থমাস ডেলানি ও ক্যাসপার ডলবার্গ। চেকদের হয়ে গোল করেন প্যাট্রিক শিক।

চলতি ইউরোতে শুরু থেকেই দুরন্ত ছন্দে দাপট দেখিয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। গত ম্যাচে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডসকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছিল জারোস্লাভ সিলহাভির দল। স্বাভাবিকভাবেই এদিন ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন প্যাট্রিক শিকরা। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকে চোখে পড়ল উল্টোচিত্র। বল দখলের লড়াই থেকে আক্রমণে প্রতিপক্ষ ডেনমার্কের আধিপত্য ছিল বেশি। কাঙ্ক্ষিত গোল পেতেও দেরি হয়নি ড্যানিশদের। ৫ মিনিটের মধ্যে লিড নেয় তারা। কর্নার থেকে জ্যাকব লারসেনের ভাসানো বলে মাথা ছুঁইয়ে লক্ষ্যভেদ করেন থমাস ডেলানি। এরপর ব্যবধান বাড়ানোর আরও কয়েকটি সুযোগ পেলেও, কাজে লাগাতে পারেননি ডলবার্গরা। ৩০ মিনিট পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া চেক প্রজাতন্ত্র চাপ বাড়ায় ড্যানিশ রক্ষণের উপর। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টে ৪২ মিনিটের মাথায় আরও একটি গোল খেয়ে যায় তারা। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ডিফেন্স আলগা করার মাশুল গুনতে হয়েছে সিলহাভি-ব্রিগেডকে। বাঁ-দিক থেকে লেফট ব্যাক জোয়াকিম মাহেলির ঠিকানা লেখা ক্রস থেকে দুরন্ত হেডে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান ডলবার্গ। তবে দ্বিতীয়ার্ধের গোড়াতেই এক গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে ফেরার আশা জাগায় চেক প্রজাতন্ত্র। ভ্লাদিমির কউফালের ক্রস থেকে দুরন্ত ফ্রিকে লক্ষ্যভেদ করেন প্যাট্রিক শিক । এরপর সমতা ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও লক্ষ্যে সফল হয়নি চেক ব্রিগেড।

ইউরোর শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি ডেনমার্কের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে হারিয়ে কোনওমতে নক-আউটে পৌঁছায় ডেনমার্ক। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জেতে ওয়েলসের বিরুদ্ধে। আর এদিন তারা থামিয়ে দিল চেকদের দৌড়।

অপর ম্যাচে ইউক্রেনকে হেলায় হারিয়ে ইউরো কাপের সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিল ইংল্যান্ড। শনিবার চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে থ্রি লায়ন্সরা জিতল ৪-০ গোলে। জয়ের কাণ্ডারি হ্যারি কেন করলেন জোড়া গোল। অধিনায়কের পাশাপাশি লক্ষ্যভেদে সফল হয়েছেন হ্যারি মাগুইরে এবং জর্ডান হ্যান্ডারসন। আন্দ্রে শেভচেঙ্কোর দলের বিরুদ্ধে হ্যারি কেনদের এদিনের পারফরম্যান্স ইংরেজ সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদ যে আরও চড়িয়ে দেবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দুরন্ত ধারাবাহিকতা দেখিয়ে প্রথমবার ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন উস্কে দিচ্ছে গ্যারেথ সাউদগেটের দল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী বুধবার ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে ডেনমার্কের।

টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কমপ্লিট ফুটবল উপহার দিয়ে এসেছে ইংলিশরা। তাদের বড় পরীক্ষা ছিল শেষ ষোলোয় জার্মানির বিরুদ্ধে। ওই বাধা সহজে টপকে আসার পর আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল সাউদগেট-ব্রিগেডের। রোমের ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইউক্রেনের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই পূর্ণ কর্তৃত্ব দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। গোল পেতেও খুব একটা দেরি হয়নি। চতুর্থ মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক হ্যারি কেন। বাঁদিক থেকে রহিম স্টার্লিংয়ের বাড়ানো বল বুটের ডগা দিয়ে গোলে ঠেলার চেষ্টা করেন তিনি। ইউক্রেনের গোলরক্ষক জিওর্জি বুসচানের বুকে লেগে বল জালে জড়ায়। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে রক্ষণে জোর দেয় ইউক্রেন। ফলে বিরতির আগে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেও গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডের ঝাঁঝালো আক্রমণের সামনে আর থই পায়নি শেভচেঙ্কোর দলের ডিফেন্স। ৪৬ মিনিটে লুক শ’ র ক্রস থেক হেডারে গোল করেন হ্যারি মাগুইরে। এর চার মিনিটের মধ্যেই হ্যারি কেন নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন। এক্ষেত্রে তাঁকে গোলের পাস বাড়িয়েছিলেন লুক শ। ৫৭ মিনিটে রাইসকে তুলে নিয়ে হ্যান্ডারসনকে মাঠে নামান ইংল্যান্ড কোচ সাউদগেট। তার সুফল মিলতে দেরি হয়নি। ৬৩ মিনিটে মাউন্টের পাস থেকে কেরিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের স্বাদ পান লিভারপুলে খেলা এই ফুটবলার। এই প্রথম ইউরো কাপের কোনও নকআউট ম্যাচে ৪টি গোল করার নজির গড়ল ইংল্যান্ড।

দুটি সেমিফাইনাল ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। প্রথম সেমিফাইনালে ইতালি মুখোমুখি হবে স্পেনের। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই হোম অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যাবে, সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

অভিভাবকদের শিক্ষকতার আসল শিক্ষা দিয়েছে মহামারী

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, শিক্ষকদের জন্য শুধু প্রশংসা নয়, তাঁদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করাটাও জরুরি। ২ জুলাই দেশটির সবচেয়ে বড় শিক্ষক ইউনিয়নের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাইডেনই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে বক্তব্য দিলেন। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এই সমিতির একজন সদস্য। এই ইউনিয়নের সদস্যসংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। গত নির্বাচনে শিক্ষক সমিতিগুলো একচেটিয়াভাবে বাইডেনকে সমর্থন করে।

বাইডেন বলেন, গত এক বছরের মহামারি অভিভাবকদের শিক্ষকতার আসল শিক্ষা দিয়েছে। লকডাউনের সময় যেসব অভিভাবক নিজেদের সন্তানদের গৃহশিক্ষা দিয়েছেন, তাঁরাও স্বীকার করবেন যে শিক্ষকদের মজুরি বৃদ্ধি কতটা জরুরি।
শিক্ষকদের মজুরি বৃদ্ধির অনুদান হিসেবে অঙ্গরাজ্যগুলোর জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর আগামী বছরের বাজেট প্রস্তাবে ২০ বিলিয়ন ডলারের আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখছেন।

বাইডেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়ে শিক্ষকেরা আমেরিকার পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নিজেদের ও পরিবারের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শিক্ষার বিষয়ে শিক্ষকেরাই অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।
রিপাবলিকানদের মধ্যে আমেরিকার শিক্ষকদের নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলে আসছিল। অধিকাংশ শিক্ষক সমিতি দীর্ঘ লকডাউনের পক্ষে ছিল। স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য রিমোট শিক্ষা প্রদান নিয়ে শিক্ষক সমিতিগুলোর সঙ্গে রক্ষণশীলদের বিরোধ চলছিল ২০২০ সালজুড়ে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রিপাবলিকানদের প্রকাশ্য অসন্তোষ রয়েছে। শিক্ষক সমিতিগুলো ব্যাপকভাবে ডেমোক্র্যাট মনোভাবাপন্ন। নির্বাচনে আমেরিকার শক্তিশালী ইউনিয়ন হিসেবে শিক্ষক সমিতির ভূমিকা রাখার অবকাশ থাকে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। এদিন থেকে মহামারি পেরোনোর স্বাধীনতার গ্রীষ্ম শুরু হচ্ছে। বাইডেন বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। টিকা গ্রহণে জনগণকে উৎসাহিত করতে শিক্ষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে ‘করোনামুক্তি’ পালন করছে আমেরিকা

৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। এদিনই আমেরিকায় করোনা-মুক্তি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জো বাইডেন সরকার। এ উপলক্ষে হোয়াইট হাউসে হাজার খানেক অতিথিকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে গত বছর দিবসটি উদযাপন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। তবে এবার করোনা থেকে মুক্ত হয়ে দিবসটি পালনে আগেভাগেই ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। পরিকল্পনামতো হোয়াইট হাউজের সাউথ লনে কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশ হবে। ন্যাশনাল মলে মহাধুমধাম করে ফোটানো হবে আতশবাজি। এবারের স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনকে বাইডেন ‘করোনা থেকে মুক্তি’ অভিহিত করেছেন।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খামখেয়ালি ভাবনার হাত থেকে জনসাধারণকে বার করে এনে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছেন বাইডেন। টিকাকরণের গতি বাড়িয়েছেন। বাইডেনের লক্ষ্য ছিল ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের ৭০ শতাংশের টিকাকরণ শেষ করা। যদিও তা পূরণ করতে পারেননি তিনি। আজ হোয়াইট হাউসের দেওয়া বিবৃতিতে ডেল্টা স্ট্রেনের আতঙ্কের কথাও উল্লেখ করা হয়নি। গতকালই জানা গেছে আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের প্রতিটিতে অতিসংক্রামক ডেল্টা স্ট্রেইন ধরা পড়েছে।

এ অবস্থায় সাউথ লনের পার্টি কতটা নিরাপদ তা জানতে চাওয়া হলে প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, ‘‘আপনার টিকাকরণ হয়ে গেলে আপনি নিরাপদ।’’ আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচির মুখেও একই কথা শোনা গিয়েছে।

৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে উৎসব করা নিরাপদ হবে কি না জানতে চাওয়া হলে ফাউচি বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে ভয় নেই। টিকা নেওয়া থাকলে আপনার কাছে যথেষ্ট নিরাপত্তা রয়েছে। কিন্তু টিকা না-নেওয়া থাকলে অবশ্যই মাস্ক পরুন। আর দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলুন।’’

‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ এর ডিরেক্টর রোশেল ওয়ালেনস্কি জানিয়েছেন, সংক্রমণ নিয়মিত ভাবে বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে-২৩ জুন থেকে ২৯ জুন, আমেরিকায় দৈনিক সংক্রমণ ছিল গড়ে ১২,৬০৯। তার আগের আগের সপ্তাহ থেকে ১০ শতাংশ বেশি। ১৬ থেকে ২২ জুন দৈনিক সংক্রমণ ছিল গড়ে ১১,৪২৮। ওয়ালেনস্কি বলেন, ‘‘ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকায়।কিন্তু অনুমান যদি ঠিক হয়, খুব শিগগির আলফাকে ছাড়িয়ে যাবে অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন।’’

নাচানাচির অনুমতি মিললো জার্মানিতে

জার্মানির হামবুর্গে করোনা শুরুর পর প্রথমবারের মতো আবার নাচ শুরুর অনুমতি মিলেছে৷ তবে আউটডোর ড্যান্সে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই কড়া শর্ত মানতে হবে বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র৷

শর্তের মধ্যে রয়েছে, আউটডোর ড্যান্স উপভোগ করতে সকল দর্শককে নেগেটিভ করোনা টেস্ট সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ এবং দুই ডোজ টিকাদানের সনদপত্র সাথে থাকা বাধ্যতামূলক৷ তাছাড়া নাচের জায়গা হতে হবে খোলা আকাশের নীচে৷ এবং সেখানে সর্বোচ্চ ২৫০ জন নাচপ্রেমী মাস্ক ছাড়াই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন৷ আগ্রহীদের এসব শর্ত মেনেই কেবল ড্যান্সপার্টিতে অংশগ্রহণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন হামবুর্গের মেয়র পেটার চেঞ্চা৷

করোনার কারণে তরুণদের নাচ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল তা বলাই বাহুল্য৷ যার ফলে গত সপ্তাহান্তগুলোতে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী হামবুর্গের খোলা সবুজ মাঠ বা পার্কে অবৈধভাবে বেশ কয়েকবার পার্টির আয়োজন করেছিল, যা ফৌজদারি অপরাধ৷ এসব ঘটনার পরই নাচ পার্টির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পক্ষে সরব হয়ে ওঠে জার্মান পুলিশ ইউনিয়ন৷

এর আগেও পার্কে কিছু আক্রমণাত্মক তরুণ পুলিশের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে৷ তবে মেয়র নাচের অনুমতি দিলেও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্র এবং শনিবার সকাল ৯টা থেকে সিটি পার্কে অ্যালকোহল পান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছেন৷
মহামারির কারণে গত বছর মার্চ থেকে হামবুর্গে নাচ পার্টি এবং বাইরে মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল৷ করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটা কমায় কড়াকড়ি শিথিল করে বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্ট আবার শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ তবে এসব ইভেন্টের শর্ত হিসেবে দর্শকের সংখ্যা থাকবে শতকরা ৫০ভাগ৷ ইনডোর খেলাধুলায় দুই খেলোয়াড়ের মাঝে বজায় রাখতে হবে যথেষ্ট দূরত্ব৷ আর করোনা টেস্টের মেয়াদকাল ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে বাড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা করা হয়েছে৷

অবাধ্যতা, আনুগত্য নাকি মুক্ত স্বাধীন বাঁধনহারা!

৩ জুলাই, অবাধ্যতা দিবস। এই অবাধ্যতা মানেই আবার নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষতিকর জীবনযাপন নয় কিন্তু। বরং প্রচলিত ভুল জীবনযাপনের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ জীবনের খোঁজ করা।

মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন। কিন্তু জন্মের পরই মানবশিশুকে সহস্র নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে স্বাধীন বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। নিয়ন্ত্রিত বিকাশ হয় তার। এ নিয়ন্ত্রিত বিকাশ মানুষের স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। শুরুতেই এ কাজ করে পরিবার, এরপর স্কুল, বন্ধুবান্ধব, গুরুজন, রাষ্ট্রীয় আইন, অফিসের বস, জীবনসঙ্গী; সবার কাছে নিজের কাজের জবাবদিহি করতে করতে স্বাভাবিকভাবেই হাঁপিয়ে ওঠে মানুষ। কে জানে, এই জবাবদিহির জটিলতায় দারুণ একটি লেখা, অসাধারণ কোনো আইডিয়া, ভীষণ ভালো কোনো শিল্প সৃষ্টির আগ্রহ অঙ্কুরেই মরে যায় হয়তো।
আজ না হয় কিছুটা অবাধ্য হওয়া যাক।

এই যে নিয়মাবদ্ধ নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া জীবন, এর বিরুদ্ধে কেউ কেউ বিদ্রোহ করে বসেন, অবাধ্য হয়ে ওঠেন। অবাধ্যতা সব ক্ষেত্রেই অসুন্দর নয়। মার্কিন লেখক হেনরি ডেভিড থরো বলেছেন, অবাধ্যতা স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। অনুগত মাত্রই দাস।

চীন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ

এমন এক সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের শতবার্ষিকী উদযাপন করছে, যখন চীন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

বিবিসি’র জন সাডওয়ার্থ লিখছেন, চীনের এই সাফল্যের একেবারে কেন্দ্রস্থলে রয়েছে এই কমিউনিস্ট পার্টির একক শাসন এবং তার একচ্ছত্র ক্ষমতার মূল্যবোধ, যা বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সময় আরও জোরালো হচ্ছে। একই সাথে পশ্চিমা দুনিয়াতেও এ বিতর্ক ক্রমশঃ তীব্র হচ্ছে যে এই মূল্যবোধের মোকাবিলা কীভাবে করা হবে। অবশ্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য আজকের দিনটি “নতুন স্নায়ুযুদ্ধের” কথা বলার সময় নয়। তাদের কাছে আজকের দিনটি হলো গণমানুষের বন্দনায় স্নাত হওয়ার দিন। সাবেক মার্কিন ডেমোক্র্যাট সেনেটর ম্যাক্স বাওকাস – যিনি ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চীনে রাষ্ট্রদূত ছিলেন – তিনি এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন,”চীনের বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় অংশই এই পার্টিতে কোন পরিবর্তনের ব্যাপার নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না।তারা অনেক বেশি চিন্তা করে তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে,গত ২০ বছরে চীনের জীবনযাত্রার নাটকীয় উন্নতি হয়েছে, এবং তারা এ নিয়ে খুবই খুশি।”

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক মুন্সি ফয়েজ আহমদে বিবিসি বাংলাকে বলেন যে,” চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পাল্টেছে।তবে তাদের মুল লক্ষ্য যে চীনা জনগণের উন্নতি, তা থেকে তারা সরে যায়নি। সেই জন্য এই পার্টির ওপর চীনা জনগণের আস্থা এখনও অটুট আছে।যতদিন কমিউনিস্ট পার্টি চীনের মানুষকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি এনে দিতে পারবে, ততদিন তারা অন্য কোন বিকল্পের কথা ভাববে না এটাই স্বাভাবিক,”
চীনের ক্ষমতা কাঠামোর ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ যে আরও শক্ত হচ্ছে, তাদের নেতা শি জিনপিংকে কেন্দ্র করে যে ‘কাল্ট’ বা ব্যক্তিপূজার আবহ ক্রমাগত বাড়ছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতিগুলো ক্রমশঃই আরও কড়া হচ্ছে – এগুলোর ব্যাপারে হয়তো তেমন কিছুই আসলে করার নেই। কিন্তু এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক নীতিগত বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে।

বেজিংয়ের অভিজাত সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হচ্ছের কাই শিয়া। তার কর্মজীবন কেটেছে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে। কিন্তু পরের দিকে চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে তার মনে সংশয় আর সমালোচনা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত বছর তিনি কার্যত নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। চীনের জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তন চায় না, এমন কথাবার্তার সঙ্গে তিনি একমত নন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে তার সাথে ‘এনগেজড’ হওয়াটাই উত্তম পন্থা, এমন ধারণাও সমর্থন করেন না কাই শিয়া।”চীনকে একটি একনায়কতান্ত্রিক পদ্ধতি থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার সময় কখনোই পার হয়ে যায়নি,এটা যত তাড়াতাড়ি করা হয়, ততই ভালো – চীনের জন্য, বিশ্বের জন্যও। শি জিনপিং যদিও ‘পুরো মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভবিষ্যতের’ আহ্বান জানাচ্ছেন, কিন্তু তিনি আসলে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন এবং তা কখনও বন্ধ হচ্ছে না।”

প্রশ্ন হচ্ছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবার্ষিকী উপলক্ষে এই যে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান, এ কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র? না-কি কোটি কোটি সাধারণ চীনা জনগণের জন্য ব্যক্তিগত উন্নতি আর সমৃদ্ধির এটাই আসল গল্প? তাছাড়া, এই যে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি আর ক্ষমতা, এর সবকিছু কেন্দ্রীভূত আছে একটি একদলীয় রাষ্ট্রের হাতে। এই রাষ্ট্র তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, বাকি বিশ্বের বিরুদ্ধেও এ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। এই আনন্দ-উদযাপন কি সেই উদ্বেগজনক কথাটাকেও মনে করিয়ে দিচ্ছে না?

চিন্তাটা হলো, বাণিজ্য আর সম্পর্ক রক্ষা করা – এর বাইরে আর কোন কিছুই যেন নেই। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, চীনের সমৃদ্ধি আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান দেশটিতে ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসবে। এটা যদি অতি ধীরে ধীরে হয়, বা কখনও নাও হয়, তাহলেও এটা চীনকে সামনাসামনি মোকাবিলা করার চাইতে ভালো বিকল্প।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রভাবশালী পত্রিকা দি স্টাডি টাইমসের সাবেক সম্পাদক দেং ইউয়েন হচ্ছেন চীনের রাজনীতির অন্দরমহলের আরেকজন লোক, যিনি এখন নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। চীনের রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রকাশ্য সমালোচনা করার ফলে তিনিও এখন গ্রেফতার হবার ভয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না। তিনি মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন এক সময় রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসতে পারে, এমন সম্ভাবনা এক সময় ছিল।
“দশ বছর আগে পার্টি ধীরে ধীরে পিছনের কাতারে চলে যাচ্ছিল,” দেং বলেন, “কিন্তু শি জিনপিং এটা নিয়ে খুশি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন এটা বিপজ্জনক। তাই তারই ভাষায় বলি, ‘পার্টি এখন উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম সবখানেই দেশকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করছে’।”

