5.3 C
Düsseldorf

কেন ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে

Must read

বেশ কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে বিপুলসংখ্যক রুশ সেনার উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে জড়ো করা হয়েছে অসংখ্য ট্যাংক, সামরিক সরঞ্জাম।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তাদের পূর্ব সীমান্তে জড়ো করা রুশ সেনার সংখ্যা ৪০ হাজার। সঙ্গে রয়েছে সাঁজোয়া যান, ট্যাংক, কামানের বহর। এ ছাড়া ইউক্রেনের কাছ থেকে দখলকৃত ক্রিমিয়াতে ৪০ হাজার সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো।

যদিও ক্রেমলিন বলছে, তারা যুদ্ধ চায় না, তাহলে কেন এসব করা হচ্ছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির এক দিন আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেন, ‘কারোরই যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা নেই।’ কিন্তু প্রচ্ছন্ন হুমকি তিনি ঠিকই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘রাশিয়া সব সময়ই বলে আসছে, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রুশ ভাষাভাষীদের ব্যাপারে তারা কখনোই উদাসীন থাকবে না।’

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনেৎস্ক আর দক্ষিণাঞ্চল লুহানস্ক। ২০১৪ সালে এই দুই অঞ্চলের রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেন এবং সেখানে ‘পিপলস রিপাবলিকস’ নামে আলাদা শাসনব্যবস্থা চালু করেন।
ইউক্রেন সীমান্তে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েনকে সাধারণ মহড়ার প্রস্তুতির অংশ বলে মস্কোর কর্মকর্তারা দাবি করলেও আপাতদৃষ্টে এটা মস্কোর আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি বলে মনে করা হচ্ছে।

রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভোরোনেজ। এটি ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্ত থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে শহরটিতে বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র রুশ সেনা জড়ো হতে দেখা গেছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমের ক্রাসনদর অঞ্চলে ট্যাংক ও সামরিক রেলগাড়ির বহরের দেখা মিলেছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তা, প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ওই অঞ্চলগুলোতে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর সেনাদের নিয়ে গঠিত ৭৬তম গার্ডস এয়ার অ্যাসাল্ট ডিভিশনসহ সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলার চিত্র ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সহায়তা করতে ৭৬তম গার্ডস এয়ার অ্যাসাল্ট ডিভিশন ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।

ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত জুলাই দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতির পরও থেমে নেই সংঘাত। সম্মুখযুদ্ধে ইউক্রেনের সেনা নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
চলতি বছরে মোট ২৭ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২০ সালে নিহত হন ৫০ জন ইউক্রেনীয় সেনা। অভিযোগ রয়েছে, ইউক্রেনের সেনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে এই সংঘর্ষে মস্কো সেনা পাঠিয়েছে। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।

সামরিক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ক্রেমলিন আরেকটি যুদ্ধের দিক বেশ জোরেশোরেই এগোচ্ছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর রোমানেস্কো বলেছেন, ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোতে ছোট আকারের যুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার মানে এই নয় যে যুদ্ধটি আগামীকালই শুরু হবে। এটার অর্থ হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতি তিনি তৈরি করছেন।
২০১৩-১৪ সালের দিকে ক্রিমিয়া দখলে নিতে রাশিয়া ব্যাপক সামরিক শক্তি জড়ো করেছিল ইউক্রেন সীমান্তে। সেটার সঙ্গে এবারের সামরিক তৎপরতার মিল রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জার্মানির ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির গবেষক নিকোলা মিতরোখিন বলেছেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, সামরিক পদক্ষেপ আসন্ন।

রুশ আগ্রাসন রুখতে সদা তৎপর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও। সীমান্ত তারা ইতিমধ্যে বাংকার খনন করেছে। সেনাদের মনোবল চাঙা করতে এবং সীমান্তের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সম্প্রতি সীমান্ত ঘুরে এসেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন তিনি। ইতিমধ্যে ইউক্রেন থেকে রুশপন্থী রাজনীতিবিদদের শিকড় উপড়ে ফেলতে শুরু করেছেন জেলেনস্কি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ ভিক্টর মেদভেডচাকের তিনটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছেন। ভিক্টরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপও করেছেন।
মিতিরোখিন বলেছেন, পুতিন ভয় দেখানো ও তর্জন-গর্জন করায় ওস্তাদ। ফলে বিশ্বনেতাদের এখনই উপযুক্ত সময় ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো, সংহতি প্রকাশ করা।

ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়া যদি বেপরোয়া ও আগ্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড চালায়, তাহলে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রুশ আগ্রাসন নিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। বিষয়টি নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ।

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট