10.2 C
Düsseldorf

বড়োর বিড়ম্বনা

Must read

গোলজার হোসাইন খান
গোলজার হোসাইন খান
আমি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর একজন অবসরপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার।অতি সাধারণ মানুষ। কোন উচ্চাভিলাষ নেই। সাংসারিক বোধবুদ্ধি শূন্যের কোঠায়। হেরে যাওয়া মানুষের পাশে থাকি।এড়িয়ে চলি স্বার্থপরতা।বিনম্র শ্রদ্ধায় নত হই সৃষ্টিশীল-পরিশ্রমী মানুষের প্রতি আর ভালবাসি আমার পেশাকে।

কতোই বা বয়স।বড় জোর পাঁচ ছয়। বাড়ীতে আসা মেহমান আচমকা জিজ্ঞেস করলেন,’খোকা কোন ক্লাসে পড়?’
আমি নিরুত্তর। মা রক্ষা করলেন,’ও এখনও স্কুলে যায় না।’
তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন,’এত্তো বড় ধেড়ে ছেলে স্কুলে যায় না।’
সেই থেকে বড় হওয়ার অপমান সয়ে যায় অভিমানী মন।
পরদিন খানিকটা বোনের কোলে খানিকটা হেঁটে প্রথম স্কুলে গিয়ে আতংকে কবুতরের বাচ্চার মত থরথর করে কাঁপছিলাম।
বাড়িতে দৌড়ঝাঁপ করা দুরন্ত ছেলে স্কুলে এসে এতটা ছোট হয়ে যাবে তা কখনও ভাবিনি। স্কুলের মানুষগুলি এত পাষাণ কেন ? মার মুখটা মনে করে টপটপ করে জল পড়ছিল চোখ দিয়ে।
সময় যায়। একদিন খেয়াল করলাম স্যাররাও বেশ সমীহ করে কথা বলে। বুঝলাম অনেক বড় হয়ে গেছি। ক্লাস ফাইভ ।এরই মাঝে এক সহপাঠিনীর বিয়েও হয়ে গেল। যে সে কথা নয়।

তারপর হাই স্কুলে গিয়ে আবারও লো স্কেলে পদাবনতি। নাইন টেনের ছেলেমেয়েরা এমন অবজ্ঞা ভরে তাকায় যে মনে হয় আমি কোন বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া বিড়ালের বাচ্চা,পথ ভুলে এখানে এসে ম্যাও ম্যাও করছি।
দিন বদলায়। ঠোঁটের উপরের ভেতো পশম কালচে রং ধারণ করে জানান দেয়, বড় হয়ে গেছো। চোখের কোণে কেমন যেন রোমান্টিকতা ভর করে নাচানাচি করে কারো মুখ। ছোটরা সালাম দিয়ে পথ ছেড়ে দেয়। কত আবেগের বিদায় অনুষ্ঠানে ভাব নিয়ে বসেছিলাম।

কিন্তু কলেজে এসে আবারও কচি লাউ এর খাতায় নাম উঠে যায়। বড় ভাইদের ফুটফরমাশে বিড়ি সিগারেটও এনে দিতে হতো।
তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে এতটাই ছোট হয়ে গেলাম যে শেরেবাংলা হলকে দেখে মনে করেছিলাম, এটাই বিশ্ববিদ্যালয়। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে এত বিশাল হতে পারে তা ধারণাও করতে পারিনি। খেতাব জুটলো ‘ ফার্স্ট ইয়ারের পোলাপাইন’।হায় রে কপাল!

একদিন খেয়াল করলাম,বড় হতে হতে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। চাকরি-বাকরি ও জোটেনা মান ইজ্জতও থাকে না।বিয়ে টিয়ের কথা না-ই বা বললাম।
অবশেষে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়লো।সোনালী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে যোগদান করলাম। কিন্তু ছোটত্ব পিছু ছাড়লো না। আড়ালে আবডালে অনেকেই ফিসফিসিয়ে বলে পেটি অফিসার।

সময় বয়ে যায়। ধীরে ধীরে অনেক বড় হয়ে ৩৬ বছর পর নিয়মের বেড়াজালে বাতিল হয়ে গেলাম । খাঁচায় পোষা পরিত্যক্ত মুরগীর মত ব্যাংক বেচে দিল হাটে।
একটাই সান্ত্বনা। নতুন তকমা জুটলো,’ সিনিয়র সিটিজেন’।

আজ গিয়েছিলাম জীবনের প্রথম পেনশন তুলতে। বেশ ক’বছর আগে অবসরে যাওয়া এক বড় ভাই কটাক্ষ করে বললেন, ‘কালকের ছেলেছোকরা তারাও পেনশন নিতে আসছে’।

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো,
” নাদের আলী!আমি আর কত বড় হব!”

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট