5.3 C
Düsseldorf

চলতি বছর জার্মানির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে কোথায় পড়বে কার ভোট ? একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

Must read

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, অনুষ্ঠিত হবে জার্মানির Bundestag (বুনদেসতাগ বা ফেডারেল পার্লামেন্ট) নির্বাচন। বিভিন্ন দিক দিয়ে এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানরা ২০২১ সালকে “Superwahljahr (সুপার ভাহল ইয়ার)” বা “super election year (সুপার ইলেকশন ইয়ার)” হিসেবে অভিহিত করেছে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই নির্বাচনকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রথমতঃ এঙ্গেলা মার্কেলের ১৬ বছর পর চ্যান্সেলরের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া এবং
দ্বিতীয়তঃ অধিকতর সংশয়পূর্ণ যে সত্য, তা হলো কেউ এখনও বলতে পারছেন না যে এর ভবিষ্যত কি হবে।

গত ১৬ বছর মার্কেলের নেতৃত্বে জার্মানি বেশ স্থিতিশীল ছিলো এবং এর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও হয়েছে চোখে পড়ার মত। ২০১৫ সালের পর জার্মান রাজনীতিতে ডান পন্থিদের উত্থান সাধারন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও বেশ কয়েকটি রাজ্যের গত নির্বাচনে গ্রীন পার্টি বেশ ভালো ফল করেছে এবং এখন তারা ২য় অবস্থানে আছে। ঠিক মার্কেলের CDU (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস – সিডিইউ) এর পরে। অন্যদিকে করোনা মহামারীর কারণে একের পর এক লকডাউন দেবার ফলে বেশীরভাগ মধ্যপন্থীদল গুলো তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থকদের আস্থা হারিয়েছে। এদের বেশীরভাগ আবার ঝুঁকে পড়েছে ডানপন্থীদের প্রতি। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনে ডানপন্থী AFD (আএফডি) বেশ ভালো ফল করেছিলো এবং সংসদে বিরোধী দলের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। ঠিক এখনই বলা যাচ্ছে না ২০২১ সালের নির্বাচনে এই দলটি কি অবস্থানে থাকবে। চলুন আমরা দেখি গত ২০১৭ সালের নির্বাচনে কি ঘটেছিলো, যে AFD (আএফডি) এর উত্থান ঘটে বিরোধী দল হিসেবে।

জার্মান সাধারণ নির্বাচনে কে কাকে ভোট দিয়েছিলেনঃ
২০১৭ এর জার্মান Bundestag (ফেডারেল পার্লামেন্ট) অথবা সংসদ নির্বাচনে ডানপন্থী দল AFD (আএফডি) এর সমর্থন উল্ল্যেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। কোথা থেকে এসেছিলো এসব ভোটারগণ?

ভোটারের বয়স ভিত্তিক বিভাজনঃ
Exit Poll এর জরিপে দেখা গিয়েছে যে, সব বয়সের জনগণের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল চ্যান্সেলর Angela Markel এর নেতৃত্বাধীন জোট। ষাটোর্ধ বয়সীরা সিডিইউ (CDU) এবং সিএসইউ (CSU) জোটের জোরালো সমর্থন যুগিয়েছিল বলে পরিলক্ষিত হয়। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনী ফলাফলে দুঃখজনক ভাবে সকল প্রজন্মের কাছেই দলটির জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছিল। শুধুমাত্র ৩০ বছরের কম বয়সীদের এক চতুর্থাংশ ইউনিয়ন কে সমর্থন করেছিল যা ২০১৩ সালের ফলাফলের তিন ভাগের এক ভাগের ও কম ছিল। ষাটোর্ধ বয়সীদের সমর্থন ৯% হ্রাস পেয়ে ৪৯% থেকে ৪১% এ নেমে গিয়েছিল। ২০১৩ সালের ছোট ছোট দলগুলো যেমন Die Piraten তরুণ ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। তবে ধারণা করা হচ্ছে এবার তাদের সমর্থন হ্রাস পেয়েছে যেহেতু ৩০ বছরের কম বয়সীরা বামপন্থী Die Linke এবং পরিবেশবাদী Die Grune এর মতো বিকল্প দলগুলোকে সমর্থন করেছে। স্বতন্ত্র এফডিপি (FDP) দলটিও তরুণ ভোটারের আনুকুল্য পেয়েছিল। গত নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের সমর্থন ৮% বেড়ে ১৩% এ উন্নীত হয়। ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী AFD দলের বেশ কিছু স্বতন্ত্র সমর্থক ছিল। ষাটোর্ধ এবং ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে যারা জোরালো সমর্থক ছিল তাদের সাথে দলটি বিরূপ আচরন করেছিল।

