8.9 C
Düsseldorf
হোম ব্লগ

ঋজুদা ছিলেন, ঋজুদা আছেন, ঋজুদা থাকবেনও

অরণ্য বা প্রকৃতি প্রেমিক সাহিত্যিকের অভাব নেই বাংলা সাহিত্যে। তেমনই অরণ্যকে পটভূমি করে উপন্যাসও তো কম লেখা হয়নি বাংলায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ বা ‘আরণ্যক’ কিংবা হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘আবার যখের ধন’ উপন্যাসের কথা বাঙালি কি সহজে ভুলতে পারবে?

বুদ্ধদেব গুহ

তবে বুদ্ধদেব গুহ ছিলেন সকলের মধ্যে একেবারেই অন্য রকম। তিনি শুধু যে অরণ্যকে ভালবেসেছেন, তা–ই নয়, তিনি অরণ্যকে নিজের সৃষ্টিতে এমন ভাবে ধারণ করেছেন, তা অন্য আর কোন সাহিত্যিকের মধ্যে দেখা গিয়েছে, সে কথা বলতে গেলে থমকে যেতে হবে। তিনিই সেই বাঙালি সাহিত্যিক, কলমের মতো যাঁর বন্দুকও কথা বলত!‌ হ্যাঁ, তিনি নিজে বহুবার শিকারে গিয়েছেন। শুধু ভারতে নয়, সুদূর আফ্রিকার দুর্ভেদ্য অরণ্যেও। বাঘ বা বন্যপশু শিকার নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত ব্যক্তিগত জীবনেও ভারতের বিভিন্ন জঙ্গলে বহুবার শিকারে গিয়েছেন। আফ্রিকার ভয়ঙ্কর অরণ্যগুলিতেও বন্দুক হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অনেকবার। বন্যপ্রাণীদের স্বভাব–বৈশিষ্ট্য, সব কিছু ছিল তাঁর জানা।

অব্যর্থ নিশানা ছিল তাঁর বন্দুকের। বন্দুক ভালো চিনতেনও। বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য বন্দুক ছিল তাঁর সংগ্রহে। ভারতই বলুন, বা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ— কোথাও নতুন ধরনের বন্দুক পাওয়া গেলেই তিনি সংগ্রহ করে রাখতেন।
এই প্রসঙ্গে তাঁর বাবার কথাও উল্লেখ করতে হয়। তাঁর বাবাও ছিলেন নামজাদা শিকারি। তাঁর সংগ্রহেও ছিল বহু আধুনিক বন্দুক। অর্থাৎ, ছেলেবেলা থেকেই বুদ্ধদেব অরণ্য এবং বন্যপশুর নাড়িনক্ষত্র জেনে গিয়েছিলেন। তার পর বড় হয়ে তো অরণ্যকে নিজের করে নিয়েছিলেন। অরণ্যে গেলে কোনও এক খেয়াল যেন চেপে বসত তাঁর মাথায়। হারিয়ে যেতেন কাউকে কিছু না বলে। তেমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিলেন স্বয়ং সমরেশ মজুমদারও। জলপাইগুড়ির মধু চা–বাগানে বুদ্ধদেব গুহর হারিয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘তাঁকে পাওয়া গেল একটি ঝুপড়ির মধ্যে। স্যুট পরে খাটিয়ায় কাউকে শুয়ে থাকতে এর আগে কখনও দেখিনি!’’ ঘুরতে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। অবশ্যই প্রথম পছন্দ ছিল অরণ্য। তবে অন্য সব জায়গায়ও যেতেন। যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স তো বটেই, ইউরোপের সমস্ত দেশ, এ ছাড়া আমেরিকা, কানাডা, জাপান, হাওয়াই, থাইল্যান্ড, মায়ানমার ছাড়াও গোটা পূর্ব আফ্রিকা ছিল তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। গিয়েছেন আফ্রিকার দুর্গম অরণ্যগুলিতেও।

বুদ্ধদেব গুহআর সে সব কথাই উঠে এসেছে তাঁর সৃষ্টি ঋজুদার কাহিনিগুলিতে। হয়তো ঋজুদার আড়ালে ওইসব কাহিনিতে নিজের ছবিই এঁকেছিলেন তিনি। কোনও জন্তুজানোয়ার বা প্রাণীকে ভয় পেতেন না। তাঁর ঋজুদা এবং ঋভুর কথা জানেন না, এমন পাঠক বাংলা সাহিত্যে হয়তো কমই আছেন। গুগুনোগুম্বারের দেশে, অ্যালবিনো, রুআহা, নিনিকুমারীর বাঘ, বনবিবির বনে, টাঁড়বাঘোয়া, বাঘের মাংস, বনবিবির বনে, ল্যাংড়া পাহান, কাঙ্গপোকপি, ঝিঙ্গাঝিরিয়ার মানুষখেকো, ডেভিলস আইল্যান্ড, জুজুমারার বাঘ, হুলুক পাহাড়ের ভালুক, মোটকা গোগোই, অরাটাকিরির বাঘ, ফাগুয়ারা ভিলা, ছোটিডোঙ্গরির চিতা, কেশকালের বাঘিনী, লিলি সিম্পসনের বাঘ— কত নাম করব?

ঋজুদা সমগ্র প্রকাশ করেছে আনন্দ পাবলিশার্স। তবে তাদের পাঁচটি খণ্ডে সম্ভবত সমস্ত ঋজুদাকে ধরা যায়নি। কারণ, আরও কত পত্রপত্রিকায় ঋজুদা যে ছড়িয়ে রয়েছে, তার হিসেব নেই। অরণ্য, বন্যপশু এবং শিকার তঁার সমস্ত লেখায় অতিস্বাভাবিক ছবি হয়ে উঠে এসেছে, যে কারণে পাঠক বিনাদ্বিধায় ডুবে যেতে পেরেছে তাঁর সৃষ্টিতে। হয়তো তাই শারদ সাহিত্য প্রকাশের সময় এলেই তাঁর অরণ্য জীবনের গন্ধ অনেক দূর থেকে ভেসে আসত বাঙালি পাঠকের কাছে।

হ্যাঁ, এখনও। এখনও মনে হবে সে কথা। কারণ, সত্য হল, ঋজুদার মৃত্যু হয়নি। কেন না, ঋজুদাদের মৃত্যু হয় না। তাই বুদ্ধদেব গুহর ঋজুদা যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।


তবে বুদ্ধদেব গুহ আজ অতীত হয়ে গেলেন।
সোমবার (‌৩০ অগস্ট)‌ সকালে ঘুম ভাঙতেই খবরটা পাই। আমার কর্মস্থল আজকাল পত্রিকা দফতরের সহকর্মী স্বরূপদার (‌স্বরূপ গোস্বামী)‌ একটা এসএমএস দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ‘বুদ্ধদেব গুহ চলে গেলেন’। সব কেমন যেন এলোমেলো লাগছিল।

