কিলিয়ান এমবাপ্পে সময়ের সেরাদের একজন। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের পর ফুটবলে যাঁরা আলো ছড়াবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের নিয়ে আলোচনায়ও তর্ক সাপেক্ষে এমবাপ্পেই সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু মাত্র ২২ বছর বয়সে এত প্রশংসাই কি এমবাপ্পের দম্ভ বাড়িয়ে দিচ্ছে?
ফ্রান্সের সাবেক এক স্ট্রাইকারের তো তেমনই মনে হচ্ছে। সাবেক সেই স্ট্রাইকারের নাম শুনে হয়তো খুব বেশি মানুষ তাঁকে চিনবেন না। ফ্রান্স দলের হয়ে মাত্র ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন জেরোম রোদেন নামের সেই স্ট্রাইকার, গোল করেছেন একটি। ২০০৪ ইউরোর ফ্রান্স দলে ছিলেন, গত দশকে খেলেছেন এমবাপ্পের সাবেক ও বর্তমান ক্লাব মোনাকো আর পিএসজিতেও। কিন্তু তাঁকে না চিনলেও এমবাপ্পেকে নিয়ে রোদেনের কথাটাই এমন যে তা নিয়ে আলোচনা এসেই যায়!
কী বলেছেন রোদেন? তাঁর চোখে, ফ্রান্স দলের জার্সিতে এমবাপ্পেকে বেশিই ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এমবাপ্পের মধ্যে একটা আত্মদম্ভী ভাব দেখতে পাচ্ছেন রোদেন, যে ‘ইগো’ সামলানোর ক্ষমতা ফ্রান্স দলের বর্তমান কোচ দিদিয়ের দেশমের নেই বলেও মনে হচ্ছে রোদেনের।‘ও মাঠে দলের নেতাদের একজন, এটা খুব ভালো ব্যাপার। কিন্তু ওর এই আত্মদম্ভী ভাবটা মাঠের বাইরেও চলে আসছে, এটা দেখে ভালো লাগছে না আমার। আমার মনে হয় না দিদিয়ের দেশমের আর এই দম্ভ সামলানোর সামর্থ্য আছে, আর এ কারণে এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দেশম যে ইচ্ছামতো অনেক কিছু করতে দিচ্ছেন, এটা দেখেই বরং বেশি আশ্চর্য লাগছে’—ফরাসি চ্যানেল আরএমসি স্পোর্তে বলেছেন ৪৩ বছর বয়সী সাবেক ফরাসি স্ট্রাইকার রোদেন।
এমবাপ্পের দম্ভ নিয়ে আলোচনা অবশ্য ইউরোর কদিন আগে থেকেই ঠারেঠোরে উঠেছিল। গত ৮ জুন বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ইউরো-পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেছিল ফ্রান্স, সে ম্যাচে দলের ৩-০ গোলে জয়ের পর ফ্রান্স স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরু অভিযোগ করেছিলেন, এমবাপ্পেসহ ফ্রান্স দলের সতীর্থদের অনেকে তাঁকে বল পাস দিতে চান না। যদিও সেদিন ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন জিরু। তবে সে ম্যাচে এমবাপ্পে বেশ কয়েকবার জিরু সুবিধাজনক জায়গায় থাকার পরও তাঁকে পাস দেননি বলে অভিযোগটা মূলত এমবাপ্পেকে নিয়েই ছিল বলে অনুমান।
ফরাসি দৈনিক লে’কিপ পরে জানিয়েছিল, জিরুর এই মন্তব্যে বিরক্ত এমবাপ্পে বুলগেরিয়া ম্যাচের পরের দিনই সংবাদ সম্মেলনে করে জিরুর কথার জবাব দিতে চেয়েছিলেন।
পরে ১৩ জুন ফ্রান্স দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে যান এমবাপ্পে, সেখানে জিরুর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নে পিএসজির ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকারের জবাব ছিল, ‘এখানে বড় ব্যাপারটা হচ্ছে জনসমক্ষে কথাটা বলা। জিরুর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে আমার দেখা হয়েছে, তাঁকে গোলের জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছি, তখন আমাকে তিনি কিছুই বলেননি। পরে সংবাদমাধ্যমে এসব কথা শুনলাম। তিনি কী বলেছেন, সেটার চেয়েও এভাবে সংবাদমাধ্যমে কেন বলেছেন, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যা বলেছেন, তাতে খারাপ কিছুই ছিল না।’
এমবাপ্পে-জিরুর এমন প্রকাশ্য বিভেদের পরও হয়তো এমবাপ্পের আত্মদম্ভ নিয়ে এত কথা উঠত না, যদি ইউরোতে এখন পর্যন্ত এমবাপ্পের পারফরম্যান্স তেমন ভালো হতো। কিন্তু গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে এমবাপ্পে না কোনো গোল করতে পেরেছেন, না পেরেছেন করাতে।
এখানেও এমবাপ্পের ‘ইগো’র প্রভাব দেখছেন রোদেন, ‘এটার প্রভাব মাঠে ওর পারফরম্যান্সেও দেখা যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত আমরা এটা বলতে পারি না যে কিলিয়ানের একটা সফল ইউরো কাটছে। পিএসজিতে গত মৌসুমের শেষ দিকে ও যে দারুণ উদ্যম নিয়ে খেলেছে, এখন কি তেমন দারুণ মানসিক অবস্থায় আছে? আমি তো বলব, না!’
এমবাপ্পেকে সেরাদের একজন ভাবলেও এখনই তাঁকে মেসি-রোনালদোর মতো ‘সেরাদের সেরা’র শ্রেণিতে রাখতে রাজি নন রোদেন, ‘কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছ থেকে আরও ভালো কিছু আশা করি আমরা। সবাই বোঝে যে এমবাপ্পে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। কিন্তু যদি এখনই তাঁকে একেবারে সেরাদের সেরার ক্যাটাগরিতে রাখতে চান, আপনার মন সেটিতে সায় দেবে না।’
রোদেনের চোখে এই ইউরোতে আরেকটা দিকেও এমবাপ্পে অযথা বাড়াবাড়ি করছেন বলে মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইউরোতে ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি ফ্রি-কিক, কর্নার নিয়েছেন এমবাপ্পে।
কিন্তু সেট-পিসে ফ্রান্স দলে এমবাপ্পের চেয়েও ভালো অনেকে আছে জানিয়ে রোদেনের বিশ্লেষণ, ‘ও কি এটা বুঝতে পারে যে সেট-পিসে দলের আরও কয়েকজনের মতো দারুণ মান ওর নেই? হয়তো অনুশীলনে ও এগুলো থেকে গোল করে। কিন্তু এমবাপ্পের সব কটি ম্যাচ আমি দেখেছি। আপনি ওর একটাও দারুণ ফ্রি-কিকের কথা মনে করতে পারেন? ধরুন ২৫ মিটার দূর থেকে? অন্য দিকে গ্রিজমানের এমন কয়েকটা গোল আমি মনে করতে পারি, পগবারও…এখানেই তো দুজন হয়ে গেল। একজন ডান পায়ের, অন্য বাঁ পায়ের। তাহলে এমবাপ্পে ওখানে কী করে?’
জার্মানি, পর্তুগাল ও হাঙ্গেরিকে নিয়ে ‘মৃত্যুকূপ’ খ্যাতি পাওয়া গ্রুপের শীর্ষ দল হয়ে ইউরোর শেষ ষোলোতে উঠেছে ফ্রান্স। সেখানে আগামী সোমবার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নামবেন এমবাপ্পেরা।