লৈঙ্গিক বিভাজনঃ
নারী ভোটারদের তুলনায় প্রায় দিগুন পুরুষ ভোটার AFD কে সমর্থন করেছিল। Exit Poll জরিপ অনুযায়ী ডানপন্থী দলকে সমর্থন করেছে ৯% নারী ভোটার এবং সামগ্রিক ফলাফলে ১৩.৫% যার তুলনায় ১৬% পুরুষ ভোটার সমর্থন করেছিল। ভোটারের লৈঙ্গিক তারতম্য ২০১৩ সালে সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছিলো। প্রকৃতপক্ষে, ঐ বছর নারী সমর্থন যদি পুরুষ সমর্থন এর ন্যায় জোরালো হতো তবে দলটি জার্মান সংসদে অর্ধশত এম পি নিয়ে থাকতে পারতো।

গত দুই Bundestag (ফেডারেল পার্লামেন্ট) নির্বাচনে CDU/ CSU এর প্রতি নারীদের সমর্থন পুরুষদের তুলনায় বেশি ছিল। এই ধারা এবার ও অব্যাহত আছে। Exit Poll জরিপ অনুযায়ী পাঁচ বছর আগে পুরুষ ভোটারদের সমর্থন ৩৯% থেকে হ্রাস পেয়ে ৩০% এ নেমে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে (৪৪%) নারী ভোটারদের জোরালো সমর্থন দলটিকে মোটামুটি ভাল অবস্থানে ধরে রেখেছিল, কিন্তু এখন ৭% হ্রাস পেয়ে ৩৭%এ নেমে এসেছে।

পেশাগত বিভাজনঃ
মনে করা হয় যে, Bundestag (ফেডারেল পার্লামেন্ট) এ স্থান পাওয়া প্রথম দল হিসেবে এ এফ ডি এর প্রতি সাধারন শ্রমিকদের দৃঢ় সমর্থন ছিল, যা প্রতি পাঁচ জনে একজন হিসাবে ১৯%। Exit Poll জরীপে পরিলক্ষিত হয় যে সরকারি এবং বেসরকারি কর্মচারীগণও উল্লেখযোগ্য ভাবে সমর্থন করেছে।গবেষণায় পরিলক্ষিত হয় যে, দলটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় কিছুটা দুর্বল হলেও সমাজের একটি বিস্তৃত অংশের সমর্থন পেয়েছে।

এফডিপি (FDP) দলনেতা Christian Lindner এর সমর্থন উদ্যোক্তাদের মাঝে অবস্থান চুড়ান্ত বলে মনে করা হয়। Exit Poll জরিপ অনুযায়ী ১৭% এর কাছাকাছি ব্যবসায়ীগন উদারপন্থিদের সমর্থন জানিয়েছিল যেখানে সাধারন শ্রমিক ৭% এবং চাকুরীজীবী ১০% সমর্থন জানিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এফডিপি একমাত্র জনসংখ্যাভিত্তিক দল হিসেবে সামাজিক গনতান্ত্রিক দল এসডিপি এর চেয়ে এগিয়েছিল। ব্যবসায়ীগন গতানুগতিক ভাবে দলটিকে সমর্থন দিয়ে এসেছে এবং Bedrock মনে করে ২০১৩ সালে হেরে যাওয়ার পর দলটি Bundestag (ফেডারেল পার্লামেন্ট) এ জায়গা করে সরকারের সাথে পারস্পারিক অংশগ্রহন দৃঢ় ভাবে ধরে রেখেছে।

শিক্ষাঙ্গনঃ
আএফডি দলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের দ্বারা পরিচলিত হওয়া সত্ত্বেও দলের সমর্থকগন সেভাবে তাদের যথোপযুক্ত মনে করেন না। শুধুমাত্র স্নাতক পর্যায়ের ৭% দলটিকে তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। Mathew Goodwin উল্লেখ করেন যে, সাধারনত প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এ হার পুরো ইউরোপে ডানপন্থী জাতিয়তাবাদী দলগুলোর সমর্থনকারীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মাধ্যমিক শিক্ষার সমান।

অন্য আরো শিক্ষিত দলগুলোর মধ্যে বিশেষত এসপিডি (SPD) দলের ক্ষতির পরিমান বেশি ছিল। Exit Poll জরীপে দেখা যাচ্ছে যে, ২০১৩ সালের ফলাফলে Graduate এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের তুলনায় সামাজিক গনতান্ত্রিক দল ৬ পয়েন্ট নিচে ছিল এবং শিক্ষিত ভোটার যারা ছিলেন তারা সম্ভবত এফ ডি পি কে সমর্থন জানিয়েছিল।

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট