দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এই বছরের শুরুর দিকে দুর্নীতির তদন্তে হাজির না হওয়ায় আদালত অবমাননার দায়ে তাঁকে মঙ্গলবার এ দণ্ড দেওয়া হয়। খবর বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানের।
আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে জুমাকে নিজ থেকে পুলিশের কাছে ধরা দিতে হবে। যদি তিনি তা না করেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শিশি খামপেপে বলেন, সাংবিধানিক আদালত কিছুই করতে পারেন না। তবে উপসংহার টানতে পারে। জুমা আদালত অবমাননার দায়ে অপরাধী।
ক্ষমতায় থাকাকালে জুমার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছিলেন দেশটির উপপ্রধান বিচারপতি রেমন্ড জোনডো। গত ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের জন্য তলব করা হলে হাজির হননি জুমা। তিনি দাবি করে আসছিলেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে জোনডো তাঁর বিরুদ্ধে এই তদন্ত করছেন। এই আদালত অবমাননার দায়েই তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে তাঁর প্রায় ৯ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। জুমার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে জুমার আশকারাতেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘গুপ্ত পরিবার’ নামে একটি সুপরিচিত ব্যবসায়ী পরিবার রাজনীতিতে বেপরোয়া হস্তক্ষেপ করেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের তিন ভাই অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত ও রাজেশ ওরফে টনি গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা সবার সামনে আসে ২০১৩ সালে।
তবে জ্যাকব জুমা বরাবরই বলে আসছেন, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এক দশক ধরেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছিল। গুপ্ত পরিবারের হাতে তিনি দেশ তুলে দিয়েছেন, এমন সব অভিযোগই মিথ্যা। তাঁর একটি ভাষ্য ছিল, ‘আমি কি জোহানেসবার্গকে নিলামে তুলেছি?’
জ্যাকব জুমা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক কখনো অস্বীকার করেননি। তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইদের এ পরিবারের সঙ্গে জুমা পরিবারের সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে, একসময় দুটি পরিবারকে একসঙ্গে ‘জুপ্তা’ বলা হতো।
গুপ্ত পরিবারের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি জুমার শাসনামলে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ পেত। এ ক্ষেত্রে তারা বলা যায়, একচ্ছত্র ছিল। এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে জ্যাকব জুমার ছেলে দুদুজানেকেও নিয়োগ দিয়েছিল তারা। জুমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই পরিবারের সঙ্গে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন যে অনেক সময় তারাই বলে দিত রাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে হবে। আর এই নির্দেশনা অমান্য করলে সরকারি কর্মকর্তাদের পদচ্যুতিও ঘটত।