সেনাবাহিনীর অস্ত্র চুরি করে সিরীয় শরণার্থী পরিচয়ে জার্মান রাজনীতিবিদদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে দেশটির সেনাসদস্য ফ্রাঙ্কোর।
সেনাবাহিনীর অস্ত্র চুরি করে সিরীয় শরণার্থী পরিচয়ে জার্মান রাজনীতিবিদদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে দেশটির সেনাসদস্য ফ্রাঙ্কোর।
চাকরি করতেন জার্মানির সেনাবাহিনীতে। কিন্তু পরিকল্পনা আঁটেন শরণার্থী সেজে মধ্যডানপন্থী রাজনীতিবিদদের ওপর হামলার মাধ্যমে জার্মানে শরণার্থীবিরোধী ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলা। সেই মোতাবেক তিনি সেনাবাহিনীর অস্ত্র চুরি করেছিলেন। এরপর সিরীয় শরণার্থী হিসেবে নিজের আলাদা পরিচয়পত্র বানিয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগেই আটক হন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার কট্টর ডানপন্থী তরুণ ওই জার্মান সেনার বিচার শুরু হয়েছে।
জার্মান প্রসিকিউটরদের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ওই সেনাসদস্যের নাম ফ্রাঙ্কো। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফ্রাঙ্কো সিরীয় শরণার্থী হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। ফ্রাঙ্কোর সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যে ছিলেন জার্মানির বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক বিচারমন্ত্রী হেইকো মাস, পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লোদিয়া রথ প্রমুখ।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুলিভরা অস্ত্রসহ ফ্রাঙ্কোকে আটক করা হয়েছিল। এরপর চলেছে দীর্ঘ তদন্ত। তদন্তে বলা হয়েছে, ফ্রাঙ্কো ২০১৬ সালেই নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে সিরীয় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চেয়ে নাম নিবন্ধনের আবেদন করেছিলেন। এর আগের বছর জার্মানিতে সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে প্রায় ৯ লাখ শরণার্থী আশ্রয় পায়।
আবেদনে তিনি নিজের নাম ব্যবহার করেছিলেন ডেভিড বেনজামিন। বলেছিলেন, তিনি জার্মান ভাষা জানেন না। তবে ফরাসিতে কথা বলতে পারেন। শরণার্থী হিসেবে বসবাসের অনুমতি পেতে সরকারি শুনানিতে তিনি দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলেছিলেন।
এর জেরে তিনি শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে সাময়িক বসবাসের অনুমতি পান। অথচ ওই সময় তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর ফ্রাঙ্কো–জার্মান ব্রিগেডে কর্মরত ছিলেন।
শরণার্থী সেজে রাজনীতিবিদদের ওপর হামলার এ পরিকল্পনাকে ‘ভয়াবহ অবস্থা’ বলে মন্তব্য করেছেন ওই সময়ের জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ইউরোপীয় কমিশনের বর্তমান প্রধান উরসুলা ভন দের লিয়েন। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রের ওপর থাকা আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে আমরা এর সঙ্গে সিরিয়া থেকে আসা একজন শরণার্থীর আঙুলের ছাপের মিল খুঁজে পাই। এভাবেই ধরা পড়ে যান ফ্রাঙ্কো।’
আটকের পর ফ্রাঙ্কো যেই জার্মান সেনাঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন, সেখান থেকে নাৎসিদের স্বস্তিকাচিহ্ন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার জার্মান সেনাপ্রতীক উদ্ধার করা হয়। যদিও জার্মান সেনা ব্যারাকে নাৎসিদের যেকোনো চিহ্ন বা প্রতীকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জার্মান সরকার।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফ্রাঙ্কো। ফ্রাঙ্কফুটে আদালতে হাজিরের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে আপনাদের বলতে চাই, আমি মোটেও উগ্র ডানপন্থী নই। অন্যের ক্ষতি করার কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না।’