হলিউডের সেক্সবোম মেরিলিন মনরো। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে হলিউডে যৌনতা ছড়ানোর বড় মাধ্যম ছিলেন তিনি। তার উদ্দামতা, খোলামেলা জীবনাচার অসংখ্য পুরুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তাকে পাওয়ার জন্য যেন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। আর সেই রমরমা বাজারে মনরোও অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়েন। প্লেবয় ম্যানসনে তার রীতিমতো যাতায়াত ছিল। শারীরিক সম্পর্ক ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ভাইদের সঙ্গে। অবাধ মেলামেশা আর উদ্দাম জীবনাচার তাকে রাতারাতি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি এনে দেয়।
তিনি আসক্ত হয়ে পড়েন নেশায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বেসবল তারকা জো ডিম্যাগিও এবং নাট্যসংলাপ রচয়িতা আর্থার মিলারকে বিয়ে করেন। এই দুটি বিয়েই বেশি সমালোচিত হয় এবং দুটিই ভেঙে যায়। ১৯৬২ সালের ৪ঠা আগস্ট লস অ্যানজেলেসে নিজের বাসায় তিনি অতিরিক্ত নেশা গ্রহণ করার কারণে মারা যান। কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে নানা তত্ত্ব প্রচলিত আছে। কেউ বলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এবার লস অ্যানজেলেসের পুলিশ বিভাগের সাবেক এক গোয়েন্দাকর্মী বলেছেন, মেরিলিন মনরোকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই ববি কেনেডি। তিনি মনরোকে পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে দিয়েছিলেন। স্পর্শকাতর এই তথ্য দিয়ে নতুন একটি বই লিখেছেন সাবেক গোয়েন্দা মাইক রোথমিলার। তিনি প্রমাণ দিয়েছেন যে, ববি কেনেডি হত্যা করেছিলেন স্বর্ণকেশী সেক্সবোম মেরিলিন মনরোকে। এই হত্যার কাহিনী লস অ্যানজেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আর্কাইভে ৬ দশক ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ।
এতে আরো বলা হয়েছে, মাইক রোথমিলার লস অ্যানজেলেস পুলিশ বাহিনীর অর্গানাইজড ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ডিভিশনে কাজ করেছেন ৬ বছর। এ সময়েই তিনি মনরোকে হত্যার অন্ধকারময় গোপন তথ্য উদ্ধার করেছেন। এ নিয়ে তিনি একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, হিউ হেফনারের প্লেবয় ম্যানশনে তর্কাতর্কি হয়েছিল। তার ফলে ১৯৬২ সালের আগস্টে ক্যালিফোর্নিয়ায় মেরিলিন মনরোর বাসভবনে তার ওপর বিষ প্রয়োগ করেছিলেন বব কেনেডি। ওই সময় তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল। এটিই সেখানে আইন বিষয়ক সর্বোচ্চ পদ।
মাইক রোথমিলার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং তার ভাই রবার্টের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল মেরিলিন মনরোর। সেই কাহিনী যাতে কেউ জানতে না পারে, সেজন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। মাইক রোথম্যান এসব কথা লিখেছেন তার ‘বোম্বশেল: দ্য নাইট ববি কেনেডি কিলড মেরিলিন মনরো’ বইতে। এই বইটি ৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কয়েক দশক ধরে প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও রবার্ট কেনেডি লস অ্যানজেলেসে মেরিলিন মনরোর বাসায় গিয়েছিলেন। তার ও জ্যাক কেনেডির সঙ্গে মনরোর গোপন সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করে আসেন তিনি। এ সময় মেরিলিন মনরোর সঙ্গে তার রীতিমতো ফাইট হয়। এদিন বব কেনেডি মেরিলিন মনরোর বাসা তল্লাশি করেন তার ডায়রির সন্ধানে। এরপরই মনরোকে মাদক মেশানো পানীয় পান করান এবং তিনি তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর মনরো মারা যান।
এই অপরাধের কথা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল লস অ্যানজেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা। তারা দেখানোর চেষ্টা করেন যে, মেরিলিন মনরো আত্মহত্যা করেছেন। এ সময় মেরিলিন মনরোর ডায়রি নিয়ে নেয় লস অ্যানজেলেস পুলিশ। কেনেডি ভাইদের সঙ্গে তার গোপন সম্পর্কের যেসব অংশ ছিল তা ফটোকপি করে নেয়। মাইক রোথমিলার বলেন, তিনি ১৯৭৮ সালে প্রথম লস অ্যানজেলেস পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা শাখার আর্কাইভে মেরিলিন মনরোর মৃত্যু সম্পর্কিত গোপন পুলিশি নথি হাতে পান।
ওইসব ফাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইক রোথমিলার আবিষ্কার করেন মেরিলিন মনরোর ডায়রির কপি। সেখানে মনরো লিখেছেন কেনেডি ভাইদের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা নিয়ে এবং তাদের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের সময়কার বিভিন্ন কাহিনী। মাইক রোথমিলার বলেন, যখন আমি পুলিশের ওই ইউনিটে প্রবেশ করি, তখন আমার এসব নিয়ে কোনো ধারনা ছিল না। এ বিষয়টিতে জানতেন শুধু সেখানে যারা কাজ করেন, তারা এবং পুলিশ প্রধান। ১৯৩২ সাল থেকে গোয়েন্দারা হাজার হাজার, লাখ লাখ ফাইল একত্রিত করেছেন। তবে তারা এসব কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না। তারা যেসব রিপোর্ট করেছিলেন, তা হয়তো একটি প্যারাগ্রাফের না হয় হাজার পৃষ্ঠার। মাইক রোথমিলার বলেন, সেখানে আমি বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামগুলোর বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। মনে হলো, ব্যাপারটা অনেক মজার। এসব ব্যক্তির নাম কেন এসব ফাইলে? অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের ফাইলে কেন একজন প্রেসিডেন্টের নাম? এই কৌতুহল থেকে আমি ওই রিপোর্টে হাত দিই। আমি শুধু সেগুলো পড়ে দেখা শুরু করি। সেখানে প্রেসিডেন্ট কেনেডি, এটর্নি জেনারেল ববি কেনেডি এবং তাদের ভাই এডওয়ার্ড কেনেডি সম্পর্কে ফাইল ছিল।