মি. দেং মনে করেন যে পার্টির এই প্রভুত্ব বিস্তারের ফলে চীন পেছন দিকে ফিরে গেছে। চীন এখন দেশের ভেতরে ক্রমাগত দমন-নিপীড়নমূলক হয়ে উঠছে। শিনজিয়াংয়ের উইঘুরদের ক্ষেত্রে এবং হংকংয়ে তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক মঞ্চেও চীন এখন তার একনায়কতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তত হচ্ছে। মি. দেং বলছেন, “যেহেতু চীন এখন ক্ষমতাধর, তারা সারা বিশ্বের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য করছে, তাই অন্য দেশগুলোকেও চীনের রীতিনীতি এবং আবেগ সম্পর্কে সাবধান থাকতে হচ্ছে।এর ফলে ওই সব দেশের ওপর এর একটা প্রভাব পড়বে। চীনের পদ্ধতি এবং তার যুক্তি গ্রহণ করে হয়তো পশ্চিমা বিশ্বই এক সময় ধীরে ধীরে বদলে যেতে পারে, যা হবে তাদের জন্য একটা বিপদ।”
অধ্যাপক কাই আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন যে এটাকে এখন সচেতনভাবেই একটা নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। যদি বিশ্বায়নের শক্তি কমিউনিস্ট পার্টিতে সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে চীন ওই একই শক্তিকে ব্যবহার করবে পশ্চিমের ওপরই তাদের মূল্যবোধকে চাপিয়ে দেবার জন্য।

বিবিসি একাধিক চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডজনেরও বেশি শিক্ষাবিদের সাথে যোগাযোগ করেছিল – উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিস্ট পার্টি, তাদের শতবার্ষিকী এবং চীনা সমাজে পাটির অবস্থান বিষয়ে তাদের মতামত নেয়া। এর মধ্যে অধ্যাপক কাইয়ের পুরোনো কর্মস্থল পার্টি স্কুলের কয়েকজনও ছিলেন। তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি, অথবা তারা কথা বলতে রাজি হননি। চীনে এখন তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ এতই কঠোর।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছিল, যাতে তারা পার্টি বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। একাধিকবার অনুরোধ পাঠিয়েও এর কোন জবাব পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত বাউকাস মনে করেন, চীনকে প্রভাবিত করতে না পারলেও পশ্চিমা দুনিয়ার উচিত তাদের উদারনৈতিক মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলে যাওয়া।

তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তবে এর একটা সীমা আছে বলে তার ধারণা। “তারা বেশ ভালোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ঠিক করে। খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করলে জনগণ ক্ষুব্ধ হবে। তারা দমনমূলক নীতি নিচ্ছে একটা সীমা পর্যন্ত।”

কিন্তু অধ্যাপিক কাই – যিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে একেবারে ভেতর থেকে চেনেন – বলছেন যে পার্টির ক্ষমতা সীমিত করতে পারে এমন কোন অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা খুবই কম আছে। তার মতে, এখন একটা ভিন্ন ধারা আসার সময় হয়ে গেছে।
“আমি আশা করি বিশ্ব ও পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা চীনের পরিস্থিতি দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবে। এই একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা চিরকাল টিকবে না, এ রকম কোন পদ্ধতিই চিরকাল টিকতে পারে না। একদিন এটার পরিবর্তন হবে এবং আমাদের উচিত তাতে সহায়তা করা।”

তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য তিনি এত বছর কাজ করেছেন, তার ১০০ বছরপূর্তিতে কি ইতিবাচক কোন কিছুই তার বলার নেই?
জবাবে তিনি বলেন, “চীনে কারও ১০০ বছর বয়স হলে মনে করা হয় যে সে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে, এবং এখন তার মৃত্যুর কথা ভাবা উচিত।আমার মনে হয় কমিউনিস্ট পার্টির উচিত অতীতের গুরুতর ভুলগুলো পর্যালোচনা করা, যা চীনা জনগণের দুর্ভোগ ডেকে এনেছে, তাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। তাদের এই বার্ষিকী উদযাপন না করে বরং সেই দায় মেটানো উচিত।”
সূত্র : বিবিসি

