চ্যান্সেলর ওটো ফন বিসমার্কের আমলে নামিবিয়া, ক্যামেরুন, টোগো, তানজানিয়া এবং কেনিয়ার কিছু অংশে ছিল জার্মানির উপনিবেশ৷ সম্রাট দ্বিতীয় ভিলহেল্ম ১৮৮৮ সালে দায়িত্ব নিয়ে এই কলোনি আরও বিস্তারের উদ্যোগ নেন৷
ঐ উদ্যোগের ফলে নিউগিনির উত্তরাঞ্চল, বিসমার্ক আর্কিপেলাগো ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং সামোয়া ও চীনের সিংতাওতে তা বিস্তার লাভ করে৷ ১৮৯০ সালে ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় জার্মান সম্রাট রুয়ান্ডা এবং বুরুন্ডিসহ পূর্ব আফ্রিকা দখল করবেন৷ উনবিংশ শতাব্দীর শেষে এসব এলাকা দখল করে জার্মানরা৷
এই এলাকাগুলোতে শেতাঙ্গ কম ছিল৷ ১৯৪১ সালে মাত্র ২৫ হাজার জার্মান এসব এলাকায় বাস করত৷ আর ১ কোটি ৩০ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ তাদের অধীনে কাজ করত, যাদের বৈধভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও ছিল না৷
জার্মান ঔপনিবেশিক ইতিহাসে জার্মানরা ভয়াবহ ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিল৷ সেই সময়ের দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার যে অংশ (বর্তমানে নামিবিয়া) জার্মানদের অধীনে ছিল, সেখানে হেরেরো এবং নামাদের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল তারা৷ ১৯০৪ সালের ওয়াটারব্যর্গ যুদ্ধে বেশিরভাগ হেরেরো বিদ্রোহী মরুভূমিতে পালিয়ে গিয়েছিল৷ জার্মান সেনারা তখন তাদের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়৷ ফলে সেখানেই প্রাণ হারায় ৬০ হাজার হেরেরো৷
ঐ সময় ১৬ হাজার হেরেরো বেঁচে গিয়েছিল৷ তাদের নির্যাতন শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ ভয়াবহ নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছিল বেশিরভাগের৷ এখনও জানা যায়নি আসলেই কত বন্দি তখন মারা গিয়েছিল৷ এটা নিয়ে এখনো সমালোচনা হয়৷ এমনকি যে অল্প কয়েকজন সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিল, তাদেরও সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল৷ জীবণধারণের জন্য কিছুই অবশিষ্ট ছিল না তাদের।
১৯০৫ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব আফ্রিকায় জার্মান উপনিবেশের প্রতিবাদে সোচ্চার হয় উপজাতি গোষ্ঠীগুলো৷ এই বিদ্রোহে প্রাণ হারায় অন্তত এক লাখ মাজি-মাজি নৃ গোষ্ঠী৷ তানজানিয়ার ইতিহাসে এটা একটা বড় ঘটনা হলেও জার্মান ইতিহাসে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না৷
ঔপনিবেশিক যুদ্ধের পর জার্মান প্রশাসন ঐসব এলাকায় মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়৷ ব্যার্নহার্ড ডার্নব্যুর্গ একজন সফল উদ্যোক্তা, যাকে ১৯০৭ সালে কলোনিয়াল অ্যাফেয়ার্সের রাজ্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তিনি ঔপনিবেশিক নীতিমালা সংস্কার করেন৷
ডার্নব্যুর্গের এই সংস্কারের ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে চুক্তি হয়৷ এর আওতায় হামবুর্গ আর কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য আলাদা বিভাগ গড়ে তোলা হয়৷ ১৯০৬ সালে রবার্ট কোখ পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ঘুমের সমস্যা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন৷
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারের পর জার্মানি ১৯১৯ সালে ভার্সিলিদের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, সেখানে বলা হয় জার্মানি ভার্সিলিদের তাদের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দিচ্ছে৷
নাৎসি আমলে ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের ইচ্ছে আবারও প্রবল হয় জার্মানদের মধ্যে৷ এবার তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দিকে হাত বাড়ায়৷ পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ৷ এছাড়া তারা আফ্রিকায় তাদের আধিপত্য ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করেছিল৷ ১৯৩৮ সালে একটি স্কুলের মানচিত্র থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়৷