সেই সময়ই ব্যক্তিগত কারণে আমায় ফোন করেছিলেন ‘নাপৃথিবী’ গ্রুপের সম্পাদক স্মৃতিকণা রায়। তিনি বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণের খবরটা জানতেন না। আমার কাছ থেকে শুনে প্রায় কেঁদেই ফেললেন। বললেন, ‘‘কী বলছিস তুই!’’
আসলে বেশ কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর সানি টাওয়ার্সের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কখনও তিনি অসুস্থ, কখনও বা কলকাতায় না থাকা, আবার কখনও সময়–অসময়ের দ্বন্দ্বে আমাদের যাওয়া হয়ে উঠছিল না। তার পর তো করোনা–সময় শুরু হয়ে গেল। দু’বছর ধরে এই সময় সকলকেই কোণঠাসা করে দিয়েছে। তাই আর বুদ্ধদেব গুহর কাছে গিয়ে উঠতে পারিনি।

স্মৃতিকণাও অনুযোগ করলেন, ‘‘তুই সময় করতে পারলে আর একটু উদ্যোগী হলে তাঁর সঙ্গে আমাদের একটা আলোচনা হতেই পারত। কত কথা জানার ছিল তাঁর কাছ থেকে!’’ সত্যিই তাই। একই কথা বলল সাবিনাও। সাবিনা ইয়াসমিন। সকালেই ফোন করেছিল। দুঃখ করে বলল, ‘‘তোমাকে কতবার বলেছিলাম, মানসদাকে বলে একটা সময় করো, আমরা যাব। তুমি করতেই পারলে না!’’ প্রসঙ্গত বলি, মানসদা মানে মানস ভাণ্ডারী। কর্মসূত্রে দেব সাহিত্য কুটীরের সঙ্গে যুক্ত। আমার প্রিয় সাহিত্যিক। তিনি নিজেদের পত্রিকা ও প্রকাশনার প্রয়োজনে নিয়মিত বুদ্ধদেব গুহর বাড়ি যেতেন। প্রায় বছর দশেক বুদ্ধদেব গুহকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাঁর অনেক না–জানা কাহিনি, ঘটনা তাঁর জানা।

বুদ্ধদেব গুহর লেখা তিনটে বই সম্পাদনা করেছেন তিনি। সেগুলি হল ‘ঋজুদা ঋজুদা’, তাঁর ৫০টি গল্পের সংকলন ‘গল্প পঞ্চাশ’ এবং কিশোরদের জন্য লেখা গল্পগুলির সংগ্রহ ‘কিশোর গল্প’।
দৃষ্টিশক্তির সমস্যা গত বেশ কয়েক বছর ধরে বুদ্ধদেব গুহকে কাবু করে দিয়েছিল। তাই এই সময়ে তাঁর বহু লেখার অনুলিখন করেছেন মানসদা নিজে। সেই কারণে তাঁর বাড়িতে মানসদার ছিল অবাধ যাতায়াত। এমনকী, বুদ্ধদেব গুহর নানা মুহূর্তের বহু ছবি নিজের মোবাইল–বন্দি করেছিলেন মানসদা। কিন্তু সেই মোবাইল আচমকাই খারাপ হয়ে যাওয়ায় ছবিগুলিও হারিয়ে যায় চিরদিনের মতো। সে কথা মনে করে আক্ষেপ করছিলেন মানসদা।
বুদ্ধদেব গুহর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছের কথা তাঁকে বলেওছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবু এখন সবার সঙ্গে দেখা করেন না। তবু কবে যাবে বোলো। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলে সময় ঠিক করে দেব।’’
কিন্তু সেই সময়টাই বের করা হয়ে উঠল না। আর হবেও না কোনও দিন। এই আক্ষেপ আমার আমৃত্যু থেকে যাবে।


ব্যক্তিগত ভাবে বুদ্ধদেব গুহর সঙ্গে আমার গভীর একটা মানসিক যোগাযোগ ছিল। সত্যি কথা বলতে কী, আমার কৈশোরকে যৌবনে পৌঁছে দিয়েছিল তাঁর লেখা একটি উপন্যাসই। উপন্যাসটার নাম ছিল ‘লবঙ্গীর জঙ্গলে’। বইটা প্রকাশিত হয়েছিল আমার পড়ার অনেক–অনেকদিন আগেই। তবে আমি পড়েছিলাম স্কুলে পড়ার সময় লাইব্রেরি থেকে নিয়ে। বেশ রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম তখন। একটা স্বপ্নের জগতে যেন ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল উপন্যাসটা। সেই ঘোর কাটতে সময় লেগেছিল। কিন্তু তাঁর লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় ঋজুদাকে দিয়ে।

তখন সন্তু–কাকাবাবুই ছিল আমার প্রিয় চরিত্র। এ ছাড়া হৃদয়ের কাছাকাছি ছিল ঋজুদা। খুব ভালো লাগত প্রফেসর শঙ্কু এবং গোগোল। তবে, ঋজুদা, নাকি সন্তু–কাকাবাবু আমার বেশি প্রিয়, তা নিয়ে মাঝে মাঝে দ্বন্দ্বে পড়ে যেতাম। একবার দু্ষ্টুমি করে তাঁকে আমার কথা খোলাখুলি লিখেও দিয়েছিলাম। মনে আছে, একটা পোস্টকার্ড পাঠিয়ে দিয়েছিলাম সোজা তাঁর ঠিকানায়। লিখেছিলাম, ‘‘আপনার ঋজুদা আমার প্রিয়। তবে আমার বেশি ভালো লাগে সন্তু–কাকাবাবুই।’’

লিখে একটু ভয়ই হয়েছিল। কী জানি কী ভাববেন তিনি! কী ভেবেছিলেন জানি না, তবে আমাকে স্তম্ভিত করে উত্তর দিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘‘তুমি আমার ঋজুদার সব কাহিনি পড়োনি মনে হয়। এবার পড়তে শুরু করো। দেখো, সেগুলিও তোমার আরও বেশি ভালো লাগবে।’’ সন্দেহ নেই ইঙ্গিতবহ এবং বুদ্ধিদীপ্ত চিঠি! সেই সময় চিঠিটা পেয়ে কী যে আনন্দ হয়েছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না। বহুদিন চিঠিটা আগলে রেখেছিলাম। তবে শেষ রক্ষা করতে পারিনি।

আজ খুব দুঃখ হচ্ছে, সেই চিঠিটা আমার সংগ্রহে নেই। সারা জীবনে আমার স্বভাবদোষে অনেক মূল্যবান জিনিস যেমন আমি হারিয়েছি, এই চিঠিটাও তেমন ভাবেই হারিয়ে গিয়েছে। যতদূর মনে পড়ে, বেশ সুন্দর হাতের লেখা ছিল তাঁর। একটু টানা লেখা। অবশ্য স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল। চিঠিটা সংগ্রহে রাখতে পারলে আমার কাছে একটা সম্পদ হয়ে থাকত!


বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন সত্যিকারের অভিজাত পুরুষ। বংশগরিমা থেকে আভিজাত্য, লেখাপড়া থেকে সংস্কৃতি চেতনা, সব ক্ষেত্রে তাঁর ঔজ্জ্বল্য ছিল অসম্ভব বেশি। শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দীপ্ত ব্যক্তিত্ব যে কোনও জায়গায় তাঁকে সকলের মধ্যে স্বতন্ত্র করে তুলত। তিনি যেন অবলীলায় হয়ে উঠতেন নক্ষত্র বিশেষ।
ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারীও। যেমন দেখতে ছিলেন, তেমনই ছিল তাঁর লেখাপড়া। ছিলেন পশ্চিমবাংলার একজন নামি চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কলকাতায় ছিল তাঁর বিশাল চাটার্ড ফার্ম। আবার, দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড তাঁকে বাংলার আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিল। এ ছাড়া আকাশবাণী কলকাতা এবং ভারত সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্যও হয়েছিলেন।
দারুণ আঁকতেও পারতেন তিনি। নিজের অনেক বইয়ের প্রচ্ছদ নিজেই এঁকেছিলেন। বলা বাহুল্য, সেইসব বইয়ের প্রচ্ছদ সমালোচকদের সমীহ আদায় করে নিয়েছিল। দরাজ গলায় গান গাইতেন। গায়ক হিসেবেও তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর স্ত্রী ঋতু গুহও ছিলেন নামি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। দশ বছর আগে তিনি প্রয়াত হন।‌‌ স্ত্রীর মৃত্যু তাঁকে অনেকটাই একা করে দেয়।
ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন বর্ণময় চরিত্র। অমর্ত্য সেনের প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেবসেন ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শোনা যায় নবনীতা দেবের (‌তখন দেব ছিলেন)‌ সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথাবার্তা চলেছিল দুই পরিবারে। কী কারণে শেষ পর্যন্ত তা পরিণতির দিকে যায়নি, তা অবশ্য জানা যায় না। আবার বিখ্যাত কবি সুনির্মল বসু ছিলেন বুদ্ধদেব গুহর মামা। অর্থাৎ, সাহিত্য–সংস্কৃতি মিশেছিল তাঁর রক্তেই।


সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। তাঁর অন্যতম পরিচয় অরণ্যপ্রেমিক লেখক। তাঁর শিকার কাহিনি কাকে না মুগ্ধ করেছে! তবে সাহিত্যকর্মে অরণ্যানীর জীবন ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর প্রেমিক সত্তা। পশ্চিমবাংলা এবং বাংলাদেশ, দুই বাংলাতেই তাঁর গুণমুগ্ধ পাঠক ছড়িয়ে রয়েছেন। বুদ্ধদেব গুহর প্রেমের গল্প–উপন্যাসগুলি আঁকড়ে থাকতে দেখেছি বহু বাঙালি নারীকে। অনেক মহিলাই নির্দ্বিধায় তাঁকে প্রিয় সাহিত্যিকের মর্যাদা দিয়েছেন। ‘বুদ্ধদেব গুহ’ নামটাই যেন অনেক নারীর মনে আলোড়ন তুলে দিত। সে কথা অনেক নারী স্বীকারও করেছেন।

তাঁর লেখা মাধুকরী, কোজাগর, বাংরিপোসির দু’রাত্রির, বাসনাকুসুম, জঙ্গল মহল, নগ্ন নির্জন, পলাশতলির পড়শি, পরিযায়ী, অববাহিকা, আয়নার সামনে, চবুতরা, ছৌ, বাতিঘর তো বহু আলোচিত উপন্যাস। এ ছাড়া তাঁর বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল একটু উষ্ণতার জন্য, চানঘরে গান, বাজে চন্দনপুরের কড়চা, চারকন্যা, পাখসাট, গুঞ্জাফুলের মালা, ওয়াইকিকি, এক ঘরের দুই রাত প্রভৃতি। ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৬ সালে পেয়েছিলেন আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন শিরোমন এবং শরৎ পুরস্কারও।

তাঁর সৃষ্ট ঋভু চরিত্রও কম খ্যাতি পায়নি। দূরের ভোর, দূরের দুপুর, নাজাই, পর্ণমোচী, পরিযায়ী, ঋভু, ঋভুর শ্রাবণ প্রভৃতি বইগুলি ছোট–বড় সকলেরই ভালবাসা কেড়ে নিয়েছিল। সেদিন এক সাংবাদিকের কাছে শুনলাম তাঁর লেখা ‘কোয়েলের কাছে’ উপন্যাস ঘিরে একটি বাস্তব–রহস্যের কথা। এই উপন্যাসটি নিয়ে নাকি সিনেমা তৈরি করার কথা অনেকেই অনেকবার ভেবেছিলেন। কেউ কেউ কাজ শুরুও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনও সিনেমা তৈরির কাজই হয় সম্পূর্ণ হয়নি, নতুবা মুক্তির পথ দেখেনি।

যেমন পরিচালক গোষ্ঠী অগ্রগামী এই সিনেমাটি তৈরি করতে চেয়েছিল মহানায়ক উত্তম কুমারকে নায়ক করে। সিনেমাটির মহরতও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি তৈরি হয়নি। এর পর এই উপন্যাসটির কাহিনি নিয়ে হিন্দিভাষায় বোম্বেতে সিনেমা তৈরির কথা ভাবা হয়েছিল। অভিনয় করার কথা ছিল অমিতাভ বচ্চন এবং শত্রুঘ্ন সিনহার। বলা বাহুল্য, সেই প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। আরও একবার ওই উপন্যাস নিয়ে সিনেমা তৈরি শুরু হয়েছিল পশ্চিমবাংলায়। অভিনয় করেছিলেন জর্জ বেকার। কিছুদিন শুটিংও হয়েছিল। তবে রহস্যজনক কারণে সেবারও সিনেমাটি শেষ করা যায়নি। বিষয়টি ভাবার মতো বইকি! অনেকে রসিকতা করে বলেন, ওই উপন্যাস নিয়ে সিনেমা তৈরি হোক, তা বোধ হয় বিধাতাই চান না!

অবশ্য বাংলায় ওই উপন্যাস নিয়ে নাটক কিন্তু হয়েছে। মঞ্চে সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন জর্জ বেকারই। তবে, এ কথা ঠিক, বুদ্ধদেব গুহর লেখা কাহিনি নিয়ে খুব একটা সিনেমা তৈরি হয়নি। কিছুদিন আগে ব্রাত্য বসু একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন তাঁর লেখা ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’ কাহিনি দুটি নিয়ে। সিনেমাটি দেখেছি। মন্দ লাগেনি।


অরণ্য এবং সাহিত্য যেমন বুদ্ধদেব গুহর রক্তে মিশে গিয়েছিল, তেমনই তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল খেলাধুলোর সঙ্গেও। তিনি ভালো ক্রিকেট খেলতেন। চুনী গোস্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। স্কুল জীব‌‌নে দু’জনে ছিলেন সহপাঠী। পড়তেন দক্ষিণ কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে। বুদ্ধদেব ছিলেন ওই স্কুলের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। ওই দলে ছিলেন চুনী গোস্বামীও। তবে মূল দলে খেলার সুযোগ পেতেন না। একবার আন্তঃস্কুল ক্রিকেটে তাঁদের স্কুলের খেলা ছিল সাউথ সুবার্বন স্কুলের সঙ্গে। সেদিন স্কুলের কয়েকজন খেলোয়াড় অনুপস্থিত থাকায় চুনী গোস্বামীকে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব।

