মুসলিমদের কাছে হারাম আল শরীফ আর ইহুদিদের কাছে পরিচিত টেম্পল মাউন্ট হিসেবে৷ এখানেই রয়েছে আল আকসা মসজিদ, কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা, কুব্বাত আন নবীর মত মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনাগুলো৷ অন্যদিকে ইহুদিরা মনে করে তাদের বাইবেলে বর্ণিত সবচেয়ে পবিত্র দুইটি গির্জার ঠিকানা এটি৷
আল-আকসা মসজিদ
রূপালি রঙের গম্বুজ এবং বিশাল হলঘর বিশিষ্ট আল-আকসা মসজিদ৷ সুন্নি মুসলমানদের কাছে যা মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান৷ ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী মেরাজে যাওয়ার সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসায় এসে নামাজ আদায় করেন৷
কুব্বাত আস সাখরা
কুব্বাত আস সাখরা বা ডোম অব দ্যা রক৷ টেম্পল মাউন্টেনের উপর অবস্থিত গম্বুজটিতে সাখরা নামের একটি পাথর রয়েছে৷ ইসলাম ধর্মমতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে যাওয়ার পূর্বে এই পাথরটি সেখানে স্থাপন করেন৷
জলপাই পাহাড়
এই পাহাড়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ ঢালুতে আছে প্রাচীন ইহুদি সমাধি৷ এক সময় এলাকাটি ছিল জলপাই বাগানে ঘেরা৷ তাই নামও হয় জলপাই পাহাড়৷ এটি ইহুদিদের সবচেয়ে প্রাচীন সমাধি৷
পশ্চিম দেয়াল
জেরুসালেমের পুরাতন শহরে অবস্থিত চুনাপাথরের এই প্রাচীন দেয়ালটি টেম্পল মাউন্টেন বা পশ্চিমের দেয়াল৷ ইহুদিদের নিকট এটি সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান৷ তারা এখানে প্রার্থনা করতে আসেন৷ এখানে পুরুষ-নারীর জন্য পৃথক বিভাগ রয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে৷
যেখানে যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন
জেরুসালেমের ওল্ড সিটি বা পুরান নগরী গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টানদের কাছেও৷ বেশিরভাগের ধারণা যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ ও সমাধিস্থ করা হয় এখানেই৷ সেই স্থানটিতে রয়েছে তাদের পবিত্র একটি গির্জাও৷ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানরা মনে করেন বাইবেলের বার্তা অনুযায়ী ইসরায়েলে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা খ্রিস্টানদের ধর্মীয় দায়িত্ব৷
জেরুসালেম কার?
ইসরায়েলের দাবি তিন হাজার বছর আগে জেরুসালেমই ছিল ইহুদিদের রাজধানী৷ অন্যদিকে ফিলিস্তিনি আরবরাও এই ভূমিকে তাদের ঐতিহাসিক, পবিত্র নগরী হিসেবে বিবেচনা করে৷ ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নও জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে৷
ইসরায়েলের দখলদারিত্ব
১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর আর পূর্ব জেরুসালেম দখলে নেয় ইসরায়েল৷ আইন করে দাবি করে নিজেদের ভূমি হিসেবে৷ যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনও মিলেনি৷ টেম্পল মাউন্ট বা হারাম আল শরীফের নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাতায়াত ও প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন মুসলিম ও ইহুদিরা৷
রাজধানীর দাবি
১৯৮০ সালে ইসরায়েলের সংসদ নেসেট অখন্ড জেরুসালেমকে তাদের রাজধানীর মর্যাদা দেয়৷ দেশটির সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট, সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোর অবস্থান এই শহরেই৷ জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে কিংবা পূর্ব জেরুসালেমে দেশটির দখলদারিত্ব, কোনটিরই স্বীকৃতি দেয়নি৷
যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি
২০১৭ সালে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সেই সঙ্গে তেল আবিব থেকে দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নেয়ারও নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন৷ এই পদক্ষেপকে ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়৷
জনসংখ্যায় পরিবর্তন
১৯৬৭ সালের আগেই পশ্চিম জেরুসালেমে ইহুদিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তবে পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ যুদ্ধের পর অবৈধভাবে দুই লাখের বেশি ইহুদিকে সেখানে স্থানান্তর করে ইসরায়েল৷ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেরুসালেমের জনসংখ্যা দাড়িয়েছে সাড়ে আট লাখে৷ যার ৬৩ ভাগ ইহুদী আর ৩৭ ভাগ ফিলিস্তিনি৷
জেরুসালেম বিক্রির জন্য নয়
সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের এক পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সে অনুযায়ী জেরুসালেম শহর ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী থাকবে৷ আর অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেম হবে ফিলিস্তিনিদের রাজধানী৷ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, ‘‘জেরুসালেম বিক্রির জন্য নয়’’৷