বিভক্তি আর বিরোধিতা- দু’টির জন্যই কুখ্যাত গ্রিন পার্টি। এটি এমন একটি রাজনৈতিকক দল, যারা তর্ক করতে পছন্দ করে। যদিও সম্প্রতি তাদের আচরণে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সর্বোচ্চ দলীয় ঐক্য অর্জন এবং তা ধরে রাখার দিকেই দলটির সব মনোযোগ। ঐকমত্যে পৌঁছাতে এবং দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে মরিয়া গ্রিনরা। তাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়।
ইয়ুর্গেন ট্রিটিনের মতো দুর্ভাগ্য বরণ করার দুশ্চিন্তা হয়তো করতে হবে না আন্নালেনা বায়েরবককে। কি ঘটেছিলো ট্রিটিনের ভাগ্যে? ২০১৩ সালের প্রচারণায় গ্রিন পার্টির প্রার্থী ছিলেন ট্রিটিন। কিন্তু গ্রিন পার্টি তখন বিভক্ত ছিলো দুই শিবিরে। একদিকে বামপন্থী, অন্যদিকে বাস্তববাদীদের সমন্বয়ে গঠিত রিয়েলোপন্থী। বায়েরবকের অধীনে গ্রিন পার্টিতে অবশ্য এই মূহুর্তে কোনো বিভক্তি নেই।
বুন্দেসতাগে গ্রিন পার্টির সদস্যদের মধ্যে আস্থাভাজনদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন বায়েরবক। যাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নিয়মিতভাবে। এদের মধ্যে রয়েছেন গ্রিন পার্টির পার্লামেন্টারি দলের উপনেতা অলিভার ক্রিশার এবং জ্যেষ্ঠ হুইপ ব্রিটি হাসেলমান। এই হাসেলমান হতে পারেন পার্টির পরবর্তী পার্লামেন্টারি দলের নেতা। এছাড়া কাথারিনা ড্রোয়েগা এবং আগনিসকা ব্রুগারের মতো জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও সখ্যতা গড়ে তুলেছেন বায়েরবক। মিত্র তৈরির ক্ষেত্রে তাকে বেশ পারদর্শীই মনে হচ্ছে।
২০০৫ সাল থেকে গ্রিন পার্টি কখনো জার্মান ফেডারেল সরকারের অংশ হতে পারেনি। তাই ক্ষমতায় যেতে মুখিয়ে আছে দলটি। গ্রিনদের ইতিহাস এবং চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলটি হয়তো বিরোধী শিবিরে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। দলের সবশেষ সম্মেলনে অবশ্য চিত্রটা পাল্টে যায়। দলকে কেন ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে হবে- তার উপর বিশদ আলোচনা করেছেন সদস্যরা।
কিন্তু কেন? প্রাথমিক কারণ হতে পারে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায়’ জার্মানির বর্তমান অবস্থান। দলের বেশিরভাগ সদস্যই বিশ্বাস করেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জার্মানিতে গ্রিন পার্টিই একমাত্র সক্ষম রাজনৈতিক দল। যেমনটি বলেছেন দলের বুন্দেসহাগ সদস্য রেনাটে কুয়েনাস্ট। তার ভাষায়, “আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। এবং অন্যরা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, এই কাজের জন্য তারা প্রস্তুত না।”
কিন্তু গ্রিন পার্টি সরকার গঠন করলে তার চেহারাটা কেমন হবে? কাদের দেখা যাবে মন্ত্রিপরিষদে?
বায়েরবক এবং হাবেকের অবস্থানতো পরিষ্কার। হাবেক ইদানিং আর্থিক খাতগুলোতে নিজের সম্পৃক্তা বাড়াচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি সম্ভবত পরিবেশ রক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব নিতে আগ্রহী।
তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, গ্রিন পার্টির ভেতরে অনেক দিন ধরেই বিভক্ত কয়েটি ধারা বিরাজমান। ক্ষমতায় যেতে আপাতত সব পক্ষ একাট্টা হলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পরে কি হবে? অনেকেরই আশঙ্কা, ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে দলীয় কোন্দল। বায়েরবক এবং হাবেক- দু’জনই রিয়েলোপন্থী হিসেবে পরিচিত। আবার বর্তমান পার্লামেন্টারি দলের নেতা বামপন্থী আন্টোন হোফরাইটারও মন্ত্রিসভায় বড় একটি পদের আশায় থাকবেন। সেটি কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়? তাহলে উপনেতা আগনিসকা ব্রুগারের কি হবে? প্রতিরক্ষা ইস্যুতে দলের বিভক্ত দুই ধারাতেই তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনিও নিশ্চয়ই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতে চাইবেন।
বলাই যায়, সরকার গঠন করতে পারলে বায়েরবকের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হবে ভারসাম্যপূর্ণ একটি মন্ত্রিসভা গঠন। সেক্ষেত্রে সামান্যতম ভুলও চিড় ধরাতে পারে দলের সাম্প্রতিক ঐক্যে। এমনকি শঙ্কায় পড়ে যেতে পারে ক্ষমতা ধরে রাখা।
ক্ষমতাকে লক্ষ্য করে আপাতত দলে ঐক্য তৈরি হলেও ভবিষ্যত বিভক্তি কিন্তু ভাবাচ্ছে ঠিকই। বিভক্তির কারণে ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারলে প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে গ্রিন পার্টির গ্রহণযোগ্যতা। জার্মান রাজনীতিতে বৃহৎ একটি দল হিসেবে টিকে থাকাই মুশকিলে পড়ে যেতে পারে। সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে তাই দলের অভ্যন্তরীন মতবিরোধ দূর করতে হবে সবার আগে। আর এসব করতে হবে নির্বাচনের আগেই।