সেদিন চুনী গোস্বামী মাঠে নেমে ছিলেন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে। আর নেমেই কামাল করে দিয়েছিলেন। করেছিলেন ৪৭ রান এবং নিয়েছিলেন ৪টে উইকেট। তিনি যে এত ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন, সেদিনই যেন সকলে জেনেছিল। জীবনটাই বদলে গিয়েছিল তাঁর। তার পর বুদ্ধদেব আর কোনও ম্যাচে তাঁকে বাদ দেননি। পরের ঘটনাগুলি তো ইতিহাস। দুর্দান্ত ক্রিকেটার হিসেবে তঁাকে চিনেছিল বাঙালি। নিজের আত্মজীবনী ‘খেলতে খেলতে’ বইতে চুনী গোস্বামী সে কথা স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন।

শুধু ক্রিকেট নয়, ভালো ফুটবলও খেলতেন বুদ্ধদেব গুহ।‌ যে স্কুলে ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দিতেন তিনি, সেই স্কুলেরই ফুটবল দলের নেতৃত্বে ছিলেন চুনী গোস্বামী।‌ নিজের খেলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বুদ্ধদেব একবার বলেছিলেন, ‘‘আমার খেলার পুরোটা জুড়েই ছিল চুনী। ওর জন্যই আমি ফুটবলার হতে পারিনি। ও এত ভালো খেলত যে, আমি স্কুলের ফুটবল দলে সুযোগই পেতাম না।’’ পরবর্তী সময়ে চুনী গোস্বামী যেমন খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন, তেমনই বুদ্ধদেব গুহ সাহিত্যিক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন অসংখ্য বাঙালি পাঠকের হৃদয়ে। যদিও খেলার সঙ্গে সম্পর্ক কখনও ঘুচিয়ে দেননি। কলকাতা ফুটবলে বড় ম্যাচ, মানে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের ডার্বি থাকলে, সেই ম্যাচের আগে বহুবার দুই দলের বিশ্লেষণ করেছেন। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়েও আলোচনায় মেতে উঠতে তাঁর ক্লান্তি ছিল না। সেই কারণে অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গেই তাঁর হার্দিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

অনেক আগে মোহনবাগানের খেলার সময় প্রায়ই মাঠে যেতেন। যদিও মোহনবাগানকে সমর্থন করেন কিনা, সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর কখনও দেননি। প্রশ্ন করলে বলতেন, ‘‘আমার বন্ধু চুনী মোহনবাগানে খেলে। তাই ওর খেলা দেখতে আমি মাঠে আসি।’’


বুদ্ধদেব গুহর চলে যাওয়ার পর একটা কথা বারবার মনে হচ্ছে। সাহিত্য জগতে অভিভাবকের মতো যাঁরা ছিলেন, সময় বিশেষে সুপরামর্শ দিতেন, না জানা অনেক কাহিনি বলে বা লিখে আমাদের সমৃদ্ধ করতেন, সেই ছাতাগুলো যেন ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে মাথার উপর থেকে।

বিশেষ করে এই কোভিড–সময় আরও বেশি নিষ্ঠুর আচরণ করছে সাহিত্য–সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে। বেঁচে থাকার চাইতে মরে যাওয়াটাই যেন সহজ হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। বুদ্ধদেব গুহও কোভিডে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তখন তিনি দিল্লিতে ছিলেন। সেরেও উঠেছিলেন। কলকাতায়ও ফিরেছিলেন। রসিকতা করে বলেছিলেন, আরও অনেকদিন বাঁচবেন।কিন্তু মন সতেজ থাকলেও শরীর সায় দেয়নি। ধীরে ধীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে থাকে তাঁর দেহে। সেটাই সমস্যা হয়ে ওঠে শেষ পর্যন্ত। বেলভিউতে ভর্তি ছিলেন ৩১ জুলাই থেকে। আর ২৯ অগস্ট রাতে চিরদিনের মতো থেমে গেল তাঁর অনমনীয় লড়াই।

আজ ভাবতেই কেমন লাগে, ম্যাকক্লাস্কিগঞ্জে বৃষ্টি পড়ার কথা আর কেউ শোনাবে না!

“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের” পালা কি শেষ

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর পাল্টে যায় দুনিয়ার সকল রাজনৈতিক হিসেব নিকেষ। দেশে দেশে পরিবর্তিত হতে থাকে ক্ষমতা। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে ইসলামিস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর আকাশে নেমে দুর্যোগের ঘনঘটা । তবে এখানে ইসলামের নামে কিছু কিছু উগ্রবাদ যে ছিল না তা অস্বীকার করা যায় না। ১৯৯৩ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর লিভারেল ডেমোক্রেসির নতুন যাত্রা শুরু হয় । সে যাত্রায় বাঁধ সাধে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ”। যার প্রধান যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে উঠে আফগানিস্তান। কারণ টুইন টাওয়ারে হামলার পর তখন মুসলিম বিশ্বে কিভাবে ইসলামপন্থী দলগুলোকে ক্ষমতার বাইরে রাখা যায় তা নিয়ে ততপর ছিল পশ্চিমা বিশ্ব। যার ফলে দেশে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যহত হতে শুরু করে।

এরপরপরই আসে আরব বসন্তের হাওয়া। এতে তিউনিশিয়া ও মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে ইসলামপন্থী দলগুলোর উন্থানে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে পশ্চিমাবিশ্ব, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের রাজতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো। আর এতে সহায়তা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। সরিয়ে দেয়া হয় ব্রাদাহুড সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বাধীন সরকারকে। তুরস্কে এরদোগান সরকারকে হঠাতে ক্যু সংঘঠিত করা হয়। ইসলামি শক্তির গণতান্ত্রিক যাত্রাকে স্তিমিত করে দিতে উদ্ভব হয় আইসিস এর। সেই থেকে ইঙ্গ-মার্কিন জোটের কাছেই গুরুত্ব কমে যায় লিবারেল ডেমোক্রেসির । তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ভূ-রাজনীতি। যে ভূ-রাজনীতির বলি বাংলাদেশ। প্রথমে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের” প্রজেক্টের অংশ হিসেবে বিএনপি – জামাত জোটকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। পরে চীনের মোকাবেলায় ভারতকে এগিয়ে দিতে আওয়ামী কর্তৃত্ববাদকেই সমর্থন করতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। যার ফলে বাংলাদেশে বিনাভোটের সরকার বীরদর্পে এখন শাসনকাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।

ফিরে আসি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের আলোচনায় । আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ২৩০০ সৈন্য হারাতে হয়েছে তাদের।আহত রয়েছেন আরো প্রায় ৫ হাজার সৈন্য। দিনের পর দিন তালেবানদেও হামলা যেভাবে আফগানিস্তানে তীব্রতর হচ্ছিল আফগানিস্তানে দীর্ঘ মেয়াদে সৈন্য মোতায়েন রাখা নানা বিচাওে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি অলাভজনক প্রজেক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল্। তাই কাল বিলম্ব না করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডুনাল্ড ট্রাম্প আফগানি বংশোদ্ভুত আমেরিকান জালমে খালিদ আজাদকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করেন আফগান সমস্যা সমাধানে। খালিদ আজাদ সক্ষম হন তালেবানদের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে। যারই ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট জু বাইডেন আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই সেখান থেকে সকল আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ সৈন্যই দেশে ফিরেছেন। আর এতেই এশিয় প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজণৈতিক হিসেব নিকেষ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের তুমুল ঝড় বইছে দক্ষিণ এশিয়ায়।

যে ভারত কট্টর তালেবান বিরোধী তারা এখন তালেবানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছে দেশটির কূটনৈতিকরা। যে খবর এখন ভারত প্রকাশ্যেই স্বীকার করছে। উল্লেখ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান অভিযানের সাথে সাথে ভারত, দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক ভিত্তিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছিল্ । ২০১২ সাল থেকে এপর্যন্ত আফগানিস্তানে ১২ বিলিয়ন ডলার বিনোয়োগ করেছে ভারত।

পাকিস্তানের বিপরীতে ভারতকে সেখানে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। এখন তালেবান ক্ষমতায় চলে আসলে তাদের মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হবার পাশাপাশি নিজের জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মূখে পড়ার আশঙ্কা দিল্লীর । তাই দেরি না করে জম্মু কাস্মীরের নেতাদের সাথে তরিঘরি করে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। নেতাদের ঢেঁকে ইনিয়ে বিনীয়ে বলবার চেষ্টা করেছেন যা হয়েছে তা ভূলে যান । নির্বাচন দিচ্ছি, শায়ত্ব শাসন দিচ্ছি। কিন্তু মোদির হিন্দুত্ববাদ কাস্মীরসহ সারা ভারত জুড়ে যে অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরী করেছে– তা কি শুধু মৌখিক আাশ্বাসেই ভেঙ্গে যাবে? কাস্মীরের স্বাধীনতার জন্য যারা সংগ্রাম করছেন, জীবন দিয়েছেন তারা কি তালেবানদের থেকে কোনো সম্ভাব্য সুযোগ নষ্ট করতে চাইবেন? এমনি নানা হিসেব নিকেষের মাঝখানে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিন এশিয়ায় তাঁর কূটনৈতিক পদগুলোতেও দ্রুত পরিবর্তন নিয়ে এসেছে । বাংলাদেশে যোগ দিচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হেস্ট। অপরদিকে , যুক্তরাষ্ট্র -ভারতকে দক্ষিন এশিয়ায় কোনঠাসা করতে মরিয়া চীন। ভ্যাকসিন কূটনীতিতে চীন দাপটের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। উদ্যোগ নিচ্ছে সার্কের আদলে বিকল্প সার্ক প্রতিষ্ঠা করার। এটি সত্য আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত তালেবানরা বৈধ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেল। কিন্ত যে প্রক্রিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের ত্বরিঘরি করে সরানো হল । তাতে আফগানিস্তানসহ দক্ষিন এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মধ্যেই পড়ল। ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেঁজে উঠেছে। তালেবানরা দখল করে নিচ্ছে নতুন নতুন শহর। আর এই সুযোগে আলকায়দাসহ জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেই বাস্তবতায় “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ” আপাতত শেষ হলেও নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু হয় কিনা – তা এখন দেখার পালা।

আগুন লেগেছে কাসপিয়ান সাগরে

আজারবাইজানে কাসপিয়ান সাগরে বিস্ফোরণ। আগুন। আগ্নেয়গিরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আজারবাইজানের ধারে কাসপিয়ান সাগরের তলদেশ তেল এবং গ্যাসে পরিপূর্ণ। বেশ কিছু সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে সেখান থেকে তেল এবং গ্যাস উত্তোলন করে। রোববার তার খুব কাছে সাগরের মাঝখানে আচমকাই বিস্ফোরণ হয়। বিপুল শব্দে কেঁপে ওঠে চারধার। এরপরেই সাগরের মাঝে আগুন জ্বলতে শুরু করে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়, গ্যাস অথবা তেলের খনিতে আগুন লেগেছে। সেখানেই বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে বিশেষজ্ঞরা জানান, খনি এবং গ্যাসফিল্ড সুরক্ষিত আছে। সম্ভবত একটি মাড ভলক্যানো অর্থাৎ, ছোট আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে।

আজারবাইজানের সংবাদসংস্থা যে ছবি এবং ফুটেজ শেয়ার করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে সমুদ্রের মাঝে। দেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরে জানানো হয়, খনিতে কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হচ্ছে।

আজারবাইজানের সংবাদসংস্থা এপি কথা বলেছে রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা সোকার-এর মুখপাত্রের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, গ্যাস এবং তেলের ফিল্ডের থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ঘটনাটি ঘটেছে। যা আজারবাইজানের উপকূল থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে।

সোকার-এর ডেপুটি প্রধান ইন্টারফ্যাক্সকে জানিয়েছেন, তেল এবং গ্যাসের খনি সুরক্ষিত আছে। সেখানে স্বাভাবিক কাজ চলছে। বিস্ফোরণে সেখানেও কোনো ক্ষতি হয়নি।

আজারবাইজান আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ভূপৃষ্ঠে বেশ কিছু মাড ভলক্যানো বা ছোট আগ্নেয়গিরি আছে। সেখানে অগ্নুৎপাতের সময় প্রথমে বিস্ফোরণ হয়, তারপর লাভার সঙ্গে কাদা বেরতে শুরু করে। সমুদ্রপৃষ্ঠেও এ ধরনের আগ্নেয়গিরি আছে। কাসপিয়ান সাগর অঞ্চলে এর সংখ্যা অনেক। তেমনই একটি আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাতে হতে শুরু করেছে। বিস্ফোরণও হয়েছে সেখানেই।
-এপি

করের জালে আটকে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও প্রতারণার মামলা হয়েছে। মামলায় তার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা অ্যালেন ওয়েসেইলবার্গকেও আসামি করেছে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট প্রসিকিউটরের কার্যালয়। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা অভিযোগের নথিতে দেখা গেছে, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, ফৌজদারি কর প্রতারণা, ব্যবসার রেকর্ডে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ও ট্রাম্প পে-রোল করপোরেশনের বিরুদ্ধে ১০টি এবং ওয়েসেইলবার্গের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো চলছে। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন সম্পদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণদাতা, ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ও কর কর্তৃপক্ষকে ভিন্ন দিকে চালিত করেছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ওয়েসেইলবার্গের ওপর নজর দিয়েছেন তদন্তকারীরা। ১৫ বছরের একটি কর স্কিমের আওতায় কোম্পানির কাছ থেকে দামি ফ্ল্যাট, গাড়ি ও পরিবারের দুই নাতির টিউশন ফি পেলেও কর দেননি বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

তিনি ২০০৫ সাল থেকে ১৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার আয়ের কর ফাঁকি দিয়েছেন। এমনকি নিউ ইয়র্কে তিনি যে বসবাস করেন, সেই তথ্যও লুকিয়েছিলেন। মূলত কর ফাঁকি দিতেই এই তথ্য গোপন করেছিলেন তিনি। তিনি মোট ৯ লাখ ডলার কর ফাঁকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলারের কর রিফান্ড সুবিধা নিয়েছেন, যেটা তার পাওয়ার কথা ছিল না। অভিযোগের নথি প্রকাশের আগেই তিনি প্রসিকিউটর অফিসে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।