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নগ্ন করে পুশব্যাক;মানব মর্যাদাকে অপমান করছে গ্রিস

১২ জন শরণার্থীসহ ৪২জন অভিবাসীর একটি দলকে তুরস্কের এদির্ন প্রদেশে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে তুর্কি পুলিশ। মূলত এই অভিবাসীদের গ্রিস থেকে তুরস্কে পুশব্যাক করার সময় গ্রিক কর্তৃপক্ষ তাদের সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ফেরত পাঠায়। এই কাজ গ্রিক কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত করে থাকে।

দৃশ্যটি হৃদয় বিদারক। ১২ জন অভিবাসীর একটি দল মাটিতে বসে আছে, তাদের মধ্যে কিছু লোক মাথা নিচু করে আছে। আবার কয়েকজন তাদের বুকে হাত রেখে আছে, অনেকে ঘাস ছড়িয়ে দিয়ে তাদের যৌনাঙ্গ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল।
তাদের প্রত্যেকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় দৈনিক কুমহুরিয়াত জানায়, “গ্রেফতারকৃত ১২ জনকে গ্রিক কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক মারধর করে পুশব্যাক করেছে। এছাড়া তুরস্কের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল এদির্ন থেকে আরো ৩০ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

এদির্ন অঞ্চলের পুলিশের দায়িত্বে থাকা অভিবাসীরা দাবি করে, গ্রিসে তাদেরকে খাবার ও পানীয় জল থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তুরস্ক সরকার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জোর দাবি করেছে, “এথেন্স অভিবাসীদের উপর ক্রমাগত তাদের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।”

এই অনুশীলনগুলি যদিও হতবাক করার মতো তবে গ্রিসে এটি তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা। এরকম অনেকগুলি ঘটনা গ্রিসে উপস্থিত মানবাধিকার সংস্থা এবং এনজিওগুলিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে, তুর্কি চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডের জন্য কাজ করা চিত্র সাংবাদিক বেলাল খালেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বাস পরা যুবকদের ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেটিও ছিল এর্দিন প্রদেশের উজুনকপ্রি শহরের কাছের ঘটনা। যাদেরকে গ্রিস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। বেলাল ফরাসি দৈনিক লিবেরাসিও কে বলেন, ছবিতে থাকা অভিবাসীরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল, যেমন “আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, মরোক্কো”।

সীমান্ত সহিংসতা নিরীক্ষণ নেটওয়ার্কের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও অভিবাসীদের এভাবে কাপড় খুলে নেয়ার ঘটনাকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে রেকর্ড ৪৩% অভিবাসী জোর করে নগ্ন করার ঘটনা বর্ণনা করে সাক্ষ্য দিয়েছে । “এছাড়া একই কারাগারে একসাথে ১২০ জন লোককে অবরুদ্ধ করে নগ্ন অবস্থায় রাখার ঘটনাও বর্ণনা করেছেন অভিবাসীরা।”প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সীমান্তের দক্ষিণে আলেকজান্দ্রপোলিতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তাকে এবং অন্য ব্যক্তিদের সাথে একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভবনটির ভেতরে ৭০ থেকে ৮০ জন লোক দেখে একটি আটক কেন্দ্রের চেয়েও ভয়াবহ মনে হয়েছিল।”

তিনি আরও জানান, সেখানে সিরিয়ান, মিশরীয়, পাকিস্তানি, আলজেরিয়ান এবং মরোক্কান বংশোদ্ভূত পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা সকলেই সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি বলেন, “আটকের পরের দিন আমাকে আরো কিছু অভিবাসীদের দলের সাথে এভ্রোস নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছু সময় নৌকা চলার পরে, কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে পানিতে লাফ দিতে বলে। আমাদের সাথে অনেক লোক ছিল যারা সাঁতার জানত না, সেটি আমরা তাদের জানানোর পরেও তারা কোন সাহায্য করেননি!”