8.9 C
Düsseldorf

জোট-মহাজোটের গোলকধাঁধায় বুন্দেসতাগ

Must read

বিপ্লব শাহরিয়ার
বিপ্লব শাহরিয়ার
জার্মানপ্রবাসী সাংবাদিক

জার্মানিতে জোট সরকার গঠন সাধারণ একটি বিষয়। ইতিহাসে মাত্র একবারই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে একক কোনো দলের সরকার গঠনের নজির আছে। এবারো জোট সরকারের বিকল্প নেই জার্মান বুন্দেসতাগে। তবে পরিবর্তন ঘটতে পারে চালকের আসনে। ১৬ বছরের মের্কেল-অধ্যায়ের সমাপ্তিতে পরিবর্তনের পক্ষে জার্মান জনগণ। নির্বাচনপূর্ব জনমত জরিপগুলো সে আভাসই দিচ্ছে। যাতে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে আছে গ্রিন পার্টি। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এসপিডি’র শরিক হিসেবে ১৯৯৮ সালে একবার কেন্দ্রক্ষমতায় গিয়েছিলো গ্রিনরা। এরপরের দেড় দশক শুধুই বিরোধী শিবিরে অবস্থান। কিন্তু আগামী সেপ্টম্বরের নির্বাচনে গ্রিনদের বড় ধরনের উত্থানের আভাস মিলছে। একেবারে প্রধান শরিক হিসেবেই তারা গঠন করতে পারে জোট সরকার। কিন্তু কার সাথে জোট হবে গ্রিনদের?

গ্রিন পার্টি- সিডিইিউ/ সিএসইউ জোট কি সম্ভব?
রাজনৈতিক অঙ্ক কষলে ইউনিয়নের (সিডিইউ/ সিএসইউ( সাথে সম্ভাব্য একটি জোট হতে পারে গ্রিন পার্টির। প্রশ্ন হচ্ছে, জোট বাঁধলে ইউনিয়ন কি নিজেকে ছোট শরিক হিসেবে মেনে নিতে পারবে? কারণ জনমত জরিপের প্রতিফলন যদি ভোটের ফলাফলেও লক্ষ্য করা যায় তবে জোটের বড় শরিক হবে গ্রিন পার্টি। বাডেন-ভুর্টেনবার্গ রাজ্যের অভিজ্ঞতা কিন্তু ইউনিয়নের জন্য খুব একটা সুখের না। রাজ্যটিতে গ্রিন পার্টির বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভাব, আর জোটে ইউনিয়নের ছোট শরিকের ভূমিকা তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে যথেষ্টভাবে। বুন্দেসতাগেও এমনটি ঘটলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যেতে পারে ইউনিয়ন।

‘ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন’
দ্বিতীয় বিকল্পটি হতে পারে সম্ভাব্য একটি ‘ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন’। অর্থাৎ গ্রিন পার্টির সঙ্গে এসপিডি এবং ব্যবসায়বান্ধব ফ্রি ডেমোক্র্যাটস- এফডিপি’র জোট। গ্রিন পার্টির রং সবুজ, ঐতিহ্যগতভাবেই এসপিডি লাল রং-এ চিহ্নিত, আর এফডিপি হলুদ। এ কারণেই এই তিন দলের সম্ভাব্য জোটকে বলা হচ্ছে ‘ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন’। আন্নালেনা বায়েরবককে এ ধরনের জোট সরকারের চ্যান্সেলর হতে গেলে গ্রিন পার্টিকে শুধু এসপিডিকে হারাতে হবে। যা সিডিইউকে হারানোর তুলনায় অনেক সহজ। এই মুহুর্তে রাইনল্যান্ড প্যালাটিনেট রাজ্যে কিন্তু ‘ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন’ সরকার বিদ্যমান। বাডেন-ভুর্টেনবার্গেও এমন একটি জোট চেয়েছিলেন গ্রিন সদস্যরা। যদিও গেলো রাজ্য নির্বাচনে গ্রিন-সিডিইউ জোটই রয়ে গেছে।

এ জাতীয় জোট সরকারের প্রাথমিক কাজটি কি হতে পারে? আর যাই হোক, সামাজিক সাম্য নিশ্চিত হবে না। কারণ এসপিডি এবং এফডিপি’র মধ্যে আদর্শিক ফারাক বিস্তর। আর জলবায়ু ইস্যুতেতো তিন দলই ভিন্ন অবস্থানে। পরিবেশবাদী দল গ্রিন পার্টি, এসপিডি শিল্পপন্থী আর এফডিপি ব্যবসায়পন্থী। তবে একটা ক্ষেত্রে তিনটি দলই গুরুত্ব দিতে পারে। সেটি হলো প্রযুক্তিগত অবকাঠামো। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ‘ডিজিটালাইজেশন’। মের্কেলের শাসনামলে এই খাতটিতে বেশ পিছিয়ে জার্মানি।