নিউ ইয়র্কের আদালতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তাকে আদালত জামিন দিলেও পাসপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে গেলে তাকে বড় ধরনের আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কর ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত চলছিল। এর বাইরে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে পর্নোস্টার স্টমি ড্যানিয়েলসহ দুই নারীর যৌন হয়রানির মামলা। কারণ প্রেসিডেন্ট থাকার কারণে এসব তদন্ত ও মামলার কার্যক্রম স্থবির ছিল।

ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, দেশের কট্টর বামপন্থিরা এভাবে তার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে। এভাবে কখনোই তাকে আটকানো যাবে না। এর মাধ্যমে দেশ আরো বেশি বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্পের সমর্থকেরা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। তবে ট্রাম্প যা-ই বলুন না কেন, এই কর ফাঁকির ঘটনায় ওয়েসেইলবার্গের ‘অফ দ্য বুক’ লেনদেনে ট্রাম্পের সই করা চেকও পেয়েছে তদন্তকারীরা। এমনটাই জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো। ট্রাম্প অভিযুক্ত হননি, কিন্তু এসব অভিযোগের হুমকি এখনো রয়েছে তার জন্য।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে মামলায় এখনো মূল আসামি রয়েছেন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা অ্যালেন ওয়েসেইলবার্গ। শিগিগরই এ মামলায় ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার কোনো আভাস নেই। কিন্তু প্রসিকিউটররা ওয়েসেইলবার্গকে এই তদন্তে সহায়তা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই।

ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত তিন দশকে বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্ত থেকে বেঁচে গেছেন ট্রাম্প। হয়তো এ যাত্রায়ও তিনি পার পেয়ে যাবেন। তবে এবারের মামলায় তার প্রতিষ্ঠান ও তার ইমেজের যে ক্ষতি হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। এই মামলার কারণে ট্রাম্পের কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যাবসায়িক অংশীদারদের সম্পর্ক খারাপ হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন কোটি কোটি ডলার ঋণের মুখে রয়েছেন, যা তাকে পরিশোধ করতে হবে। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই আইনি হুমকি তার আর্থিক পরিস্থিতি বিপর্যযের মুখে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রভাবিত হতে পারে।

যুক্তরাজ্যে শেষ সফরে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল

শুক্রবার যুক্তরাজ্যে শেষ আনুষ্ঠানিক সফরে গেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ প্রধানমন্ত্রী জনসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছেন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷

২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২২তম বারের মতো যুক্তরাজ্য সফরে গেলেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ আগামি সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে লড়ছেন না তিনি, তাই দেশটিতে চ্যান্সেলর হিসেবে এটিই তার শেষ আনুষ্ঠানিক সফর৷

শুক্রবার তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কেল বলেন, ‘‘ব্রিটেন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যা আমাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খোলার জন্য চমৎকার একটি সুযোগ৷’’ দুই দেশের নিবিড় যোগাযোগের জন্য তিনি বাস্তবধর্মী উপায় বের করার উপর জোর দেন৷

ম্যার্কেল বলেন, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের চুক্তি বা সহযোগিতা চুক্তি হতে পারে যা সম্পর্ককে আরো মজবুত করবে৷ তবে ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন এই সম্পর্ক রচনায় ধাপে ধাপে এগুতে চান ম্যার্কেল৷

করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করে ব্রিটিশ নাগরিকদের জার্মানি ভ্রমণ সহজ করার কথাও বলেন তিনি৷ বর্তমানে ব্রিটেন থেকে জার্মানিতে কেউ আসলে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকতে হয়।যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের জন্য এই নিয়ম তুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানান ম্যার্কেল৷

ইউরো ২০২০ ফুটবল টুর্নামেন্টে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বিপুল দর্শকের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ম্যার্কেল৷ সেমিফাইনাল ম্যাচে স্টেডিয়ামটিতে দর্শক সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০ হাজারের উপরে করার প্রস্তুতি চলছে৷ তবে ম্যার্কেলের উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে জনসন বলেছেন এই সংখ্যা কমিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই৷ এক্ষেত্রে উয়েফার স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মেনেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

এদিকে ম্যার্কেলের সম্মানে যুক্তরাজ্যে নতুন একটি অ্যাকাডেমিক মেডেল চালুর ঘোষণা দিয়েছেন বরিস জনসন৷ ১৩ হাজার ৮০০ ডলার সমমূল্যের এই পুরস্কারের নামকরণ করা হবে জার্মান বংশদ্ভুত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলিন হার্শেল এর নামে৷

জার্মানি অথবা ব্রিটেনের যেকোন একজন নারী বিজ্ঞানীকে তার অবদানের জন্য ২০২২ সাল থেকে অ্যাওয়ার্ডটি দেওয়া হবে৷

মার্কেল তার সফরে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের সঙ্গে উইন্ডসোর প্রাসাদে দেখা করেছেন৷

-রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের বড় অভাব কাজের লোক

জাতিসংঘের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। কিন্তু সুখী দেশ এবার বড় সমস্যার মুখে পড়েছে।

ফিনল্যান্ডের শ্রমিকদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। দেশের এই বয়স্ক শ্রমিকরা বেশিদিন কাজ করতে পারবেন না। তাই ফিনল্যান্ড সরকার বিদেশ থেকে অভিবাসী শ্রমিক চায়। সমস্যা হলো, সরকার চাইলেই বিদেশিদের যে সবসময় দু-হাত বাড়িয়ে ফিনল্যান্ডে স্বাগত জানানো হয়, তা নয়। সুখী দেশের এটাই বড় সমস্যা।

২০৩০ সালে দেশের বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৭ শতাংশ। সরকার চাইছে, অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়িয়ে বছরে ২০ থেকে ৩০ হাজার করতে। না হলে জনসেবার কাজে অসুবিধা হবে।
চার বছর আগে ফিনল্যান্ড সরকার ‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ কর্মসূচি নিয়েছে। অর্থ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্বে। তাদের বক্তব্য, ফিনল্যান্ডের জন্য আরো দক্ষ শ্রমিক দরকার। সেটা পেতে গেলে অভিবাসীদের উপরই ভরসা করতে হবে। মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ফিনল্যান্ডে কাজ করতে পারেন এমন মানুষের সংখ্যা কমছে। এর সংখ্যাবৃদ্ধি পুরোপুরি অভিবাসীদের উপর নির্ভর করছে। অভিবাসীরা না এলে শ্রমিকদের সরবরাহ বজায় থাকবে না। এর প্রভাব ফিনল্যান্ডের অর্থনীতিতে পড়বে।

বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ফিনল্যান্ডের জীবনযাপনের মান খুবই উঁচু। সেখানে স্বাধীনতা, লিঙ্গসাম্য আছে, দুর্নীতি প্রায় নেই, অপরাধ ও দূষণও কম। ফিনল্যান্ড জিনিসের দাম, প্রবল ঠান্ডা ও জটিল ভাষার জন্য পরিচিত। সেই সঙ্গে ফিনল্যান্ডের মানুষ বিদেশের কর্মীদের নিয়োগ করতে চান না।

