সামাজিক দূরত্ব— কেবল এই শব্দটাই এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষকে অতিমারি করোনার হাত থেকে বাঁচাতে পারে, এমনটাই মত চিকিৎসদের। পরিস্থিতির গুরুত্বের কথা বুঝতে পারছেন অনেকেই।এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ প্রথমেই বেছে নিচ্ছেন ব্যক্তিগত যানবাহনকে। তাই বিক্রি বেড়েছে সাইকেলেরও।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যাতায়াতের ক্ষেত্রে গণ-পরিবহণ এড়িয়ে চললে সংক্রমণের সম্ভাবনাও কিছুটা কমতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সাইকেল হয়ে উঠতে পারে আপনার যাতায়াতের নিত্যসঙ্গী। বিনিয়োগ এককালীন। মেনটেন্যান্সের খরচও যৎসামান্য। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবহারে শারীরচর্চার বন্দোবস্ত। এক কথায়, লাভজনক প্যাকেজ!
পরিবেশ-বান্ধব, স্বাস্থ্যকর আর সাশ্রয়ী- সব দিক দিয়েই বাহন হিসাবে এগিয়ে বাইসাইকেল৷ সেই চিন্তা মাথায় রেখে নিজেদের এলাকাকে সাইকেল-বান্ধব করেছে ইউরোপের বিভিন্ন শহর৷ সাইকেল-বান্ধব এমন কয়েকটি শহর সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক এক নজরে।
কোপেনহেগেন
ডেনমার্কের রাজধানী শহরে রয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারের সাইকেল নেটওয়ার্ক৷ সাইকেলকে মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও ৷ সিগন্যালে সাইকেল নিয়ে অপেক্ষার জন্য আছে সুন্দর ব্যবস্থা৷ কোপেনহেগেনে ৬২ শতাংশ মানুষ সাইকেল চড়ে কাজে যান৷ সাইকেল-বান্ধব নগর গড়ার উদাহরণ হিসাবে ‘কোপেনহেগেনাইজ’ শব্দটি তাই জায়গা করে নিয়েছে ইংরেজি অভিধানে৷
আমস্টারডাম
সাইকেল-বান্ধব শহরগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম৷ এখানকার সাইকেল-চালকেরা প্রতিদিন প্রায় দুই মিলিয়ন কিলোমিটার পথ চলেন৷ উটরেস্ট এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বড় সাইকেল পার্কিং, যেখানে সাড়ে ১২ হাজার সাইকেল রাখা যায়৷ ২০২১ সালের মধ্যে এটাকে ৩৩ হাজারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ৷
আন্টভের্প
বেলজিয়ামের আন্টভের্প শহরের সাইকেল পার্কিং অগণিত আর সেগুলোর অবকাঠামো অভিভূত করে সবাইকে৷ সাইকেলের পথ বাড়ানোর পাশাপাশি কেবল সাইকেল আর পথচারীদের জন্য তিনটি সেতু তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ৷
প্যারিস
কয়েক বছর ধরে সাইকেল নেটওয়ার্ক বাড়াচ্ছে প্যারিসের নগর কর্তৃপক্ষ৷ শহরের নানা জায়গায় রয়েছে বাইসাইকেল স্টেশন৷ পর্যটকেরাও সাইকেল নিয়ে ঘুরতে পারেন পুরো শহর৷ অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেল ভাড়া নেওয়া সেখানে বেশ জনপ্রিয়৷
মালমো
সাইকেলের জন্য অবকাঠামো বাড়াতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে সুইডেনের মালমো শহর৷ এখানে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সাইকেলের রাস্তা রয়েছে৷ মালমো আর কোপেনহেগেনের মধ্যে ফেরি পারাপার সেখানকার বাইসাইকেল পর্যটনকে বেশ জনপ্রিয়তা দিয়েছে৷ কোথাও কোথাও হোটেলের সামনেই মিলবে সাইকেল স্টেশন আর ওয়ার্কশপ৷
ট্রন্ডহেইম
নরওয়ের শহর ট্রন্ডহেইম৷ পাহাড়ি এই নগরে চালু আছে ‘ট্রাম্পে’ নামে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাইসাইকেল উঠানামার ব্যবস্থা৷ প্রতি ঘন্টায় সেখানে ৩০০ সাইক্লিস্টকে ১৩০ মিটার উচ্চতায় আনা-নেওয়া করা হয়৷ পাহাড়ি পথেও সাইকেল নিয়ে চিন্তা নেই, এর চেয়ে স্বস্তির আর কি হতে পারে!
ম্যুনস্টার
জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ার ম্যুনস্টার এলাকায় মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ সাইকেলের জন্য চওড়া রাস্তা, পর্যাপ্ত পার্কিং আর সমতল ভূমির কারণে সেখানে এই দ্বিচক্রযান এতো জনপ্রিয়৷
বার্সেলোনা
২০০২ সালেও ভাড়ায় বাইসাইকেল পাওয়া যেত স্পেনের বার্সেলোনা শহরে৷ কেবল সাইকেলের জন্য রয়েছে ১৫৮ কিলোমিটার রাস্তা৷ অনেক জায়গায় গাড়ির গতি ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখায় সাইক্লিস্টদের জন্য এলাকাটি বেশ নিরাপদ৷ পর্যটকেরা যাতে বাইসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন, আছে সেই ব্যবস্থাও৷
বাসেল
সুইজারল্যান্ডের বাসেল অনেকটা সমতল এবং দর্শনীয় স্থানগুলোও কাছাকাছি৷ গ্রীষ্মে ‘স্লো আপ’ নামে গাড়িমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয় সেটিকে৷ প্রচুর লোকের সমাগম হওয়ায় তখন ৩০ কিলোমিটার এলাকা নির্ধারিত রাখা হয় কেবল সাইক্লিস্টদের জন্য৷ একইসঙ্গে সাইক্লিস্টদের আনন্দ দিতে থাকে বহু আয়োজন৷
এই করোনা কালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাইকেল হোক বিশ্বস্ত সঙ্গী।