প্রশ্ন রয়েছে এখানেও। বাইরে থেকে যতটা মনে হয়, গ্রিন পার্টি কি আসলেই ততটা সতেজ এবং আধুনিক? এই দলটিতে প্রচুর সংশয়বাদী রয়েছেন। যারা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং উৎকর্ষকে ‘সুযোগ’ নয় বরং ‘ঝুঁকি’ হিসেবেই মনে করেন। ঠিক এ কারণেই এফডিপি নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার গ্রিন পার্টি এবং বায়েরবকের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে বেশ সতর্ক। গ্রিন পার্টি নিজেদের চ্যান্সেলরপ্রার্থী ঘোষণার পর লিন্ডনার মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বায়েরবকের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়’ করার অপেক্ষায় আছেন। চ্যান্সেলর হিসেবে বায়েরবক উপযুক্ত কিনা তা মূল্যায়ন করার আগেই লিন্ডনার বলেন, বায়েরবককে ঘোষণা দিতে হবে যে তিনি উগ্র-বামপন্থীদের সমর্থন গ্রহণ করবেন কিনা।

‘গ্রিন-এসপিডি-বাম’ জোটের আদৌ সম্ভাবন আছে কি?
আরেকটি জোটের সম্ভাবনাও হয়তো আছে। এসপিডি চেয়ারম্যান এপ্রিলের গোড়া থেকে বারবারই বলে আসছেন যে, ‘এসপিডি-গ্রিন-বাম’ জোট নিয়ে সংশয়ের কিছু নেই। সংশয়ের প্রসঙ্গ কেন আসছে? বাম দলের মধ্যে সাবেক পূর্ব জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির বীজ রয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। এ কারণেই তাদের সাথে কাজ করতে সংশয়ী অনেকে।

গ্রিন পার্টির কিছু সদস্য আছেন যারা এসপিডি এবং বাম দলের সাথে জোট বাঁধতে আগ্রহী। জার্মান রাজনীতিতে এরা ‘সবুজ-লাল-লাল’ হিসেবে পরিচিত। গ্রিন পার্টির বুন্দেসতাগ সদস্য ক্রিস্টিয়ান কিন্ডলার স্টষ্টই বলে দিয়েছেন, “নীতিগত বিষয়ে ইউনিউন ও এফডিপির চাইতে এসডিপি ও বাম দলের সাথে আমাদের মিল অনেক বেশি।”

আবার গ্রিন পার্টিরই একটি পক্ষ বামদলের পার্লামেন্ট সদস্যদের বিশ্বাস করতে পারেন না। এই পক্ষটির মতে, বুন্দেসতাগে বাম দলের সদস্যদের বেশিরভাগই মৌলবাদী। পার্লামেন্টে সংবেদনশীল কোনো বিষয়ের ভোটাভুটিতে তাই বামদের উপর তারা ভরসা রাখতে পারছেন না।

একমাত্র সামাজিক, পরিবেশগত এবং কর ইস্যুতে পারষ্পরিক সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখছেন বাম দলের জ্যৈষ্ঠ বুন্দেসতাগ সদস্য জাহরা ভাগেনক্নেশট। তার মতে, এ ধরনের জোট গঠনের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা পররাষ্ট্র নীতি। জার্মান সেনাবাহিনীর পুনরস্ত্রসজ্জা, সামরিক অভিযানের ক্ষেত্র বাড়ানো এবং রাশিয়ার সাথে দ্বন্দ্ব- বিশেষত এই তিন ইস্যুতে বায়েরবকের নীতির উপরই নির্ভর করবে সম্ভাব্য একটি ‘ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন’।

নাকি আবারো সিডিইউ-এসপিডি ‘মহাজোট’?
আরেকটি মহাজোট গঠনের সম্ভাবনাও কিন্তু আছে। মের্কেলযুগে রক্ষণশীল এবং এসপিডি’র এই জোটটিতে জার্মানরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় যে বিষয়গুলো ঘুরেফিরে আসছে, সেগুলো হলো, বর্তমান জোট কি সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে? তারা কি ব্যতিক্রম কিছু করতে পেরেছে? দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সিডিইউ/ সিএসইউ এবং এসপিডি জোটের আদতেই তেমন কিছুই আর করার নেই।
২০১৭ সালের নির্বাচনেও কিন্তু একইধরনের আলোচনা লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনের রাতে বেশিরভাগ মানুষই মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন যে, সিডিইউ/ সিএসইউ, এফডিপি এবং গ্রিন পার্টি জোট গঠন করতে যাচ্ছে। ক্ষমতার অংশীদারি ছেড়ে বিরোধী আসনে বসতে এসপিডিও যেন প্রস্তুত হয়েই ছিলো। কিন্তু শেষ মূহুর্তে এফডিপি এবং গ্রিনদের সাথে ইউনিয়নের আলোচনা ভেস্তে যায়। ফলে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সাথে আরেকটি মহাজোট গঠন করে ইউনিয়ন।

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট