8.9 C
Düsseldorf

ঈশ্বর আছে নাকি নাই??

Must read

একঃ বুদ্ধ একদিন তার অনুচর আনন্দকে নিয়ে তার আশ্রমে অবস্থান করছিলেন। সেদিন সকালে একজন এসে তাকে প্রশ্ন করলেন, ঈশ্বর কি আছেন ? বুদ্ধ উত্তরে জানালেন, না নেই। সেদিন বিকেলে গ্রামের আর একজন এসে উনাকে একই প্রশ্ন করলেন, উত্তরে বুদ্ধ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আছেন। সেদিন সন্ধ্যায় তৃতীয় একজন এসে বুদ্ধকে আবারএকই প্রশ্ন করলেন। প্রশ্ন শুনে উনি চোখ বন্ধ করে চুপ রইলেন। উনার এই অবস্থা দেখে প্রশ্নকর্তাও চোখ বন্ধ করে চুপ রইলেন। কিছু সময়পর প্রশ্নকর্তা অভিভূত হয়ে আবেগে বুদ্ধ’র পা জড়িয়ে ধরে বললেন, আপনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বুদ্ধর এরুপ উত্তর শুনে অনুচর আনন্দ বিভ্রান্ত হয়ে গেল। সকালে উনি বললেন, না ঈশ্বর নেই। দুপুরে বললেন, হ্যাঁ ঈশ্বর আছেন। আর সন্ধ্যায় কোন উত্তর না দিয়ে চুপ রইলেন। ব্যাপারটি আসলে কী ? আর আসল সত্যই বা কী ? অবশেষে বুদ্ধ যখন ঘুমাতে যাবে সেই সময় আন্দন্দ বলল, প্রভু অনুগ্রহ করে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন, তা না হলে আমি সারারাত ঘুমাতে পারব না, আপনি কেন তিন জনের সাথে তিন রকম বললেন? ওই তিন ব্যক্তি আপনার সব উত্তর শোনেননি, যা আমি শুনেছি। আমার মন খুবই বিক্ষুব্ধ।

তখন বুদ্ধ বললেন, প্রথম ব্যক্তিটি ছিলেন আস্তিক। উনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু আমি তাকে বলি ঈশ্বর নেই এর কারণ আমি চেয়েছিলাম তিনি ঈশ্বরের ধারণা পরিত্যাগ করুক। ঈশ্বরের ধারণা থেকে সে মুক্ত হোক। ঈশ্বর ধারণাটি তিনি অন্যের কাছ থেকে ধার করেছেন। ঈশ্বর সম্পর্কে উনার কোন অভিজ্ঞতা নেই, যদি থাকতো তিনি প্রশ্নটি করতেন না। এরপর তিনি বললেন দ্বিতীয় ব্যক্তিটি ছিলেন একজন নাস্তিক। ঈশ্বরে তার কোন বিশ্বাস ছিল না। যে ব্যক্তিটি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, তার বিশ্বাসও অন্যের কাছে ধার করা প্রথম জনের মতো। যে কোন বিশ্বাসই সত্য উপলব্ধির জন্য একটা বাঁধা। আসলে বিশ্বাস তখনই করা উচিত যখন বিষয়টি জ্ঞাত, আর বিষয়টি জ্ঞাত হলে তখন আর তা বিশ্বাস থাকে না, তখন সেটা হয়ে যায় সম্পূর্ণ আলাদা এক অভিজ্ঞতা। আর অভিজ্ঞতা নিজে অর্জন করতে হয়। কখনই অন্যের অভিজ্ঞতা দিয়ে অর্জন করা যায় না।যার মধ্য দিয়ে মানুষের নবচেতনার উন্মেষ ঘটে তাকে আর অন্যকে প্রশ্ন করার দরকার হয় না। তাই দ্বিতীয় জন যিনি নাস্তিক ছিলেন তাকে জোর দিয়ে আমার বলতে হয়েছে যে, হ্যাঁ ঈশ্বর আছেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি একজন অজ্ঞেয়বাদী। উনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেনা আবার স্বীকারও করেনা। উনি চুপ ছিলেন তার মানে উনি প্রকৃত জিজ্ঞাসু। আর সেজন্য আমিও চুপ ছিলাম যার মানে অবান্তর প্রশ্ন করোনা নিজে জানো। আসলে উনাদের উত্তরের সাথে ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক ছিল না, সম্পর্ক শুধু প্রশ্নকর্তার সাথে ছিল।

দুইঃ ঈশ্বর আছে কি নাই সেটা এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। একসময় ঈশ্বরের সব কিছু ধর্মের অধিকারে ছিল এবং সে সম্পর্কে কোন কিছু বলার অধিকার একমাত্র ধর্মের হাতেই ছিল। এখনো সেটা ধর্মের হাতেই বেশি আছে তবে মনে হয় এখন সময় এসেছে ধর্মের চেয়ে বিজ্ঞানের এ বিষয়ে কিছু বলার অধিকার বেশি আছে। কিন্তু তারপরও ঈশ্বর আছে কি নাই সে বিষয়ে বিজ্ঞান কি এক্সজাট কিছু বলতে পারে???

জগৎ সৃষ্টিঃ বেশিরভাগ ধর্মে জগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের নিজ নিজ বর্ণনা রয়েছে। এক ঈশ্বরবাদী ধর্মগুলো যেমন খ্রিস্টান, ইসলাম এবং ইহুদি ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টির আদিতে কিছুই ছিল না তারপর ঈশ্বর সাতদিন ধরে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিকে হিন্দু ধর্ম অনুসারে ব্রক্ষ্মা জলজ পরিবেশে তার সাপের উপর নিদ্রারত ছিলেন, তার নাভিকমল থেকে বিষ্ণুর জন্ম হয় এবং তার কানের ময়লা থেকে মধু এবং কৈটভ নামে দুই দৈত্যের জন্ম হয়। এই দৈত্য দুইজন বিষ্ণুকে মারতে উদ্যত হলে বিষ্ণু ব্রক্ষ্মার তপস্যা করে তার নিদ্রা ভংগ করে। তখন বিষ্ণু ওই দুই দৈত্যকে হত্যা করে এবং তাদের মেদ থেকে মেদিনী বা পৃথিবীর সৃষ্টি করেন এবং পরে সমস্ত জীবজগত সৃষ্টি করে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বলে এখন থেকে প্রায় সাড়ে তের বিলিয়ন বছর আগে এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে এই জগতের সৃষ্টি হয় যাকে বিগ ব্যাং বলে। স্টিফেন হকিং তার গ্রান্ড ডিজাইন বইয়ে লিখেছেন বিগ ব্যাং এর আগে সময় বলে কিছুই ছিল না, যেহেতু সময় বলে কিছু ছিল না সুতারাং ঈশ্বরের হাতে জগৎ বানানোর মত কোন সময়ই ছিল না, অর্থাৎ ঈশ্বর থাকার কোন সম্ভাবনা নাই।কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আরো বলে হইত বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে আমাদের এই ইউনিভার্স সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু স্টিং থিওরি বলে যে আমাদের এই ইউনিভার্স এর বাইরে হইত আরও লক্ষ্য লক্ষ্য ইউনিভার্স আছে আর সেগুলো কিভাবে হল তার এখনো কোন ভালো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই। তাছাড়া কোনকিছু ছাড়া কিভাবে বিগ ব্যাং বিস্ফোরণ ঘটল তারও পুরোপুরি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে উত্তর হতে পারে ঈশ্বর এই বিগ ব্যাং ঘটিয়েছেন। সেক্ষেত্রে দর্শনের যুক্তি অনুসরণ করলে প্রত্যেক ঘটনার পিছে একটা কারন থাকে। তাহলে ঈশ্বর যদি জগৎ সৃষ্টি করে তাহলে ঈশ্বরকে কে বানালো?? বেশির ভাগ ধর্মে বলে ঈশ্বর সয়ম্ভু, তিনি সব সময় ছিলেন তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। সেক্ষেত্রে এটা কোন যুক্তি মানে না।

প্রাণের সৃষ্টিঃ প্রায় সব ধর্মের মতে ঈশ্বর নিজ হাতে সময় নিয়ে সব প্রাণীদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বে আমরা জানতে পারি যে আজকের সমস্ত প্রানীজগৎ কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের ফসল। এককোষী প্রাণী থেকে বহুকোষী প্রাণী, তারপর প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে,পরিবর্তনের মাধ্যমে যারা বেঁচে গেছে তারাই টিকে থাকতে পেরেছে। এভাবেই আজকে আমাদের এই প্রাণী জগৎ। কিন্তু এখানেও বিশাল প্রশ্ন থেকে যায়। ডারউইবের বিবর্তনবাদের মাধ্যমে কিভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে একপ্রানী থেকে অন্য প্রাণী সৃষ্টি হল তার প্রমান পাওয়া যায় কিন্তু কিভাবে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হল তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

প্রকৃতির নিয়মঃ আইন্সটাইনের একটা বিখ্যাত উক্তি হল “God does not play dice” এর মাধ্যমে উনি বুঝাতে চেয়েছেন প্রকৃতির এই যে হারমনি, রিদম, শৃঙ্খলা এগুলো কি র‍্যান্ড্যামলী হওয়া সম্ভব??? পাশা খেলার মত ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে এগুলো কি আসলেই হতে পারে?? বিজ্ঞানীরা সাধারনত প্রকৃতির যে সুত্র সেটা আবিস্কার করতে পারে কিন্তু এই সূত্রগুলো কিভাবে তৈরি হল তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারে না। সেক্ষেত্রে হয়ত একজন সৃষ্টিকর্তা থাকতেও পারে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল যদি সৃষ্টিকর্তা থেকেই থাকে তাহলে উনি কে?? ঈশ্বর আছে সেটা প্রমান করা যেমন কঠিন ঈশ্বর নাই সেটা প্রমান করাও খুব কঠিন। তবে আমাদের এস্টাবেলিশ ধর্মগুলোর যেসব ঈশ্বর আছে এগুলো যে সবই কল্পনা আর মানুষের তৈরী সেটা প্রমান করা একেবারেই সোজা। বিজ্ঞান আমাদেরকে এভিডেন্স দেয় কিন্তু ধর্ম না বুঝে শেখায়। বিজ্ঞান সব জানে না কিন্তু চেস্টা করে যাচ্ছে, সাইন্স আক্তিভ সিকিং করে কিন্তু রিলিজিয়ন পুরাই উল্টো, তাদের উত্তর ঈশ্বর সব করেছে জানার দরকার নাই।

তিনঃ ছোটবেলায় প্যাস্কেলের সূত্র দিয়ে অনেক অংক করা লাগছে কিন্তু তখন তার বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছুই জানতাম না, পরে জানলাম মানুষটা খুবই জুয়া খেলতেন এবং এই জুয়া খেলতে খেলতে প্রোবাবিলিটির সূত্র আবিষ্কার করে ফেলেন। ঈশ্বর নিয়েও তিনি জুয়া খেলেছিলেন যেটাকে প্যাস্কেল ওয়েজার বলে। সেটা অনেকটা এরকম
“যদি কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, এবং ঈশ্বর থাকে = প্রচুর লাভ
যদি কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, কিন্তু ঈশ্বর নাই= লাভও নাই, ক্ষতিও নাই
যদি কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না কিন্তু ঈশ্বর আছে= প্রচুর মারবে”
সুতারং ঈশ্বর থাক বা না থাক ঈশ্বরে বিশ্বাস করাটাই নিরাপদ। ঈশ্বর আছে কি নাই আমি জানি না, কিন্তু আমার মনে হয় নাই। চারিদিকে এতো এতো বৈষম্য চোখে পড়ে যে মনে হয় উনি থাকলে এসব হত না। কেন এই অনিয়ম!!! আমার মনে হয় উনি থাকলেও উনার একচোখ কানা।

- Advertisement -spot_img

More articles

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ আপডেট