সাধারণত যে সব সমীক্ষার খবর প্রকাশ্যে আসে, তা একটা সুষ্ঠু প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। কিন্তু এক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং যে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়েছে, তার মধ্যে কিছুটা হলেও মিশে রয়েছে অনুমিত ধারণা। জানা গিয়েছে যে নিউ ইয়র্কের রোজওয়েল পার্ক কম্প্রিহেনসিভ ক্যানসার সেন্টারের তরফ থেকে মানুষের বয়স নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল। এই সমীক্ষায় ইউনাইটেড কিংডম এবং ইউনাইটেড স্টেটসের স্বেচ্ছাসেবীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনসে। সেখানে সমীক্ষাপত্রটির প্রধান লেখক টিমোথি ভি. পায়ারকভ দাবি তুলেছেন যে মানুষ ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে!
আচমকা নিউ ইয়র্কের রোজওয়েল পার্ক কম্প্রিহেনসিভ ক্যানসার সেন্টার মানুষের বয়স নিয়ে সমীক্ষা শুরু করেনি। জানা গিয়েছে যে এক মহিলা যখন ১৮০ বছর বেঁচে থাকার লক্ষ্যে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে নিজের স্টেম সেল নিজেরই শরীরে ইনজেক্ট করালেন, তার পর নড়েচড়ে বসেছিল এই প্রতিষ্ঠান। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে শরীরের অভ্যন্তরীণ কোষকলা যদি ঠিক থাকে, তাহলে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। কিন্তু তা লাগামছাড়া হতে পারে না। তাই বিজ্ঞানীরা জেন কালমেন্টের উদাহরণ সামনে রেখে এই সমীক্ষা শুরু করেন। কেন না, জেন-ই আপাতত পৃথিবীর ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি বছর বেঁচে থাকা ব্যক্তি, মৃত্যুকালে এই ফরাসি নারীর বয়স হয়েছিল ১২২ বছর। এই জায়গা থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে তার মানে সব শর্ত বজায় থাকলে মানুষ অন্তত ১২২ বছর বেঁচে থাকতেই পারে জেনের মতো!
এই বিষয়ে সমীক্ষা চলাকালীন আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের সাহায্যে স্বেচ্ছাসেবীদের শারীরিক গড়ন, সুস্থতা এবং তাঁদের শরীরে উপস্থিত নানা রোগ নিয়ে বিশদে পর্যবেক্ষণ চলে। এর ভিত্তিতে টিমোথি বলছেন যে মানুষের দীর্ঘ জীবন লাভ করার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে প্রথমটি হল তার শারীরিক বয়স। এর সঙ্গে ক্লান্তি, ব্যাধির মতো বিষয়গুলিকেও যোগ করতে হবে। দ্বিতীয়টি হল শরীরের আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা। আমাদের যখন কোনও অসুখ করে, তখন শরীর আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার পর ধীরে ধীরে সে আবার আগের পর্যায়ে ফিরে আসে। টিমোথি বলছেন, ১২০ বছরের পর থেকে শরীরের এই আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে এবং ১৫০ বছরের পর তার আর অস্তিত্বই থাকে না। এই হিসেবের নিরিখে তাঁর দাবি- মানুষ ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তার চেয়ে কম বই বেশি নয়!