মার্চের শেষে ইউরোপীয় কাউন্সিল ইইউ-তুরস্ক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে গ্রীস, সাইপ্রাস, আন্তঃককেশীয় দেশগুলো, মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি আঙ্কারার নীতির বিস্তার করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ এবং ইউরেশিয়ান মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যবাদি উচ্চাকাংক্ষার কারণে ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়গুলো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, ইইউ-তুরস্ক সম্পর্কের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশটি ইউরোপে তুরস্কের সুসংহত ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণের প্রতি আঙ্কারার প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে। শিক্ষাক্ষেত্র, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মতো নরম শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানে তুরস্কে তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা ২০টিরও বেশি দেশের জনগণের মধ্যে তুর্কিপন্থী বিশ্বদর্শন তৈরির জন্য কাজ করছে। যেমন, ফ্রান্সে মিনাউ কোয়ার্টারের স্ট্রসবার্গ মসজিদটি নিও-অটোমান স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি, যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক তুর্কি বাস করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, শহরটির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মেয়র জ্যানে বার্সেঘিয়ানের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পটির অর্থায়ন আংশিকভাবে ফরাসী করদাতাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।
জার্মানি, যেখানে বর্তমানে ৩ কোটিরও বেশি তুর্কি বাস করেন, সেখানে শহরগুলোতে তুর্কি সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব সম্প্রদায় তৈরি করে ইসলামী আইন এবং আধিপত্য বিস্তার করেছে। ব্রিটেনে সরকার শরিয়া আদালতের একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অস্ট্রিয়ান শহর টেল্ফসে ধাতুশিল্প, পর্যটন এবং রেস্তোঁরা ব্যবসায় তুরস্কের ভাষণ শোনা যায়, তুরস্কের পণ্য স্থানীয় দোকানগুলোতে বিক্রি হয়। সেখানে অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় মুসলিম মসজিদ ‘এয়ুপ সুলতান’ খোলা হয়েছে এবং শহরটির রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণরূপে তুর্কি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
বেলজিয়ামের লিইজের নিকটবর্তী আর্দেনেসের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ফেমোনভিলে গ্রামটিকে ‘বেলজিয়ামের তুরস্ক’ বলা হয়। সেখানে বেলজিয়াম এবং ওয়ালোনিয়ার পতাকাগুলোর পাশে তুর্কি পতাকাও উত্তোলিত থাকে। ফেমোনভিলের বাসিন্দারা ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক পরে, মুসলিম উৎসবে অংশ নেয় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা ইসলাম গ্রহণ করেছে।
তুর্কি নৃবিজ্ঞানী আয়েশা চাওদার এবং সমাজবিজ্ঞানী কামাল বোজে নিশ্চিত যে, ইউরোপ ইতোমধ্যে শিশুদের পড়াশুনা থেকে শুরু করে পারিবারিক ঐতিহ্য পর্যন্ত জীবনের সকল ক্ষেত্রে এরদোগানের ইসলামি চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
তুর্কি বংশোদ্ভূত অস্ট্রিয়ান অভিবাসী ইনান তুর্কম্যান তার ‘আমরা আসছি’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইউরোপীয়রা তা চাক বা না চাক, ইউরোপের ভবিষ্যত হ’ল তুরস্ক। তুর্কমেন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের পছন্দ করুন বা না করুন, আপনারা আমাদেরকে গ্রহন করুন বা না করুন, আপনারা আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেখতে চান, বা না চান, আমাদের প্রভাব ইউরোপে নিবিড়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা তরুণ,সংখ্যায় অধিক এবং অধিকতর উচ্চাভিলাষী। আমাদের অর্থনীতি দ্রুত হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা আরও শক্তিশালী।’
সূত্র : গ্রিক রিপোর্টার।