আজকের মানুষ বা হোমো সেপিয়েন্সের পূর্বপুরুষ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে নিয়ানডারথালদের। চীনে এক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে যা দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, নিয়ানডারথাল নয় হোমো লোঙ্গি বা ‘ড্রাগন ম্যান’ হল মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ।
চীনের একেবারে উত্তর দিকে অবস্থিত হারবিন শহরে ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল এই খুলিটি। কিন্তু জাপানি সেনার চোখের আড়ালে রাখতে লুকোনো ছিল ৮৫ বছর ধরে। পরে ফের খনন করে ২০১৮ সালে খুলিটি তুলে দেওয়া হয় হেবেই জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি কিয়াংয়ের হাতে। গবেষণায় সহযোগী লন্ডনের ন্যাচরাল হিস্টরি মিউজিয়ামের খ্রিস স্টিঙ্গার বলছেন, ‘আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, নিয়ানডারথালদের থেকে নতুন হারবিন প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্সের অনেক কাছাকাছি। একে যদি আলাদা স্পিসিস হিসেবে ধরা হয় তবে আমাদের সিস্টার স্পিসিস।’
যে খুলিটি নিয়ে এত হইচই তা ১৪৬০০০ বছর আগের। মনে করা হচ্ছে প্লেইস্টোসিন পর্বের মাঝামাঝি সময় এরা পৃথিবীতে ছিল। খুলিটির আকার বর্তমান সময়ের মানুষের ঘিলু ধরে রাখার মতো বড়। তবে চোখের গর্ত বেশ বড়, ভ্রূ-এর খাঁজ বেশ চওড়া, মুখগহ্বর বড় এবং দাঁত একটু বেশিই বড়। প্রাগৈতিহাসিক মানুষের সমস্ত লক্ষণ থাকলেও এর কিছু বৈশিষ্ট্য হোমো গ্রুপের অন্যান্যদের থেকে আলাদা করেছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন আবিষ্কৃত এই খুলিটি এক ৫০ বছর বয়সি পুরুষের, যে বন্যাপ্লাবিত সমতল বনভূমিতে বাস করত। হারবিনের শীতকালের কথা মনে করে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা নিয়ানডারথালদের থেকেও বেশি শীত সহ্য করার ক্ষমতা ছিল হোমো লোঙ্গিদের। খুলির আকার দেখে পুরো শরীরের গড়ন বুঝে তাঁরা বলছেন, কঠিন থেকে কঠিন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারত এই স্পিসিস। খ্রিস স্টিঙ্গার বলছেন, ‘এই আবিষ্কার পূর্ব এশিয়ায় মানুষের এক নতুন বংশের কথা জানাল। মানুষের বিবর্তনে এই অঞ্চল কতটা গুরুত্বপূর্ণ বোঝাল তাও।’