এতদিন ফিনল্যান্ডের কোম্পানিগুলি বাইরের মানুষদের নিয়োগে উৎসাহ দেখায়নি। তাদের সেই মনোভাব এখনো যায়নি। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাদের মনোভাব বদলাতে হচ্ছে। মন্ত্রকের ওয়েবসাইট বলছে, ট্যালেন্ট বুস্ট প্রোগ্রাম ফিনল্যান্ডের লেবার মার্কেটকে খুলে দেয়া নিয়ে বিতর্ককে জোরদার করেছে। কিন্তু কাজের জায়গায় কর্তৃপক্ষের মনোভাব, বিভেদ, বৈচিত্রহীনতার জন্য বিদেশি শ্রমিকরা ফিনল্যান্ডে আসতে উৎসাহ বোধ করে না।
-এএফপি

উইঘুর ইস্যুতে ফরাসি তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে চায় ইউনিক্লো

টোকিও ভিত্তিক খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লো ফ্রান্স জানিয়েছে, চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করার দায়ে তারাসহ আরও তিনটি ফ্যাশন খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটির তদন্তে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।

সম্প্রতি ফরাসি মিডিয়াগুলো রিপোর্ট করেছে যে, ইউনিক্লো ফ্রান্স, জারা অপারেটর স্প্যানিশ ইন্ডাইটেক্স, স্কেচার্স ইউএসএ ইনক ও ফ্রান্সের এসএমসিপি এই চারটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া জিনজিয়াংয়ের মুসলিম উইঘুর সংখ্যালঘুদের বাধ্যতামূলক শ্রমের সঙ্গে জড়িত। এরপরই এমন বিবৃতি এলো। খবর প্রকাশ করেছে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ইউনিক্লো ফ্রান্স বলছে, তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে জোর করে কোনো শ্রম নেই। আর সেটি প্রমাণ করার জন্য অবহিত করলেই ফরাসি কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করা হবে।

এর আগে গত এপ্রিলে একটি মানবাধিকার সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই চার কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। এরপরই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

জীবন যার,সুস্থ থাকার দায়িত্বও তার

নিজের দায়িত্ব নিজের। মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তাও এ বার নিজেকেই বুঝতে হবে। এমনই বক্তব্য ব্রিটিশ সরকারের। গত মাসে লকডাউন সম্পূর্ণ ভাবে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডেল্টা স্ট্রেনের প্রকোপে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। এ বারে শোনা যাচ্ছে, আগামী ১৯ জুলাই লকডাউন তুলে দেওয়া হবে। করোনা-বিধিও আর সে ভাবে রাখা হবে না। মাস্ক পরাও আর বাধ্যতামূলক থাকবে না। ‘ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ’ হিসেবে দেখা হবে বিষয়টিকে।

আবাসন মন্ত্রী রবার্ট জেনরিক জানিয়েছেন, ১৯ জুলাই সম্পূর্ণ ভাবে লকডাউন তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এ বারে সাধারণ মানুষের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয়তা বুঝে মাস্ক পরার দায়িত্ব মানুষকেই নিতে হবে।

ব্রিটিশ দৈনিকগুলোতে আগেই এই ইঙ্গিত মিলেছিল। সেখানে লেখা হয়েছিল, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিধি ও অন্যান্য করোনা-বিধি তুলে নেওয়ার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জেনরিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ব্যাপারটা এ রকম-টিকাকরণের সাফল্যে বিধিনিষেধ লঘু করা হচ্ছে। আমরা পুরনো জীবনে ফিরতে পারছি। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে-আমরা একটা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করা আমাদের শিখতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রত্যেককে নিজের দায়িত্ব নিতে হবে।’’

জেনরিক আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন খুব শীঘ্রই সবটা জানাবেন। তবে সব সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে সরকারের হাতে আসা কোভিড-তথ্যের উপরে। প্রয়োজনের বেশি কিছু করতে হবে না কাউকে। সরকার কিছু বলে দেবে না, কী করতে হবে, না হবে। নিজেকেই বিচার করতে হবে। নিজের দায়িত্ব নিতে হবে।’’

জার্মানি, ইটালি-সহ ইউরোপের একাধিক দেশ আগেই মাস্ক পরার বিধি তুলে দিয়েছে। এর মধ্যে ইউরো চলছে। গত মাসে ফরাসি ওপেন হয়েছে। এখন উইম্বল্ডন শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবারই সতর্ক করছে, নতুন ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে যে কোনও মুহূর্তে। এমনিতেই সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ স্পষ্ট। স্পেনে ৮০% সংক্রমণ বেড়েছে। ৭১% সংক্রমণ বেড়েছে ব্রিটেনে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিধিনিষেধ লঘু করতে চাইছে একাধিক দেশ। টিকাকরণের জোরেই তাদের এই ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে ব্রিটেন।

কিছু দিন আগেই আমেরিকা সরকারের মুখে এই কথা শোনা গিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘‘কোভিড টিকার দু’টো ডোজ় নেওয়া থাকলে ভয় নেই।’’ সেই যুক্তিতে গতকাল তারা স্বাধীনতা দিবসে ‘করোনা-মুক্তি’ উদযাপন করেছে। হোয়াইট হাউসে হয়েছে বিশেষ পার্টি আর ন্যাশনাল মলে বাজির উৎসব।জমায়েত হয়েছিল হাজারখানেক মানুষ।

ও দিকে, রাশিয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে ফের। এই নিয়ে টানা পাঁচ দিন মৃত্যুতে রেকর্ড গড়ল রাশিয়া। ডেল্টা স্ট্রেনের জেরেই এত মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল হয়েছে। স্পেন বনাম সুইজ়ারল্যান্ড। তার পরেই কয়েকশো সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

ইন্দোনেশিয়া শনিবার রেকর্ড গড়েছে। এক দিনে ২৭,৯১৩ জন সংক্রমিত। ইরানের পরিস্থিতি বেশ খারাপ। প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি জানান, দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট ছড়িয়েছে। আশঙ্কা, শীঘ্রই পঞ্চম ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে ইরানে।

এশীয়দের নিয়ে গ্রিজমান, ডেম্বেলের হাসাহাসি

ফ্রান্স ও বার্সেলোনার দুই খেলোয়াড় গ্রিজমান ও ডেম্বেলের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ দুই ফুটবলারের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে৷

ভিডিওতে গ্রিজমানকে দেখা গেছে৷ আর ডেম্বেলে এটি রেকর্ড করেছেন বলে জানা গেছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এশীয় চেহারার কয়েক ব্যক্তি একটি টিভি মেরামতের চেষ্টা করছেন৷ সেই ঘটনার ভিডিও করার সময় ডেম্বেলে ‘এসব কুৎসিত চেহারার লোকজন’ বলে মন্তব্য করেন৷ এরপর তাদের ভাষা নিয়েও ব্যঙ্গ করেন৷ ডেম্বেলের এই কথা শুনে গ্রিজমানকে হাসতে দেখা গেছে৷

ভিডিওটি ঠিক কবে ধারণ করা তা জানা যায়নি৷ তবে এটি দুই বছরেরও পুরনো হতে পারে৷ ভিডিওটি একটি হোটেল রুমে রেকর্ড করা৷ গ্রিজমান ও ডেম্বেলে যেন ভিডিও গেম খেলতে পারেন সেজন্য টিভিটি মেরামত করা হচ্ছিল৷

এই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে #স্টপএশিয়ানহেট হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ অনেকে এই ঘটনা নিয়ে ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন থেকে একটি বিবৃতি আশা করছেন৷ সংশ্লিষ্ট ফুটবলারদের শাস্তি দেওয়ারও দাবি উঠেছে৷

টাইব্রেকারে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স৷ এরপর এমবাপে, রাবিয়ো, পগবা ও গ্রিজমানকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ বিবাদের বিভিন্ন খবর ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে৷

প্রেমের সমাধি; কেনেডি ব্রাদার্স – মেরিলিন মনরো

হলিউডের সেক্সবোম মেরিলিন মনরো। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে হলিউডে যৌনতা ছড়ানোর বড় মাধ্যম ছিলেন তিনি। তার উদ্দামতা, খোলামেলা জীবনাচার অসংখ্য পুরুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তাকে পাওয়ার জন্য যেন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। আর সেই রমরমা বাজারে মনরোও অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়েন। প্লেবয় ম্যানসনে তার রীতিমতো যাতায়াত ছিল। শারীরিক সম্পর্ক ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ভাইদের সঙ্গে। অবাধ মেলামেশা আর উদ্দাম জীবনাচার তাকে রাতারাতি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি এনে দেয়।

তিনি আসক্ত হয়ে পড়েন নেশায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বেসবল তারকা জো ডিম্যাগিও এবং নাট্যসংলাপ রচয়িতা আর্থার মিলারকে বিয়ে করেন। এই দুটি বিয়েই বেশি সমালোচিত হয় এবং দুটিই ভেঙে যায়। ১৯৬২ সালের ৪ঠা আগস্ট লস অ্যানজেলেসে নিজের বাসায় তিনি অতিরিক্ত নেশা গ্রহণ করার কারণে মারা যান। কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে নানা তত্ত্ব প্রচলিত আছে। কেউ বলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এবার লস অ্যানজেলেসের পুলিশ বিভাগের সাবেক এক গোয়েন্দাকর্মী বলেছেন, মেরিলিন মনরোকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই ববি কেনেডি। তিনি মনরোকে পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে দিয়েছিলেন। স্পর্শকাতর এই তথ্য দিয়ে নতুন একটি বই লিখেছেন সাবেক গোয়েন্দা মাইক রোথমিলার। তিনি প্রমাণ দিয়েছেন যে, ববি কেনেডি হত্যা করেছিলেন স্বর্ণকেশী সেক্সবোম মেরিলিন মনরোকে। এই হত্যার কাহিনী লস অ্যানজেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আর্কাইভে ৬ দশক ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ।

এতে আরো বলা হয়েছে, মাইক রোথমিলার লস অ্যানজেলেস পুলিশ বাহিনীর অর্গানাইজড ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ডিভিশনে কাজ করেছেন ৬ বছর। এ সময়েই তিনি মনরোকে হত্যার অন্ধকারময় গোপন তথ্য উদ্ধার করেছেন। এ নিয়ে তিনি একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, হিউ হেফনারের প্লেবয় ম্যানশনে তর্কাতর্কি হয়েছিল। তার ফলে ১৯৬২ সালের আগস্টে ক্যালিফোর্নিয়ায় মেরিলিন মনরোর বাসভবনে তার ওপর বিষ প্রয়োগ করেছিলেন বব কেনেডি। ওই সময় তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল। এটিই সেখানে আইন বিষয়ক সর্বোচ্চ পদ।

মাইক রোথমিলার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং তার ভাই রবার্টের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল মেরিলিন মনরোর। সেই কাহিনী যাতে কেউ জানতে না পারে, সেজন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। মাইক রোথম্যান এসব কথা লিখেছেন তার ‘বোম্বশেল: দ্য নাইট ববি কেনেডি কিলড মেরিলিন মনরো’ বইতে। এই বইটি ৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, কয়েক দশক ধরে প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও রবার্ট কেনেডি লস অ্যানজেলেসে মেরিলিন মনরোর বাসায় গিয়েছিলেন। তার ও জ্যাক কেনেডির সঙ্গে মনরোর গোপন সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করে আসেন তিনি। এ সময় মেরিলিন মনরোর সঙ্গে তার রীতিমতো ফাইট হয়। এদিন বব কেনেডি মেরিলিন মনরোর বাসা তল্লাশি করেন তার ডায়রির সন্ধানে। এরপরই মনরোকে মাদক মেশানো পানীয় পান করান এবং তিনি তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর মনরো মারা যান।

এই অপরাধের কথা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল লস অ্যানজেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা। তারা দেখানোর চেষ্টা করেন যে, মেরিলিন মনরো আত্মহত্যা করেছেন। এ সময় মেরিলিন মনরোর ডায়রি নিয়ে নেয় লস অ্যানজেলেস পুলিশ। কেনেডি ভাইদের সঙ্গে তার গোপন সম্পর্কের যেসব অংশ ছিল তা ফটোকপি করে নেয়। মাইক রোথমিলার বলেন, তিনি ১৯৭৮ সালে প্রথম লস অ্যানজেলেস পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা শাখার আর্কাইভে মেরিলিন মনরোর মৃত্যু সম্পর্কিত গোপন পুলিশি নথি হাতে পান।

ওইসব ফাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইক রোথমিলার আবিষ্কার করেন মেরিলিন মনরোর ডায়রির কপি। সেখানে মনরো লিখেছেন কেনেডি ভাইদের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা নিয়ে এবং তাদের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের সময়কার বিভিন্ন কাহিনী। মাইক রোথমিলার বলেন, যখন আমি পুলিশের ওই ইউনিটে প্রবেশ করি, তখন আমার এসব নিয়ে কোনো ধারনা ছিল না। এ বিষয়টিতে জানতেন শুধু সেখানে যারা কাজ করেন, তারা এবং পুলিশ প্রধান। ১৯৩২ সাল থেকে গোয়েন্দারা হাজার হাজার, লাখ লাখ ফাইল একত্রিত করেছেন। তবে তারা এসব কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না। তারা যেসব রিপোর্ট করেছিলেন, তা হয়তো একটি প্যারাগ্রাফের না হয় হাজার পৃষ্ঠার। মাইক রোথমিলার বলেন, সেখানে আমি বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামগুলোর বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। মনে হলো, ব্যাপারটা অনেক মজার। এসব ব্যক্তির নাম কেন এসব ফাইলে? অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ফাইলে কেন একজন প্রেসিডেন্টের নাম? এই কৌতুহল থেকে আমি ওই রিপোর্টে হাত দিই। আমি শুধু সেগুলো পড়ে দেখা শুরু করি। সেখানে প্রেসিডেন্ট কেনেডি, এটর্নি জেনারেল ববি কেনেডি এবং তাদের ভাই এডওয়ার্ড কেনেডি সম্পর্কে ফাইল ছিল।