যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও প্রতারণার মামলা হয়েছে। মামলায় তার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা অ্যালেন ওয়েসেইলবার্গকেও আসামি করেছে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট প্রসিকিউটরের কার্যালয়। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা অভিযোগের নথিতে দেখা গেছে, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, ফৌজদারি কর প্রতারণা, ব্যবসার রেকর্ডে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ও ট্রাম্প পে-রোল করপোরেশনের বিরুদ্ধে ১০টি এবং ওয়েসেইলবার্গের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো চলছে। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন সম্পদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণদাতা, ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ও কর কর্তৃপক্ষকে ভিন্ন দিকে চালিত করেছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ওয়েসেইলবার্গের ওপর নজর দিয়েছেন তদন্তকারীরা। ১৫ বছরের একটি কর স্কিমের আওতায় কোম্পানির কাছ থেকে দামি ফ্ল্যাট, গাড়ি ও পরিবারের দুই নাতির টিউশন ফি পেলেও কর দেননি বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
তিনি ২০০৫ সাল থেকে ১৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার আয়ের কর ফাঁকি দিয়েছেন। এমনকি নিউ ইয়র্কে তিনি যে বসবাস করেন, সেই তথ্যও লুকিয়েছিলেন। মূলত কর ফাঁকি দিতেই এই তথ্য গোপন করেছিলেন তিনি। তিনি মোট ৯ লাখ ডলার কর ফাঁকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ১ লাখ ৩৩ হাজার ডলারের কর রিফান্ড সুবিধা নিয়েছেন, যেটা তার পাওয়ার কথা ছিল না। অভিযোগের নথি প্রকাশের আগেই তিনি প্রসিকিউটর অফিসে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
নিউ ইয়র্কের আদালতে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তাকে আদালত জামিন দিলেও পাসপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে গেলে তাকে বড় ধরনের আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কর ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত চলছিল। এর বাইরে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে পর্নোস্টার স্টমি ড্যানিয়েলসহ দুই নারীর যৌন হয়রানির মামলা। কারণ প্রেসিডেন্ট থাকার কারণে এসব তদন্ত ও মামলার কার্যক্রম স্থবির ছিল।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, দেশের কট্টর বামপন্থিরা এভাবে তার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে। এভাবে কখনোই তাকে আটকানো যাবে না। এর মাধ্যমে দেশ আরো বেশি বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। তবে ট্রাম্প যা-ই বলুন না কেন, এই কর ফাঁকির ঘটনায় ওয়েসেইলবার্গের ‘অফ দ্য বুক’ লেনদেনে ট্রাম্পের সই করা চেকও পেয়েছে তদন্তকারীরা। এমনটাই জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো। ট্রাম্প অভিযুক্ত হননি, কিন্তু এসব অভিযোগের হুমকি এখনো রয়েছে তার জন্য।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে মামলায় এখনো মূল আসামি রয়েছেন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা অ্যালেন ওয়েসেইলবার্গ। শিগিগরই এ মামলায় ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার কোনো আভাস নেই। কিন্তু প্রসিকিউটররা ওয়েসেইলবার্গকে এই তদন্তে সহায়তা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই।
ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত তিন দশকে বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্ত থেকে বেঁচে গেছেন ট্রাম্প। হয়তো এ যাত্রায়ও তিনি পার পেয়ে যাবেন। তবে এবারের মামলায় তার প্রতিষ্ঠান ও তার ইমেজের যে ক্ষতি হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। এই মামলার কারণে ট্রাম্পের কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যাবসায়িক অংশীদারদের সম্পর্ক খারাপ হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন কোটি কোটি ডলার ঋণের মুখে রয়েছেন, যা তাকে পরিশোধ করতে হবে। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই আইনি হুমকি তার আর্থিক পরিস্থিতি বিপর্যযের মুখে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রভাবিত হতে পারে।