জনমত সমীক্ষায় লাগাতার ধসের পর এবার আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে নতুন সংকটে পড়েছে বিদায়ী চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের দল৷
ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে যে দল বেশিরভাগ সময় ধরে চ্যান্সেলরের পদ ধরে রাখতে পেরেছিল, আগামী সাধারণ নির্বাচনের পর সেই সুযোগ হাতছাড়া হবার সম্ভাবনা দিনে দিনে আরো বেড়ে চলেছে৷ দীর্ঘ ১৬ বছর পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসদের বিরোধী আসনে বসার আশঙ্কায় অস্থির হয়ে উঠছেন দলের অনেক নেতা৷ তাদের ঝুলিতে সংকটের অভাব নেই৷ দলের নতুন শীর্ষ নেতা ও ইউনিয়ন শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আরমিন লাশেট দলীয় কর্মীদেরই একটা বড় অংশের সমর্থন পাচ্ছেন না৷ আগামী কয়েক মাসে তাদের আস্থা অর্জনের আশা করলেও সময় থাকতে ভোটারদের মন জয় করা সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়ে গেছে৷ জনমত সমীক্ষায় সবুজ দল ইউনিয়ন শিবিরকে পেছনে ফেলে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাবার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে চলেছে৷
এবার ম্যার্কেলের সিডিইউ দল নতুন এক সংকটের মুখে পড়লো৷ পূবের টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের দলীয় শাখা এমন এক বিতর্কিত মানুষকে আগামী নির্বাচনের প্রার্থী করেছে, যার সাম্প্রতিক অতীত শাসক মহলের জন্য যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়েছিল৷ দেশের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে হান্স-গেয়র্গ মাসেন খোলাখুলি চরম দক্ষিণপন্থিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন – এমন মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল৷ কেমনিৎস শহরে নব্য নাৎসিরা অভিবাসীদের পেছনে ধাওয়া করার সময় তোলা একটি ভিডিওর বৈধতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ বিতর্কের জের ধরে ২০১৮ সালে তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
পুরোটা সময় ধরেই মাসেন সিডিইউ দলের সদস্য ছিলেন৷ দল থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিও উঠেছিল৷ কিন্তু সেই দাবি সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি৷ শুক্রবার বিপুল সমর্থন নিয়ে তিনি টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের দক্ষিণ আসনে সিডিইউ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন৷ ফলে তাঁকে ঘিরে বিতর্ক আরো বেড়ে গেল৷ দল হিসেবে সিডিইউ চরম দক্ষিণপন্থি ভাবধারার প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে কীভাবে সংসদ সদস্য করার চেষ্টা করতে পারে, এমন প্রশ্ন দলীয় নেতৃত্বকে আরও বিদ্ধ করছে৷ বিষয়টি বিরোধীদের হাতেও নতুন অস্ত্র তুলে দিচ্ছে৷
আসলে জার্মানির দলীয় রাজনীতিতে আদর্শগত অবস্থানের বিষয়টি গত কয়েক দশক ধরে অনেকটাই অস্পষ্ট হয়ে গেছে৷ রক্ষণশীল দল বলে পরিচিত সিডিইউ ও বাভেরিয়ার সিএসইউ পরিবেশ সংরক্ষণ, সামাজিক সংহতি ও বাম ভাবধারার অনেক বিষয় আত্মস্থ করেছে৷ ফলের শিবিরের একাংশ রক্ষণশীল ভাবধারার উপর দলের একচ্ছত্র আধিপত্য হারানোর বিষয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে আসছে৷ চরম দক্ষিণপন্থি হিসেবে পরিচিত এএইডি দল সেই সুযোগে ইউনিয়ন দলের অনেক সমর্থককে কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পেয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করছেন৷