বিশ্বের সবদেশেই কমবেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে তাদের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইম্যান নারীদের সুরক্ষায় সহায়তার দশটি উপায়ের কথা জানিয়েছে৷
১। ভুক্তভোগীর কথা শুনুন।
একজন নারী সহিংসতার শিকার হওয়ার পর মুখ খোলার অর্থ হচ্ছে, তিনি সেই সহিংস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছেন৷ তখন সমাজের সবার উচিত তিনি যাতে তার কথা বলতে পারেন, সেরকম নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তার কথা শোনা৷ এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারীর পোশাক, যৌন পরিচয় বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করার চেষ্টার বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে৷
২। পরবর্তী প্রজন্মকে শেখান।
শত জনমের পাপের প্রায়শ্চিত্ত এক জনমে করা সম্ভব না।তাই আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে যে উদাহরণগুলো তৈরি করবো সেগুলো ভবিষ্যতে লিঙ্গ, সম্মান এবং মানবাধিকার বিষয়ে তাদের মনোভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে৷ যেসব প্রচলিত ধ্যানধারণায় ভুল আছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করতে হবে৷ তাদের মধ্যে যে যেমন, তাকে সেভাবে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ পাশাপাশি পৃথিবী সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের মতামতও শুনতে হবে৷
৩। ভুক্তভোগীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করুন।
সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি যাতে দ্রুত সহায়তা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্রুত সহায়তা বলতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, হটলাইন, পরামর্শের মতো বিষয়গুলো, যাতে ভুক্তভোগীর নাগালের মধ্যে থাকে৷
৪। সম্মতির বিষয়টি বুঝতে হবে।
একজন মানুষ মুক্তভাবে এবং উৎসাহের সাথে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ যৌনতায় একজন নারী সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে৷ ‘‘সে এটা চেয়েছিল’’ বা ‘‘ছেলেরা এমনই’’ এ ধরনের কথাবার্তা বলে একজন নারীর সম্মতি প্রদানের বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ তৈরি করা যাবে না৷
৫। সহিংসতার শিকারদের লক্ষণগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
নিগ্রহের নানা রূপ আছে এবং নির্যাতনের কারণে ভুক্তভোগীর উপর মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে পারে৷ আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার কোনো বন্ধু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাহলে তাকে সহায়তার চেষ্টা করুন৷ আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে নিপীড়ন করছে, তাহলে তা প্রতিরোধে সহায়তা নিন৷
৬। আলোচনা করুন।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা দশকের পর দশক ধরে ঘটছে৷ এই চর্চা বিস্তৃত হলেও অবধারিত নয়, যদি আমরা চুপ না থাকি৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংতার বিপরীতে শক্তভাবে অবস্থান নিন৷
৭। প্রতিবাদ করুন।
ধর্ষণ সংস্কৃতি হচ্ছে এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে যৌন সহিংসতাকে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যুগ যুগ ধরে চলে আসা লিঙ্গ-বৈষম্য আর লিঙ্গ ও যৌনতা বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণার কারণে বিষয়টি এমন হয়েছে৷ ধর্ষণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে সবার উদ্যোগী হতে হবে৷
৮। নারী বিষয়ক সংগঠনগুলোকে সহায়তা করুন
নারী অধিকার এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা করতে পারেন৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এই বিষয়ক স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে৷
৯। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন।
কর্মক্ষেত্রে বা জনপরিসরে যৌন নিপীড়নসহ সহিংসতা নানাভাবে ঘটতে পারে৷ আপনার সামনে আপত্তিকর কিছু ঘটলে প্রতিবাদ করুন৷ এভাবে সবার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন আপনি৷
১০। পরিসংখ্যান দেখুন এবং আরো দাবি করুন
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হলে বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে৷ আর এজন্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানলে সে অনুযায়ী উদ্যোগী হওয়া সম্ভব
ইউএন উইম্যান