কি দেবো তোমাকে আমি
প্রেমের কি দাম দেওয়া যায়
দিবস আর রাত্রি ফুরায়
আমার হিসেব থাকে ফাঁকা
জীবনের চোরা স্রোতে
ভুল রঙে আঁকা
কিছু ছবি ভেসে উঠে নির্জীব নিথর
বুকের কবাট খুলে
দেখি শুধু পাথর পাথর।
পথ যায়, পথ চলে যায়
প্রেমিকার মালা খানি
অযত্নে শুকায়
তবুও আকাশ নীল, পাখি উড়ে
ছায়া পড়ে বেদনার ঘরে
বেঁচে থাকা
মগের মুলুকে।
কথা-ধ্বনি, সুর-ছন্দের ভেতর
হঠাৎ মৃতপ্রায় নগর
চিন্তার বাহকেরা থিতু হয়ে আছে
পাতায় পাতায়
আর শিরীষের গাছে
লেখা থাকে অযাচিত প্রাণ
এমনি কাঁচের ঘরে
ভেঙ্গে খান খান।
চাঁদ গেছে মৌমাছি হাটে
নিমিষেই সোনা ধান ফেটে
বেরিয়ে পড়লো এক অবাধ জমিন
তারপর তৃ-প্রহরে
রাত্রির শেষ ঘোরে
অর্বাচীন টেনে নিলো নিজ আস্তিন
ভরা শুধু দুঃখ ও ব্যাথা
মানুষেরা মরে যায়
থাকে রূপকথা।
যদিও জানতো চেরাগের খৈ
মানুষের ধরাবাঁধা কৈ-
মাছের যে প্রাণ আছে
তার চেয়ে বৃথা
মাসুষের কীই থাকে আর
থাকে শুধু ব্যাথা।
তারপর দেহটাকে
টেনে হিঁচড়ে ছুড়ে পাঁকে
মাটি ও মানব মিশে কুমোরের হাতে
যাই থাক, শূণ্য অনেক
জীবনের ধারাপাতে।
ধারাজল বর্ষার মতো
ঢেউয়ে ভাঙ্গে কূলের কুশল
ছল ছল আঁখি কোণে ভেসে থাকে
হিমালয়ে সঞ্চিত জল
আর থাকে সুগভীর ক্ষত।
কি আর যে দিতে পারি আমি
সবচে যে দামী
এ আমার পবিত্র হৃদয়
তাই আজ নিতে পারো
যদি না ঔদ্ধত্য ধরো
আপন গুণেতে যদি
হও গো সদয়।
যা কিছু আমার ভাবি
তোমারই তো এই সবই
কি দেবো কি দেবো তোমাকে!
এখন আপন গুণে
দয়া করো অভাজনে
দায়-শোধ হতে তুমি
বাঁচাও আমাকে।
তোমার হাসির সুরে
পৃথিবীতে, অন্তঃপুরে
জাগে সুখ, জাগে কোলাহল।
জীবনের অমিত ত্যাজে
নিজ কাজ ভেবে লাজে
চিরদিনই পান করে
গেছি হলাহল।
দুঃখের এ অসম প্রেম
বেদনায় ভারী ভালোবাসা
নির্জীব কিছু কিছু আশা
আর কিছু মরিচিকা নিয়ে
শোণিতের দীপ-শিখা দিয়ে
উজ্জ্বল করে তুলি
তোমার হেরেম।
হে বিলাসী, হে সুন্দরী প্রেমা
আমার জীবন জুড়ে
নেমে এলো অমা
নিজ হাতে নিজ গোর খোঁড়ে
চাইছি তোমার কাছে শুধুই মহিমা
শুধুমাত্র ক্ষমা।
ক্ষমারও অযোগ্য আমি
কর্মফলে বদনামী
অর্জন বলতে শুধু পাপ
তাই শুধু বাড়ে মনস্তাপ।
তোমার দুয়ারে আমি
ভিখিরির অধম
মানব মুখোশ পরা তুচ্ছ নরাধম
তোমারই করুণা কামী
নিশি দিন বসে আছি দ্বারে
ওগো অন্তর্যামী!
