“ভারতকে লকডাউন থেকে বের করে মোদী এক কোভিড কেয়ামতের দিকে নিয়ে গেলেন,”- ব্রিটেনের সানডে টাইমসের সাম্প্রতিক শিরোনাম এটি।
একটি অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র এই একই খবর ছেপেছে এক কঠোর সারমর্ম জুড়ে দিয়ে: “দম্ভ, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা মিলে ভারতে তৈরি হয়েছে এমন এক বিরাট সংকট, যখন দেশটির নাগরিকদের সত্যি সত্যি দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম, আর তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী জনতার ভিড়ে আত্মপ্রসাদে মগ্ন।”
সম্প্রতি ল্যানসেটে প্রকাশিত সম্পাদকীয় পড়ে ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই বলছেন, স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ ভাবে আর কখনও অপদস্থ হয়নি ভারত। একেবারে প্রথম অনুচ্ছেদেই ল্যানসেট লিখল- ‘ভয়ঙ্কর এই করোনা-আবহেও সংক্রমণ ঠেকানোর থেকে সমালোচনার টুইট মুছতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে মোদী সরকার।’ দেশবাসীর প্রতি কেন্দ্রের এই মনোভাব ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেছে তারা।
ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম আর সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইন দখল করে আছে।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বেড কিংবা চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কীভাবে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, শ্বাস নেয়ার জন্য হাসফাস করছে; পরিবারগুলো কীভাবে মরিয়া হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট- সবকিছুর জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে; কীভাবে আরো বেশি সংখ্যায় আসা মৃতদেহ দাহ করার জন্য গণ দাহের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, এমনকি কার পার্ককেও চিতায় পরিণত করতে হচ্ছে।
এর মাঝেই মিস্টার মোদী গঙ্গা নদীর তীরে এক পবিত্র হিন্দু ধর্মীয় উৎসব করতে দিয়েছেন, যেখানে প্রায় নব্বই লাখ মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে সমবেত হয়েছে পুণ্য স্নানের জন্য। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এক মাস ধরে নির্বাচন করতে জেদ ধরেছিলেন। তারপর সেই নির্বাচনের সময় মাস্ক না পরেই বিশাল জনসমাবেশে যোগ দিয়েছেন, সেসব জনসভায় বিপুল মানুষের জনসমাগম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
“বিশ্বের যেসব জায়গায় সম্প্রতি লকডাউন জারি করা হয়েছে, সেসব জায়গার মানুষ ভারতে এরকম অসাবধানতা আর অবজ্ঞার প্রদর্শন দেখে হতবাক হয়েছেন”, বলছেন দ্য ইকনোমিস্টের ভারত সংবাদদাতা অ্যালেক্স ট্র্যাভেলি
বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ভারতের সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতারা উদ্ভট সব ‘প্রতিষেধক’-এর কথা বলে আসছেন, যার অধিকাংশই গোমূত্র ও গোবর সংক্রান্ত।
এবার এ তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি নাম। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র সিং শুধু পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, কখন-কীভাবে পান করতে হবে সে উপায়ও বাতলে দিয়েছেন তিনি।
একটি ভিডিওতে ওই নেতাকে গোমূত্র পান করতে দেখা গেছে। বলেছেন, সুস্থ থাকতে কীভাবে গোমূত্র পান করতে হবে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টু ডে এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই নেতার দাবি, করোনা ঠেকানোর অব্যর্থ ওষুধ গোমূত্র। শুধু করোনাই ঠেকাবে না, শরীরকেও চাঙ্গা রাখবে ওই টোটকা।
সুরেন্দ্রের কথায়, গোমূত্র কোভিড-১৯ সংক্রমণ রুখতে সক্ষম। দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করার পরও তিনি নাকি ওই গোমূত্র পান করেই সুস্থ রয়েছেন বলে দাবি তার।
ভিডিওতে সুরেন্দ্রকে বলতে শোনা গেছে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গোমূত্র সেবন করতে হবে।
দু-তিন চামচ গোমূত্র এক গ্লাস পানিতে মেশাতে হবে। তারপর এক ঢোকে সেই পানি উদরস্থ করতে হবে। তবে এই টোটকা সেবন করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ নিয়মের কথা বলেছেন ওই নেতা।
সুরেন্দ্রর কথায়, বিজ্ঞানে বিশ্বাস করুন আর না করুন, গোমূত্র করোনা রুখতে সক্ষম। তবে গোমূত্র পানের আধঘণ্টার মধ্যে অন্য কোনকিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না।
আজ মানুষ বড় কাঁদছে। এই কঠিন সময়ে গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছে ভারতবাসীর পাশে। আর সেই দেশ পরিচালনার ভার যাদের হাতে,ধর্মের নামে তাদের এরূপ নির্মম রসিকতা ধর্মে সইবে না নিশ্চয়ই।