৬০ বছর হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পথ চলার৷ এক আইনজীবীর উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করার সময়ে ফিরে গিয়ে দেখে আসা যাক সংগঠনটির এই পথ পরিক্রমা৷
১৯৬১ সালে দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পর্তুগালের স্বৈরাচারি সরকার৷সেই দুজন এবং এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো যারা কারারুদ্ধ আছেন তাদেরও মুক্তির দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি আর্টিকেল লেখেন পিটার বেনেসন৷ ব্রিটিশ আইনজীবী বেনেসনের লেখাটি সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে৷তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক বন্দিদের রক্ষা করা৷ তাই সাউথ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, রাশিয়ার আলেক্সি নাভালনিসহ বিশ্বের অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির পাশেই দাঁড়াতে দেখা গেছে ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটিকে৷এক সময় বিভিন্ন দেশে নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করে অ্যামনেস্টি৷
১৯৭০-এর দশকে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক বন্দিদের ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হতো৷ বিশেষ করে সামরিক সরকারগুলোর মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যেতো৷ অ্যামনেস্টি সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে৷এর ফলে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে ওঠায় জাতিসংঘও নির্যাতনবিরোধী অবস্থান নেয়৷ জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত সনদে স্বাক্ষর করে ১৫০টিরও বেশি দেশ৷
যুদ্ধকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে যে নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা ঘটে তা রোখা এবং সে সবের তদন্তেরও উদ্যোগ নেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়া, সিরিয়ার বাহিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তেও কাজ করেছে সংগঠনটি৷
যুদ্ধাঞ্চলে যথেচ্ছ অস্ত্রের স্রোত বন্ধেও সচেষ্ট অ্যামনেস্টি৷ আন্তর্জাতিক আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশই সে আইন না মেনে বিভিন্ন দেশে প্রচুর অস্ত্র বিক্রি করে৷ সেসব অস্ত্রের একটি অংশ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়৷ রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় সব অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশের যুদ্ধাঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহের পথ রোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অ্যামনেস্টি৷
লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, শিশুর অধিকার, এলজিবিটির অধিকার এবং নারীদের আইনসম্মত গর্ভপাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ অনেক বিষয়েই সক্রিয় অ্যামনেস্টি৷
৬০ বছরে অনেক পুরষ্কারও পেয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে পাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭৮ সালের জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য৷