বুক ফাটা কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস । এই ভারতকে চেনা যায় না । এই মৃত্যুপুরিকে চেনা যায় না। হৃদয় বিদারক এক একেকটা ছবি যেন বুকের ভিতর থেকে শেষ অশ্রুবিন্দুটুকুও নিংড়ে নিচ্ছে । করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল ভারত । চারিদিকে শুধুই হাহাকার, স্বজন হারানোর যন্ত্রণা । ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ছবিই জ্বলজ্বল করছে চারিদিকে । একটু শ্বাসবায়ুর জন্য আর্তি । যেন চোখে দেখা যায় না এ দৃশ্য । হাসপাতালে বেড নেই, পর্যাপ্ত ভ্যাক্সিন নেই, অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করছেন সাধারণ মানুষ । শ্মশানে নিভছে না চিতার আগুন, জায়গা নেই কবরস্থানেও । দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে ।
আর এই পরিস্থিতির মধ্যেও বিপুল হারে রমরমিয়ে কালোবাজারি চালাচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ । কখনও অক্সিজেন ব্ল্যাক হচ্ছে, কখনও আবার হাসপাতাল বেড নিয়ে চলছে নোংরামি, কখনও অ্যাম্বুলেন্সের বিপুল দর হাঁকছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের নামে বিক্রি হচ্ছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।এসব তো গেল ব্যক্তির অপকর্ম।
কিন্তু রাস্ট্র যদি জড়িয়ে পড়ে দুর্নীতিতে?
বেশি দামে নিম্ন মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম চিন থেকে ঢুকছে ভারতে।এবার এমন অভিযোগই উঠছে দেশের সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে থেকে।
অভিযোগ, বিশ্বের অন্য দেশগুলি যেখানে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে একযোগে লড়ছে, একে অন্যকে সাহায্য করছে, পাশে থাকছে, সেখানে চীন এই পরিস্থিতিকে মুনাফা অর্জনের জন্য বেছে নিচ্ছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের সংস্থাগুলি বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বাড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, তারা মূলত পাঠাচ্ছে ৫ ও ১০ লিটারের অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং সিলিন্ডার। যার দাম চীনের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন রকম হাঁকছে। পাশাপাশি গত দশ দিনে কনসেনট্রেটরের দাম অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে চীনা সংস্থাগুলি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সিলিন্ডার প্রতি একশো ডলারেরও বেশি। বাড়তি দাম দিয়ে যে সামগ্রী আসছে তার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিশেষজ্ঞ শিবিরে। অন্য দিকে ত্রাণের কাজে এই সরঞ্জাম কেনা হলেও চীন কোনও ছাড় দিচ্ছে না।
কিন্তু মুখে বেজিং বলছে, তারা সবকিছুই মানবিক প্রচেষ্টা থেকে করছে। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতও এ কথাই বলছেন। ভারত-আমেরিকা কৌশলগত অংশীদারি মঞ্চ কোভিড-যুদ্ধে ভারতকে ১ লক্ষ অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেগুলির মধ্যে বেশির ভাগই কেনা হচ্ছে চীন থেকে। তাদের লেনদেন সংক্রান্ত নথিতে দেখা যাচ্ছে, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের দাম ৩৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৬০ ডলার করেছে চীনা সংস্থাগুলি। ঘটনা হল, এই কেনা-বেচায় সরাসরি ভারত সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তারা বিশ্বের যে সব রাষ্ট্রের থেকে সরকারি ভাবে কোভিড মোকাবিলার সরঞ্জাম আনাচ্ছে তার মধ্যে চীন নেই। ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে দ্রুত নিজেরা সরঞ্জাম কিনতে পারে তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রক্রিয়াটিতে সহায়তা করা হচ্ছে মাত্র। তাই এক্ষেত্রে জেনে বুঝেও ঘরোয়া ভাবে বেজিং-কে দেশের বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির অভিযোগ পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই আপাতত।