গোলাপের কাঁটার মতো
কিছু দুঃখ একান্ত গোপনে থাকে
বলা যায় না সে ব্যাথা
সহ্যের সীমাও ছাড়ায়
ভেতরে ভেতরে।
কিছু প্রেমসত্যিই অর্থহীন হয়
মুখ বুঁজে সয়ে সয়ে
একসময় বাকরুদ্ধ হয়ে যায়
প্রেমিক।
কিছু নারী নামমাত্র নারী
রমনে জাগে না তারা
জাগাতে পারে না তার সঙ্গীকে
গোলাপের কাটার মতো কিছু অসুখ
ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত করে চলে
বহিঃদৃশ্যে শোভা, রূপ দেখে
নির্বোধ পতঙ্গের মতো আটকে যায়
পুরুষ।
কিছু না পাওয়ার জবাব যায় না পাওয়া
ধুঁকে ধুঁকে ছাই হতে হতে
বুকের ভেতরে জাগে ঘৃণার চিতা।
কিছু কষ্ট এমনও আছে
লুকোবার স্থান হয় না কোথাও
দিন দিন প্রতারিত হয়ে
প্রেমিকেরও হতে হয় বহুগামী।
আমি সর্বনাশা শীতের কথা বলছি
আমি সেইসব নারীদের কথা বলছি
চোখের মণিতে যারা ধরে না বিদ্যুৎ
বুকের গভীরে যাদের শীতল পাহাড়।
কিছু কিছু অতৃপ্তি থেকে যায়
ইতিহাসে যুগে যুগে
ইমারত ভেঙ্গে পড়ে–
ভাঙ্গে সংসার
সে সকল অতৃপ্ততা থেকে।
থাকে বিরহের রেখা
মিলনেও
পাথরে শষ্য বুনে
যে কৃষক মৌজ করে বেড়ায়
তারও কি চোখের জলে
বালিশ ভিজে না?
কিছু কিছু অন্ধকার থেকে থাকে
শতবার আলো জ্বেলে জ্বেলে
যে গুহার আঁধার কাটে না
সেখানে, সে অপ্রেমের হ্রদে
পাকা ডুবুরিও
সাঁতার জানে না।
বাতাসে নীল রং মিশে থাকে
নীল থাকে কারও কারও হৃদয়েও
সারাক্ষণ মেঘ-গম্ভীর মৌনতা
কোনো কোনো প্রেমে টেনে দেয়
ইতি।
আমি সেইসব প্রস্তর মানবীর
কথা বলছি
আমি সবকিছু খুইয়ে আসা
নর্তকীর কথা বলছি
আবেগে আসে না যাদের ঝড়
চেনা পথও অচেনা তখন।
কিছু কিছু রোদন থাকে নীরবে
চোখ দিয়ে জল আসে না
শুধু সয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
কলুর বলদ।
আমি সেইসব দুর্বলতার কথা বলছি
আমি সেইসব দহনের কথা বলছি
গোলাপের কাঁটার মতো রক্তাক্ত হবে
নিজের ভেতর নিজে মরে যাবে
কারো কাছে বলাও যাবে না।
দুয়েকটি খাজিনায় নির্ঘুম
বোশেখের দুপুর, উঁচু গাছের দু’য়েকটি পাতা নড়ছে
আবার স্থির হয়ে থাকছে যেনো বা মহাকাল
সমস্ত আকাশজুড়ে মেঘ নেই, ধাধা রোদ
দুয়েকটি চড়ুইয়ের ডাক শুনি,
দূরে কোথাও মোরগ ডাকছে দুটো
ধাতব আবহে এক খণ্ড বাতাস অপরূপ
রোদ বলতে যে দিঘীটা আর চড়ুইয়ের কানে স্বর্ণলতিকা
একটি কাক কি ডেকেছিলো দৃশ্যপর্বটি শুরুর আগে?
তোমরা কিচ্ছু জানো না
তোমরা জানো, এখন সুর্য নেই
বেলা নেই
শুধু মরিচিকা চারপাশে
তোমরা জানো, ফসলের বুক থেকে
উঠে গেছে মৃত্তিকার ঘ্রাণ
নদীজুড়ে চর
আর বিছানো চাদর
কুচকে যায় ঝড়ে
তোমরা জানো
আমি সিগ্রেট খাবো
এবং ঘুমুবো অনন্ত নিষিদ্ধতায়
অসংযত সত্য উচ্চারণ
আবার যখন তুমি ইনবক্স দেখবে
সর্বপ্রথম তুমি যে নাম প্রত্যাশা করো সেটি নিশ্চই আমি নই
একটি সন্ধ্যা রাগকে তমি করুণ সুরে বাজাতে চাইছো
অস্তরাগে দেখতে চাইছো শোকাহত আকাশ
তোমার যন্ত্রণাগুলোকে লিপিবদ্ধ করতে চাইছো দিন শেষে
তবে জেনে রেখো, আমি তোমার সে সংগীত নই
সে রক্তজবা আকাশ নই এমনকি তোমার দিনলিপি নই
একটি হাহাকার ভরা মাঠে তুমি আবার বৃষ্টি হয়ে আসবে
জেনে রেখো, আমি কোনো চাতক হয়ে অপেক্ষায় বসে নেই