আনন্দ বাজারে বেদনার সুর; তথ্যের মৃত্যু

Must read

গোলজার হোসাইন খান
আমি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর একজন অবসরপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার।অতি সাধারণ মানুষ। কোন উচ্চাভিলাষ নেই। সাংসারিক বোধবুদ্ধি শূন্যের কোঠায়। হেরে যাওয়া মানুষের পাশে থাকি।এড়িয়ে চলি স্বার্থপরতা।বিনম্র শ্রদ্ধায় নত হই সৃষ্টিশীল-পরিশ্রমী মানুষের প্রতি আর ভালবাসি আমার পেশাকে।

হিসাব মিলছে না। গুজরাট,মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যায় গরমিল নিয়ে আনন্দ বাজার পত্রিকায় গুরুতর অভিযোগ সম্বলিত নিবন্ধ ছাপা হয়েছে আজ। সরকারি কর্তারা কোভিড-মৃত্যুর তালিকায় যে সংখ্যা দেখাচ্ছেন, এক-একটি শ্মশানে তার চেয়ে বেশি চিতা জ্বলছে। শ্মশানের নথি অনুসারে, সেইগুলি কোভিড-মৃতের। চলতি মাসে গুজরাটের সুরাতে, মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এমনই ঘটেছে। ৮ এপ্রিল সরকারি মেডিক্যাল বুলেটিনে সারা রাজ্যে ২৭টি মৃত্যুর উল্লেখ আছে। কিন্তু কেবল ভোপালেই সে দিন ৪১ কোভিড-মৃতের সৎকার হয়েছে, বিধি অনুসরণ করে। উত্তরপ্রদেশে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোভিড-মৃতের সংখ্যা সরকারি ঘোষণা অনুসারে ১২৪, কিন্তু শ্মশান-কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে চারশোরও বেশি। গুজরাটের আমদাবাদে সাংবাদিকরা কেবল একটি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড হতে যে কয়টি মৃতদেহ বের করতে দেখেছেন, তার সংখ্যা সরকারি ভাবে ঘোষিত মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় তিনগুণ।

তবে কি বিভিন্ন রাজ্যের সরকার মৃত্যু গোপন করে কোভিড অতিমারির আগ্রাসী রূপকে গোপন করছে? এই অভিযোগ গুরুতর; এবং সংশয় নিরসনের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। কোনও রাজ্যই এই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর দেয়ার চেষ্টাটুকুও করে নাই। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী ‘কোভিড-মৃত’ বলে গণ্য করার শর্ত ব্যাখ্যা করেছেন— যদিও ‘কো-মর্বিডিটি’ তত্ত্ব বহু পূর্বেই খারিজ হয়েছে। করোনা পজ়িটিভ অবস্থায় মৃত্যু হলে তা কোভিড-মৃত্যু গণ্য করার বিধি স্পষ্ট করা হয়েছে।
প্রশ্নকারী হয় মূর্খ, নয় কুচক্রী, অতএব উত্তর দিবার প্রয়োজন নাই— ক্ষমতাসীন দলের এই মনোভাব অজানা নয়। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া বা কোভিড, যে কোনও রোগ মহামারি হয়ে উঠলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও যথাযথ পরিসংখ্যান জানাতে অস্বীকার করছে।এমন অভিযোগ বহুশ্রুত। আজ অতিমারিতে মৃতের সংখ্যার অসামঞ্জস্য নিয়ে অতি সঙ্গত প্রশ্ন তুললেও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তা উপেক্ষা করছে, অথবা অসার উত্তর প্রদান করছে। তবে কি ধরে নিতে হবে, সত্যের সাথে তথ্যের সকল সম্পর্কই ছিন্ন হয়ে গেছে? সুরাট, ভোপাল, লক্ষ্ণৌতে প্রিয়জনের দেহ দাহকার্যের জন্য ছয় ঘণ্টা-আট ঘণ্টা প্রতীক্ষা করতে হচ্ছে স্বজনদের। দিল্লির কবরস্থানে নূতন জায়গা করতে মাটি খোঁড়ার যন্ত্র আনা হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে কোভিড-মৃতদের জন্য চিহ্নিত দাহস্থানগুলির বাইরে শববাহী গাড়ির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। অথচ, রাজ্য সরকারগুলি যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা সামান্য।

বাস্তবের সাথে তথ্যের এই বিচ্যুতি মানুষকে আরও আতঙ্কিত করে তোলে, আর তীব্র হয়ে ওঠে তার অসহায়ত্ব। যে সরকার বালিতে মুখ গুঁজে সত্যকে অস্বীকার করছে, সে অতিমারির মোকাবিলা করার কোনও চেষ্টাই করবে না— এই আশঙ্কার উদয় হতে বাধ্য। মৃত্যুর তথ্যকে গোপন করার এই অপচেষ্টারই প্রতিফলন, সরকারি হাসপাতাল হতে মৃতদেহগুলি গোপনে অপসারণ করার ঝোঁক। শ্মশানে একই চিতায় পাঁচ-ছয়টি দেহ দাহ করা হচ্ছে, কখনও মাটিতে গর্ত করে গণচিতায় দাহ করা হচ্ছে। জীবনে যেমন, মৃত্যুতেও তেমনই, রাষ্ট্র অস্বীকার করছে রোগপীড়িত নাগরিকের অস্তিত্ব।

- Advertisement -

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে অনুগ্রহ করে আপনার নাম লিখুন

Exit mobile version